শরীরের জীর্ণতায় নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি
পড়ে আছি আস্তাঁকুড়ের মত অবহেলায়।
আমার দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না,
হয়তো ঘেন্নায়,মনে মনে কটু কথাও বলে,
মনে পড়ছে অতীতের সুখের দিনগুলোর কথা।
বাবা আমাকে রথের মেলায় নিয়ে গিয়েছিল
কিনে দিয়েছিল আমার প্রিয় মাটির একটি পুতুল।
আমি তখন মাত্র ৯ বছরের ফুটফুটে মেয়েটি
কাঠের নাগোর দোলায় চড়েছিলাম কত মজা করে।
তারপর একদিন স্বদেশী আন্দোলনে
বাবা কোথায় হারিয়ে গেলেন ।
জন্মের পর থেকেই মাকে চোখে দেখিনি,
বাবাকে বলতে শুনেছিলাম-
মায়ের মৃত্যুর জন্য আমার জন্মই নাকি দায়ী!
ধীরে ধীরে যৌবনের দরজায় পা দিতেই
হিংস্র পশুর লালসা আর নখের আঁচড়ে
আমার শরীর হলো ক্ষতবিক্ষত,
জীবন সংশয়।
তারপর এক মনুষ্য ব্যবসায়ীর দয়ায়
আমি বিক্রি হয়ে গেলাম বেশ্যালয়ে।
উন্মত্ত যৌবনের জ্বালা মেটাতে চলল
রাতের পর রাত নারকীয় বীভৎসতা।
প্রতিটি রাত আমার জীবন মৃত্যুসম হল।
জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে রইলাম প্রেমহীন যমালয়ে।
একটা সময় পর সবকিছু-
পরিস্থিতির সঙ্গে স্বাভাবিক হয়ে গেলাম,
ভাবলাম জীবনকে উপভোগ করব-
প্রচুর অর্থ উপার্জন করে
নিজেকে চরম শিখরে পৌঁছে দেব,
কিন্তু সময় আর বাস্তবতার কাছে তো
সবাইকেই নতিস্বীকার করতেই হয়।
তাই আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম কোথায়?
স্বামী সন্তান নিয়ে সংসার আর আমার হলো না!
সকালবেলায় জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখতাম-
ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা বাবা মায়ের হাত ধরে স্কুলে যায়,
অজান্তে কখন চোখে জল চলে আসতো।
আমারও তো এমন একটা ফুটফুটে সন্তান থাকতে পারতো!
আজ আমি ৭০ বছরের বৃদ্ধা,
মৃত্যু আমার চারপাশে প্রতিনিয়ত ঘুরছে,
কিন্তু আসেনা।
আরো কিছু যন্ত্রণা আরও কিছু
ঘটনার সাক্ষী হবার প্রতীক্ষায় বেঁচে আছি।
আমার মত এই সমাজে অন্ধকার জগতে
কত মানুষ এই ভাবেই অবহেলায়
অজান্তে হারিয়ে যায়
তার খবর কে রাখে?


************