নিতান্ত একজন কবিতাপ্রেমী হিসাবে হঠাৎই খুঁজে পেয়েছিলাম এই আসরটি। যারপরনাই আনন্দও হয়েছিল। অনেকের মতই হাজার কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও একটু সময় পেলেই ঢুকে পড়ি আসরে। দু'চারটে কবিতা পড়ি। কখনো সখনো মাঝে মাঝে এক আধটা রচনাও প্রকাশ করে ফেলি। সব মিলে আমার রুটিন বাঁধা জীবনে এক অনাবিল ভালোলাগার নতুন উৎস হয়ে উঠেছে আসরটি।


এই আসরও তো একটা প্রতিষ্ঠানের মতই। অনেক অগুণতি সৃজনশীল ও মননশীল মানুষের সমাগমে ভরপুর আসরটি তাই সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বহুবিধ নিয়মনীতির বেড়াজালের প্রয়োজন আছে বৈ কি! যে কোন পরিবর্তন  মানেই মানুষের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ হিসাবে বাধা-বিতর্ক (Resistance to Change)-ও আসবে। এখানেও আসে। এসেছে। আরো আসবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ থেকে অভিজ্ঞতর হবে, উন্নত থেকে উন্নততর হবে, সেটাই স্বাভাবিক গতি।


একটি সৃজনশীল মানুষের ভিড়ে কিছু ব্যক্তির গায়ে কোন নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে 'নিয়মিত' , 'সেরা' ইত্যাদি ইত্যাদি তকমা সেঁটে দেওয়াটা আমার কাছে শুধু যে অসুন্দর মনে হয় তা নয়, পীড়াদায়কও। তবু বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মত বিনিময় অনুসরণ করে মনে হয়েছে এটা বজায় থাকবে। অনেকে পছন্দ না করলেও, যেহেতু এখনো অনেকে পছন্দ করেন এটি তাই। আর ঠিক সে কারনেই নিজস্ব খারাপ লাগাটুকু মনের কোনে রেখেই মেতে থাকতাম কবিতা নিয়ে স্বল্প সময়ের মাতামাতিতে।


তারপর এল 'সাম্প্রতিক কর্মকান্ড' (activity log) প্রকাশ করার রীতি। তথাকথিত 'সেরা' বা 'নিয়মিত' স্টিকার চালু রাখতে হ'লে তার নির্ধারণে স্বচ্ছতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে এর প্রয়োজনীয়তা হয়ত আছে (তর্কসাপেক্ষ)।  কিন্তু আজ হঠাৎই যখন চোখে পড়ল প্রাপ্ত 'পয়েন্টসমূহ' প্রকাশ করার রীতি, তখন সত্যি কিছু বলার তাগিদ অনুভব করলাম। আসরের ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ডের তালিকা প্রকাশ ঠিক আছে, কিন্তু সবাইকে মার্কশিট দেখিয়ে দেওয়া তো বেশ অনৈতিকই মনে হ'ল। যারা যারা তালিকাবদ্ধ হ'তে ভীষণ ভাবে আগ্রহী ও উৎসাহিত, তারা তো তালিকার হেরে ফেরে সরাসরি এডমিনকে ইমেল করে নিজেদের মার্কশিট দেখে নিতেই পারে। কিন্তু সবারটা সবাই কেন দেখবে? বিশেষ করে আমার মত যারা সৃজনশীল আসরে প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়কে অসুন্দর চোখে দেখবেন তাদের নিশ্চয় এটা উগ্র পদক্ষেপ মনে হবে বলে আমার বিশ্বাস।


এমনিতে আমি পাতার ডানদিকের তালিকাগুলোতে চোখ দিই না। উৎসাহ তো নেইই। আগ্রহও নেই। আজ আমার নিজের পাতায় গিয়ে হঠাৎই আমার নিজেরই 'সাম্প্রতিক কর্মকান্ড' দেখতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম আসরে আমার মার্কশিট :


নিয়মিত কবি পয়েন্ট ১২৭
নিয়মিত আড্ডাবাজ পয়েন্ট ২৩
সেরা মন্তব্যকারী পয়েন্ট -১৪


আমি এই আসরে আর ঢুঁ না মারলেও আসর চলতে থাকবে। আমার কবিতাপ্রেমটুকুর ছোঁয়া না পেলেও অপ্রতিরোধ্য থাকবে আসরের অগ্রগতির রথ। মার্কশিটের স্বপক্ষেও অনেকেই অনেক যুক্তি দেবেন নিশ্চয়। কিন্তু যে প্রশ্নটার উত্তর কিছুতেই পাওয়া যাবেনা হয়ত তা হ'ল এরকম কম মার্কস পাওয়া কমা সদস্যটি বেশি মার্কস পাওয়াদের ভিড়ে থাকার কতখানি যোগ্য? যে সদস্য নিখাদ কবিতাপ্রেম আর কবিতা পড়ার আনন্দ নিয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে যেতে চায় আসরে, তার অনিপুণ কার্যকলাপের এরকম গাণিতিক চেহারা কতখানি শোভনসুন্দর? মার্কশিটের দৃশ্যনান্দনিকতার স্বার্থে বেশি মার্কস পাওয়া কি নিতান্তই বাধ্যতামুলক? স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি গুলো আরেকটু নিয়ন্ত্রণ, আরেকটু মানবিক করাটা কি ভেবে দেখার মত নয়? একটু ভেবে দেখার অনুরোধ রইল।