জন্ম নিলাম আমি মানুষ হয়ে
মাথা থেকে পা পর্যন্ত -আপাদমস্তক মানুষ আমি
হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদি, খৃস্টান বা মুসলিম
বিশ্বাস আর কর্মের বিভাজনে ভিন্ন-বিভিন্ন নামে বিচরণ এ পৃথিবীতে
সত্য আমি হোমোসেপিয়েন্সের প্রজাতি
মানুষ আমি পুরোদস্তুর জ্ঞান বিবেকের রাজ্যে
চেনার জন্য অন্য মানুষ দ্বারা ভিন্ন নাম নিই
অথবা পরিচিতি দিই এ দেহবলয়ের
একজন মুচি, কামার, কুমোর, ব্রাহ্মণ,
ভান্তে, ফাদার, মাওলানা, ডাক্তার,
রাজনীতিবিদ, প্রকৌশলী, কৌঁসুলি,
ব্যবসায়ী, চাষী, রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি,
ঠিকাদার, সাধক, তাপস, যোগী, সন্ন্যাসী,
কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা অথবা কর্মচারী
আরো কতো কি আমি।


সেই হোমোসেপিয়েন্সের, সেই মানুষ,
আমার দ্বারা সিদ্ধ বা শুদ্ধ নিয়ম বিধিতে চলি আমি
আমাকে আমিই পরিচালনের এ সব নিয়ম বিধি আমিই বানাই-
তাপস সাধক হয়ে, যোগী সন্ন্যাসী বেশে
বৈদিক জ্ঞানে ধ্যানী রূপে
অথবা ডাক্তার, প্রকৌশলী, কৌঁসুলির
অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞানের সংকলনের
ধারা উপধারাতে আমি আবিষ্ট রূপে
বন্ধনের শৃঙ্খল শেকল পড়ি।


সেই আমিই বিশ্বাসের সর্বোচ্চ ধ্যান মন্দিরে বাস করি
আর বিশ্বাসের অনুকরণে নিজেকে গাঢ় করি -
দাঙ্গাময় পৃথিবীর কোলাহল থেকে বাঁচার তরে,
পারলৌকিক জগতের বিশ্বাসী মনোরম প্রশান্তময় উদ্যানে বাসের তরে।
সেই আমিই শিখি উৎকৃষ্ট বিশ্বাসী বলে-
পবিত্র বেদ, পবিত্র ত্রিপিটক, পবিত্র তাওরাত
পবিত্র যাবুর, পবিত্র ইঞ্জিল, পবিত্র কুরআন
আরো জানা অজানা হরেক বিশ্বাসী পবিত্র বাণীসমূহ ।


আমি মানুষ
একজন মাওলানা হয়ে শিখতে থাকি মানুষের উৎকৃষ্ট পন্থা
একজন ব্রাহ্মণ হয়ে শিখতে থাকি জ্ঞানের গভীরতা
একজন ভান্তে হয়ে শিখতে থাকি মোহ ত্যাগের সর্বোত্তম নিয়মবিধি
একজন ফাদার হয়ে শিখতে থাকি মানবতার সর্বোচ্চ ব্যবহার
আমি শিখতে থাকি সবই একসাথে মানুষ বলে
শিখতে থাকি ধ্যানমন্দিরের মহাজাতকে মহাত্মানির্মাণ উপায়
শুভ্র আলখেল্লায় অথবা খয়েরি পরিচ্ছেদে।
আমি মঞ্চে উপস্থিত হই যা আমি শিখেছি তা বলতে
কৌঁসুলি হয়ে কথামালার প্রকৌশলে আমি নির্মাণ করি-
মহাকাব্যিক ধারা উপধারাময় গ্রন্থমালার হিমালয়।
চণ্ডাল, চামার, মুচি, কুমোর, কামার
সব নিয়মে চলা হয় আমার,
আপন বৃত্তে গড়ে তুলি রাজসিক সংসার
জীবনের বেগতিক হোঁচটে বলি -
হুজুর এ দীনহীনে সুযোগ দিন আরেকবার।
রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, চাষী, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার
দালানে দৌলত চুরিতে নিজ হিস্যের দরবার,
গড়ে তুলি পুকুর চুরিতে পুঁজিবাদের অভেদ্য ব্যূহ কারবার।
মেথর থেকে রাষ্ট্রনায়ক সবই আমি
আমি মানুষ, হোমোসেপিয়েন্সের মহাজাতক,
বুদ্ধিমান প্রাণী, স্রষ্টার বানানো শ্রেষ্ঠ আকৃতি,
ধ্যানী থেকে জ্ঞানের সর্বোচ্চ অলিম্পাসের চূড়ায় আমি
মহাশূন্যের মহাপ্রাণ,
মহাজাগতিক কৃষ্ণগহ্বরের মহাউৎকণ্ঠার চিন্তাশক্তি।
শুধু বলতে থাকি- অমুকের জন্য আজ আমার এ অবস্থা,
ঢুকে যেতে হচ্ছে অতলস্পর্শে, বিস্মৃতির গহ্বরে !


আমি ভুলে যাই যখন আমি ত্রিশ দিনের জন্য ত্রিশ পরিচ্ছেদ কিনি
ভুলে যাই আমি যখন অঢেল খাবারের অল্প খেয়ে
অপচয়ের উচ্ছিষ্ট রাখি বেশি !
ভুলে যাই যখন দেখি আমার মতো কোন মানুষ কুড়িয়ে খায় ডাস্টবিন থেকে !


ভুলে যাই আমি যখন ধর্মবাণীতে মত্ত;
এক পুরোহিত বাস্তবের মঞ্চে আর শুধু সে বাণীর বাণ ছুড়ি
করিনা নিজে কিছুই !


ভুলে যাই আমি আমারই রাজনৈতিক মঞ্চে মানবতাবাদী বক্তৃতা
যখন জনতার মাঠে আসি !


ভুলে যাই আমার শিক্ষকতার মন্ত্রবাণীগুলো
যখন যৌবন উন্মুখ বালিকাকে একক ফাঁদে নিয়ে আসি !


ভুলে যাই আমার কবিতার অথবা কথাসাহিত্যের শব্দমালাকে
যা মানবতায় সাঁতরেছিল বা সাঁতরাই হাজার হাজার বর্গমাইল
আর বাস্তবতার কর্মময়ী প্রাঙ্গণে থাকি অকর্মঠ !


ভুলে যাই চিকিৎসকের সেবা ধর্মী প্রতিজ্ঞাবাণী
যখন ভোগবাদের নিমজ্জিত আত্মায় আমিও হই একত্রিত !


ভুলে যাই প্রকৌশলীর গম্ভীর খাঁটি সূত্র
যে সূত্রে শুধু ঐকতায় গড়ার আয়োজন চলে
আর বাস্তবিকতা গড়া বাজারেই ভঙ্গুরতার সূত্রে থাকি উল্লাসী
যেখানে ভোগের মোহ গড়তে দেয় লুন্ঠিত হওয়ার সুশীল ক্ষ্যাপা মন্ত্র !


ভুলে যাই কৌঁসুলি হওয়ার দৃপ্ত শপথের শব্দ
সেবকের স্পষ্ট কলমের বাণীতে উপনীত হয়েছিলাম
আর বাস্তবিক বিচারকের কাঠগড়ায়
মহাবিষ্টের যতনে বেবাক তামাশা বাক্যালাপ করি !


ধিক আমায় ! ধিক আমায় !
এখনো মানুষ হতে পারিনি !
হয়েছি কবি, হয়েছি কথাসাহিত্যিক,
হয়েছি চিকিৎসক, প্রকৌশলী,
হয়েছি রাজনীতিবিদ, হয়েছি শিক্ষক,
হয়েছি বিচারক,
হয়েছি পুরোহিত, হয়েছি তান্ত্রিক,
হয়েছি সাধক বা তাপস,
হয়েছি সন্ন্যাসী বা যোগী,
কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা অথবা কর্মচারী
সবই হয়েছি আমি বিশ্বাস আর কর্ম ভেদে
ধিক আমায় ! ধিক আমায় !
এখনো মানুষ হতে পারিনি বলে !
যদিও জন্ম নিয়েছি হোমোসেপিয়েন্সের গোত্রে
দেখতে অবিকল মনুষ্য গঠন
তবে এখনো মানুষ হতে পারিনি !
ধিক; ধিক আমায়ই !


- এপ্রিল ২৮, ২০১৮ চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ