সে অনেক দিন আগের কথা
তখন ছিল আমার ছোট্ট বেলা,
বড্ড বেশী মায়ায় ভরা ছিল  সেই দিনগুলি।
ঐ তেঁতুলতলা যেখানে খেলতে যেতাম
মনে আছে তোমার?
ছোট্ট ছোট্ট মাটির পাত্র দিয়ে
কত না ছিল আমাদের খেলামাটির খেলা।
কলাপাতার ছায়ায় ঘেরা তোমার ছিল রান্নাঘর
তুমি ছিলে রাঁধুনি,
আমি ছিলাম কর্তা।
ছোট্ট ছোট্ট দুটো হাত কাদায় মেখে
মিছিমিছি চলত আমাদের খেলামাটি।
ছোটো ছোটো গুল্মলতার গাছে গাছে
উড়ত কত রঙের ফড়িং
পিছনে থেকে চুপিচুপি দৌড়ে যেতাম
হাতে নিয়ে সুতো কিম্বা দড়ি
কিন্তু তা সে পালিয়ে যেত
আমায় দিয়ে ফাঁকি।
কোথায় যেন গভীর অন্ধকারে
সময়ের হাত ধরে হারিয়ে গেছে সেই স্মৃতি,
একরাশ অভিমান বুকে চেপে
একাকী নির্জনে খুঁজেছি কতবার
সেই তেঁতুলতলায়,
যেখানে কলাপাতার ছোট্ট চামর খানি
ফাঁকা নির্জনে দুলছে আপন দোলায়।
দেখে মনে হয়েছে তুমি দাঁড়িয়ে আছ
আমারই মত একা
দৌড়ে ছুটে যাই দুহাত সম্মুখে বাড়িয়ে
দেখি সেথায় খোলা আকাশের নিচে
শুকনো পাতা হাওয়ায় দোলে।
আপন মনে হাসি
কেমন পাগলপানা লাগে,
কান্নায় ভেজা চোখে গলাটা কেমন শুকিয়ে ওঠে।
মেঘলা আকাশ হাওয়ায় দোলে,
সর্ষেফুলের ক্ষেতে এলো চুলে
দাঁড়িয়েছিলে তুমি!
চোখে মুখে মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে
কাছে গেলাম যখন
মিলিয়ে গেলে তুমি হলুদ রঙের সাথে!
মনে পড়ে স্কুল পালিয়ে,
পেছনের ঐ বেড়াটাকে ডিঙোতে গিয়ে,
পা বেঁধে ছিটকে পড়ি দূরে,
তুমি তখন অজানা আতঙ্কে,
তাকিয়ে আছে আমার মুখের পানে।
কাছেই ছিল হলকলমীর ঝোপ
গোটাকতক ছিঁড়ে দুহাতে ঘষতে থাক এমনি করে
রক্তঝরা পায়ে ঐ নিংড়ানো রস দিয়ে
চেপে ধরে বসে ছিলে পাশে।
আজও সেই কাটা দাগের চিহ্ন রয়েছে পায়ে!
সেদিন বিকেলের পড়ন্ত বেলায়
বসে আছি নদীর তটে
চেয়ে দেখি পূর্ব দিগন্তরেখায়
সিঁদুর রঙা লাল টিপ
কেমন ডুবছে জলের মধ্যে
আর ঢেউয়ের তালে তালে অল্প আলোয়
ভেসে উঠছে তোমার প্রতিচ্ছবি
দুষ্টুমিতে ভরা তোমার সেই হাসিমাখা মুখ।


----------------*****----------------
29/10/2019
বহড়ু, দক্ষিণ 24 পরগনা, জয়নগরে