কবিতা হলো মানব মনের এক গভীর অভিব্যক্তি। শব্দের সংক্ষেপে, ছন্দ ও রূপকে আবদ্ধ একটি শিল্প যেখানে আবেগ, উপলব্ধি এবং দার্শনিকতা মিশে যায়। শুধু সাহিত্যিক রস নয়, কবিতা আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি ও মননজগতের একটি দর্পণ।

মানব জীবনে কবিতা গুরুতর কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন না করলেও বিশেষ কিছু বিষয়ে এর গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন:
১. আবেগ প্রকাশের সর্বোচ্চ মাধ্যম:
মানুষের মনের গোপন অনুভূতি, ব্যথা, ভালোবাসা, প্রতিবাদ এসব প্রকাশে কবিতার তুলনা নেই। কাজী নজরুল ইসলামের “বিদ্রোহী” কবিতায় ব্যক্তি-মানসের রুদ্র রূপ যেমন আছে, তেমনি নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও। এটি শুধু ব্যক্তিগত অনুভব নয়, সমাজজাগরণও।

২. ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশে কবিতা:
কবিতা একটি জাতির ভাষার সৌন্দর্য তুলে ধরে এবং সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে ধারণ করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা বাংলা ভাষাকে শুধু সমৃদ্ধ করেনি, বরং বাংলা সংস্কৃতিকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরেছে।

৩. মানবিক ও নৈতিক বোধ গড়ে তোলে:
কবিতা মানুষের মধ্যে সহানুভূতি, প্রেম, করুণা ও মানবতার বোধ জাগায়। জসীমউদ্দীনের “আসমানী” কবিতায় দরিদ্র শিশুর জীবনচিত্র পাঠকের হৃদয়ে সহানুভূতির সঞ্চার করে, যা সমাজ সচেতনতা গড়তে সাহায্য করে।

৪. চেতনা ও প্রতিবাদের ভাষা:
কবিতা অনেক সময় একটি জাতির মুক্তির সংগ্রামে ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের কবিতাগুলো, যেমন শামসুর রাহমানের “তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা”- জাতির চেতনা জাগানোর হাতিয়ার ছিল।

৫. আত্মউন্নয়ন ও মানসিক প্রশান্তি দেয়:
কবিতা পাঠ মানসিক প্রশান্তি দেয়, গভীর চিন্তার জন্ম দেয়, আত্মবিশ্লেষণের পথ তৈরি করে। ধর্মীয়, দার্শনিক বা প্রাকৃতিক কবিতা যেমন জীবনানন্দ দাশের কবিতাগুলো পাঠককে আত্মমগ্নতায় টেনে নেয়।

৬. ভালোবাসা ও সম্পর্কের জটিলতা প্রকাশ:
ভালোবাসা, বিচ্ছেদ, সম্পর্ক- এ ধরনের অনুভূতির প্রকাশে কবিতা অত্যন্ত কার্যকর। এটি সম্পর্কের জটিলতা, কষ্ট, আনন্দ এবং আবেগকে সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে পারে। Pablo Neruda-এর প্রেমের কবিতাগুলো শুধুমাত্র ভালোবাসা নয়, সেই ভালোবাসার জটিলতা, ব্যথা ও সৌন্দর্যও প্রকাশ করে।

কবিতা কেবল সাহিত্য নয়, এটি মানবজীবনের প্রয়োজন। এটি আমাদের চিন্তা জাগায়, অনুভূতি শাণিত করে, ভাষা গড়ায়, প্রতিবাদে শক্তি দেয় এবং আত্মার প্রশান্তি আনে। তাই কবিতা প্রয়োজন ব্যক্তি, সমাজ, দেশ এবং সভ্যতার জন্য।

ধন্যবাদ।