আমি আর নভেম্বরের রাত এখন মুখোমুখি
আমরা কথা বলছি- অনেক... অনেক কথা ...
আমরা কেন এতো একা?  
আমাদের চোখের কার্নিসে
গুটিসুটি হয়ে বসে আছে শতাব্দীর গাঢ় নিঃসঙ্গতা।
আমরা উভয়েই ভালোবেসেছি আলোর জোনাকি
পরস্পরের হাতে হাত রেখে
ভাগাভাগি করে নিয়েছি হৃদয়ের যত গোপন দুঃখ ব্যথা।
আমাদের আঙুল থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে পরছে
হলুদ হেমন্ত,পাকা ধানক্ষেত, কুয়াশায় মোড়া ভোর  
পার্বনের আমেজ ঢাকঢোল, মুখরিত নবান্ন বোল
হয়তো ফুটে উঠবে আকাঙ্ক্ষার দিন রৌদ্র ঝলমল।
পাড়ার লোকেরা যখন যাত্রাপালা দেখে ফিরছে আর
ইতিহাস হয়ে উঠছে জীবন্ত সচল
আমরা তখন আসন্ন শীতের তীব্রতা নিয়ে কথা বলছি
প্রতি শীতেই ভোর হতে না হতেই এখানে রৌদ্রের লোভে  
কোথা থেকে যে ঝাঁকে ঝাঁকে এতো শালিক উড়ে আসে?
আচ্ছা, আমাদের কি জানা উচিত নয়  
সুস্থভাবে একটা আস্ত শীতকাল পার করতে ঠিক কি পরিমাণ  
রোদ ও উষ্ণতার প্রয়োজন? কিংবা এবার  
রবিশস্যের ফলন কেমন হবে
বায়ু প্রবাহের গতিবিধি কি ইঙ্গিত করছে?
ব্যাঙেরা কেন শীতনিদ্রায় যায় তা নিয়ে
আমাদের কোন মাথাব্যাথা নেই কিন্তু নদীর শুষ্কতা নিয়ে
আমাদের অনেককিছু ভাববার ও বলবার আছে।  
আমরা কিন্তু কেউই রাজনীতির কথা বলছি না
বলছি না কেন রাষ্ট্র ঘিরে ফেলে কাঁটাতার
কিংবা জঙ্ঘায় ক্ষত নিয়ে কেন হরিণ দৌড়ায়
সবুজ হয়ে যায় টকটকে লাল!
বরং রুপকথার সেই সব ডানাঅলা সাদা পরীদের কথা বলছি
যাদের দেখে ঈশ্বর প্রেরিত দেবদূতদের মাথা ঘুরে গিয়েছিল
আর তাদের হৃদপিণ্ড লাল তরমুজ চুম্বনের উত্তাপ স্বত্বেও    
সাদা বরফের মতো কেমন জমে গিয়েছিল।  
আমি আর নভেম্বরের রাত এখন মুখোমুখি
আমরা কথা বলছি- অনেক... অনেক কথা ...
হ্যাঁ, আমরা এখন সেই সব মা’পাখিদের কথা বলছি  
যারা এখনো ছানাদের আগলে রাখছে পরম মমতায়  
আর আহারের সন্ধানে ডানায় আগুন নিয়ে
ছুটে বেড়াচ্ছে বন-বাদাড়ে
ফিসফিস করে আমরা বলছি ঠান্ডা রক্ত সেই সব মাছেদের কথা
যারা জন্মাবধি সাঁতার কাটছে নীল জলে
আর বলছি সেই সব পুষ্পবৃক্ষ ও স্বাধীনতার কথা
যা এখন নষ্ট কীটের দখলে...
আসন্ন শীতের বাতাসে এখন আমাদের জিভ শুকিয়ে আসছে
টানটান ও খসখসে হয়ে যাচ্ছে আমাদের ত্বক ও চামড়া  
কিন্তু আমাদের আরো অনেক কথা বলা দরকার
অনেক... অনেক কথা ... ...  ।।