প্রিয়ে যেও নাকো দূরে, গৃহে আসো ফিরে
কেন হব ভবঘুরে, তোমারে না পেয়ে
এই বাহুডোরে, প্রিয়ে গৃহে আসো ফিরে
কত সাধে সেজে ছিলেম, ভালোবেসে ঘরে এলেম
বাসর হল ধূসর মলিন, স্বপ্ন হল স্রোতে বিলীন
কাটে না সময়, এই অবসারে।


ব্যাকুল হই তোমায় খুঁজি, খোলা চুলে চোখ বুজি
বোবা ভাষা রেখে গোপন, নোনা জল চোখে আপন
ফুঁপিয়ে ওঠে কাঁপন, সান্ত্বনা দেবার নেই কেউ
পোষা ময়না খাঁচা ছেড়ে, ভাবনায় পড়ে অনাহারে
ছাড়লেম তারে চাঁদ প্রহরে, উড়াল দিল সেও।


জীবন তরী দোলে দোলে, পাক খাই ঘূর্ণিজলে
চারিদিক ধূয়াতে কুয়াশা, আমারে দেখতে
আসবে কি প্রিয়ে সহসা?
তুমিহীন কোন দিন পাইনিকো চাঁদের দেখা
কারাগারে বন্দী জীবন, ঘরের কোনে একা।


যদি না করবে সংসার, তবে বাঁধালে কেন ঝড়
প্রশ্ন করি আপনারে? চিতায় পোড়ে আপন খেয়াল
চলে গেলে, তুলে দেয়াল, মৃত্যু দিয়ে প্রবাস পরপারে
খুঁজি তোমায় রং মহলে, খুঁজি তোমায় রাত পোহালে
উদাস ভিড়ে উরু উরু মন, আর জলে ডুবে থাকি কতক্ষণ?


বুক চেপে করি চিৎকার, শুনতে কি পাও গহীনের ধিক্কার?
বাঁধন কেটে বাজে বিচ্ছেদ ডঙ্কা
তোমার বিরহে, মরব বিরান গৃহে, আজি করি এই শঙ্কা
প্রবাসী তুমিই যখন বুঝলে না তখন কে বুঝবে আর
তুমি থাক দূর প্রবাসে, তখন মুখটি থাকে ভার।


আত্না শুকায় খরা গায়, আলতা শুকায় কচি পায়ে
বকুল ফুলের মালা খুলে, খাদি শাড়ি রাখি তুলে
কতদিন নেইকো পাশে, মন কি আর সুখে হাসে?
সাজলে কে দেখবে আর
শোন বলি ওগো প্রিয়ে তাতেই মন ভার।


গ্রীষ্ম গেল সেই যে চলে, শূন্য দিঘী পোড়ে নীলে
বর্ষায় ভরেনি জলাধার
একটুখানি ভিজতে গিয়ে চুরি হল হার
শরৎ না দিল সাড়া, পলিয়ে গেল হায়রে কপাল পোড়া
হেমন্তে প্রান্তরে প্রান্তরে খুঁজি, আর গেয়ে গান বৈরাগী সাজি।


আকুলতায় বয়ে গেল শীত
পাগলিনী, উন্মাদিনী চোখে নাহি নীদ
ওহে প্রিয়ে আর জ্বালিও না আগুন, আসবে না ফাগুন
আমি তোমার নব বধূ, মরুপানে মরীচিকায়
উড়বে ধূয়া শিখায় শিখায়, দূর পানে চাইব শুধু।


এসো হে দ্বারে, করা নেড়ে প্রশান্তির হস্ত বেড়ে
যদি না শোন আমার আরতি
তবে কেন করেছিলে তোমার সারথি?
এই জীবনের অর্থ নেই, স্বার্থের ব্যর্থ নেই
চাওয়ার সাথে পাওয়া নেই, সাধের কোন বাঁধন নেই
শুধু পঞ্জিকায় ওল্টে দিন রাতি
প্রিয়ে আমি কি নিরামিষ জাতি?