একজন বাবা...
*******************

জব্বার আলী একজন বাবা…
তবুও সেদিন ঈদের হাটে নিতে পারেনি
তার ছোট্ট আট বছরের মেয়েটাকে।
যে চোখে স্বপ্ন বুনেছিল একখানা রঙিন জামার,
এক টুকরো রোদের মতো হাসির।

সে দিন মেয়েটি প্রথমবার বুঝেছিল-
চাওয়া আর পাওয়া এক কথা নয়।
নিঃশব্দ কাঁদা শেখা যায়,
যখন গলা আটকে আসে, চোখ ভিজে ওঠে,
তবু কেউ কিচ্ছু মানতে চায় না।

জব্বার আলী চেয়েছিল-
তার ছোট রাজকন্যার মুখে ফুটুক ঈদের দীপ্তি।
চুলে পড়ুক লাল রিবন,
কানে দুলে পড়ুক ছোট্ট একজোড়া দুল,
আর ঠোঁটের কোণে থাকুক ছোট দাঁতের চেনা হাসি।

কিন্তু...ঘরে ছিল এক অদৃশ্য দেয়াল-
স্নেহহীন, আদেশে ভরা।
"তাকে নিয়ে যাওয়া চলবে না"
হুকুম, প্রশ্নহীন।

জব্বার আলী চাইলেই পারত কথার যুদ্ধে নামতে,
রুখে দাঁড়াতে জুলুমের মুখোমুখি হয়ে।
কিন্তু… সে তো একজন বাবা!
সে জানত-
যুদ্ধ জিতলেও হারবে তার মেয়েটা।
কান দুটো শুনবে হিংস্র চিৎকার,
ভীতু মনটা কুঁকড়ে যাবে ভয়ের আঁধারে,
রঙিন জামার রং মুছে যাবে কান্নার জলধারায়।

তাই সেদিন মেয়েটি শুধু ফুঁপিয়ে কেঁদেছিল,
আর জব্বার আলী নিঃশব্দে ভেঙে পড়েছিল
চোখ মুছে মেয়েটি বলেছিল-
“বাবা, আমি আর মার্কেটে যেতে চাই না…”
জব্বার আলী তাকিয়েছিল মেয়েটির দিকে
নিঃশব্দে, ভেঙে চুরমার হয়ে।

তার কণ্ঠে জমে থাকা কান্না
অন্তরালে বলে উঠেছিল-
“মা, তুই কিছুই চাসনি…
তোর ওই ছোট্ট বায়নাটাই ছিল পৃথিবীর সেরা দাবি।
আমি শুধু হেরে যাই
অপারগতার নামে চলা অন্যায়ের কাছে।
তোর শান্তি আমার শত চাওয়ার বেশি প্রিয়।”

জব্বার আলী একজন বাবা,
তাই সেদিন মেয়ের মনটা ভাঙতে দেয়নি।
সে চেয়েছিল-
নতুন জামা না হোক,
শান্ত ঘুমটুকু থাকুক মেয়ের চোখে।
কারণ, বাবারা যুদ্ধ নয়, ভালোবাসে
তারা ত্যাগে গড়ে তোলে আশ্রয়,
জয়ের থেকে বড় হয় তাদের কাছে ভালোবাসা।
তারা কখনো হারে না,
শুধু অপেক্ষা করে একটি সঠিক সময়ের।
।।।।।।।।।।