"কবিতা দিয়ে পেট ভরেনা" বলে যে সম্পর্কের সমাপ্তি হয়েছিলো, রাফাতের জীবনে সেই হারানো প্রেমই হটাৎ একদিন, এক তোড়া রজনীগন্ধা সমেত, তারই বাড়ির দরজায় এসে উপস্থিত। আসলে অনেক বছর পড়ে। মেয়েটির নাম সুদীপা। রাফাতের দোদুল্যমান জীবন যেন আরেকবার প্রচন্ড ঝাঁকুনি দিয়ে কেঁপে উঠলো। দুজনে মুখোমুখি। কেউ কিছু বলছেনা। সুদীপার ঠোঁটের কোনে স্মিত হাসি।
রাফাত সেখান থেকে সরে গিয়ে, টেপ রেকর্ডারটা বন্ধ করে জানালার দিকে মুখ করে দাঁড়ালো। তারপর-


বর্ণাঢ্য দিনের শেষে রঙ হারিয়ে-
কোন রকমে বেঁচে থাকা সামান্য একটা মানুষ আমি,
যার নেওয়ার ও দেওয়ার ক্ষমতা
দুই'ই আজ বড্ড বেশি রকমের নিয়ন্ত্রিত।
তোমার চেনা খামখেয়ালি, পাগলাটে এই আমার-
আজ বড় বেশি রকম নিয়ন্ত্রিত, সংযত জীবনে বাস।
কেন এসেছো? কি চাও? কি আছে বেঁচে?
আজ আর কিছুই অবশিষ্ট নেই,
রঙিন ঘুড়ি, নীল খাম- সবই বিস্মৃতির আড়ালে ঘুমিয়ে।
কেন্দ্রীভূত ভালোবাসা পরিধি ছাড়িয়ে-
মহাকালের পথ পাড়ি দিয়েছে বহু আগেই।
নতুন করে আর ফেরাতে চেওনা,
বারবার ঘুরে দাঁড়াবার সুযোগ হয়তো পাবোনা।
ফিরে যাও, আমি ভালো আছি, এই বেশ ভালো আছি।
আমার কবিতা, কবিতার প্রেম আর ডাল-ভাতের জীবনে
কাগজ আর কালির গন্ধে, বেশ আছি।


তারপর অনেকটা সময় জানালার গ্রীলে মাথা ঠেকিয়ে, আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে সুদীপার কথা ভুলে গেলো রাফাত। কিছু সময় পরে চশমার কাঁচ শার্টের কোনায় মুছতে গিয়ে সুদীপার কথা মনে পড়তেই পিছন ফিরে দেখে সুদীপা নেই। চলে গেছে। রজনীগন্ধার তোড়াটা রাখা আছে টেবিলের উপরে। সেদিকে তাকিয়ে কয়েক ফোটা জল চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো। কবির জীবন ভালো-মন্দে যেমনই হোক, গান থাকবেনা তা হয়না। রাফাত তাই টেপ রেকর্ডার টা চালিয়ে দিয়ে ফের কাগজ আর কালির রাজ্যে ডুব দিলো।


♪♪♪
"আমার প্রাণের পরে চলে গেলো কে
বসন্তের বাতাস টুকুর মতো,
সে যে ছুঁয়ে গেলো নুয়ে গেলো রে
ফুল ফুটিয়ে গেলো শতশত।
সে চলে গেলো বলে গেলো না
সে কোথাও গেলো ফিরে এলোনা,
সে যেতে যেতে চেয়ে গেলো
কি যেন গেয়ে গেলো,
তাই আপন মনে বসে আছি কুসুম বনেতে...


©সুব্রত ব্রহ্ম
সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৫ইং:
ময়মনসিংহ।


"আমার প্রাণের পরে চলে গেলো কে" এর বাণী- গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর"