আমার দূর্গা


শরৎ মেঘের ভেলায় যেন লালচে আবীর পরে
শিউলি ফুলের আবেশ মেখে মা আসছেন ঘরে।
সবাই ব্যস্ত পূজামন্ডপে, কিংবা সপিং মলে,
সেই মেয়েটার নাম জানি না, রাস্তার ধারে থাকে।
ভীষন ব্যস্ত, রুটির জোগাড় করতেই হবে তাকে,
ঘর নেই তার, তবু আছে মা আর দুটো ভাই
জন্মের আগেই বাপটা ভেগেছে, তার আর খোঁজ নাই,
মেয়েটা বোঝেনা আগমনী গান, কী শরৎ কী বর্ষা!
লাইনে দাঁড়ালে খাবার মিলবে, এইটুকু শুধু ভরসা,
মেয়েটা জানেনা মর্ডান আর্ট, থিম পূজা কাকে বলে,
শুধু সে জানে খালি পেট ভরে রাস্তার কোনো কলে।
সেই মেয়েটা জানেনা পার্লার, বিউটিশিয়ান মানে,
রঙ মেখে শুধু ব্রীজের ধারে দাঁড়াতে সে খুব জানে।
সেই মেয়েটার শরীর দেঁড়ে চিল, শকুন আর কাকে,
সেই মেয়েটা নষ্ট মেয়ে তার জন্ম শুধুই পাঁকে।
সেই মেয়েটা খারাপ পাড়ার, কেউ মাড়ায় না ওর ছায়া,
সেই মেয়েটাই আমার দূর্গা, আমার মহামায়া।
অন্নপূর্না নয়, আমার দূর্গার ভাত জোটেনা রোজ,
বাঁচে কী মরে এবেলা ওবেলা কেউ নেয়নাকো খোঁজ।
আমার দূর্গার ত্রিশূল নেই, সে কাস্তে দিয়ে ধান কাটে,
আমার দূর্গা বৃষ্টিতে ভেজে, পথে ঘাটে মাঠে মাঠে,
আমার দূর্গার বাহন নেই, সে খালি পায়ে পথ হাটে।
আমার দূর্গার আসন নেই, তার ফুটপাথে দিন কাটে,
আমার দূর্গা ধর্ষিতা হয় খোলা রাস্তার ধারে,
ক্ষততে তার অসুরেরা এসে সিগারেট দিয়ে মারে।



আমার যুদ্ধে অসুরই জেতে, দূর্গারা শুধু হারে,
আমার দূর্গার লাশ পড়ে থাকে নোংরা ড্রেনের ধারে।
আমার দূর্গার বন্দী জীবন, জানলার কোনো গ্রীলে,
আমার দূর্গার ভাসান হয় মোমবাতি মিছিলে।
আমার দূর্গা লড়াই করে হাসপাতালের বেডে,
আমার দূর্গার মুখ দেখা যায় খবরের কোনো পেজে।
আমার দূর্গার গায়ে শত ঘা, তবু জেদ এমন,
আমার দূর্গা মরতে শেখেনি, সে বাঁচতে চায় প্রানপন।
আমার দূর্গা যন্ত্রনায় চিৎকার করে ওঠে,
রক্ত গায়ে তবুও তার প্রতিবাদে মুখ ফোটে।
আমার দূর্গার পাশে কেউ নেই, সে একলাই পথ চলে,
আমার দূর্গার মাংসের দেহ কেরোসিন দিয়ে জ্বলে।
আমার দূর্গার কান্নার জলে মহালয়া হয় রোজ,
আমার দূর্গা ফুটপাথে থাকে, কেউ রাখেনাকো খোঁজ।
আমার দূর্গা প্যান্ডেলে নেই দেখো একবার চেয়ে,
আমার দূর্গা আমি, তুমি নয়তো সাধারন কোনো মেয়ে।
                                
                                   ......বিতস্তা মুখোপাধ্যায়