কোন কিছু লিখলেই কবিতা হয়ে যায় না। কবিতা হালকা মেজাজের হলে চলবে না। সেটা যে ধারার লেখা কবিতাই হোক না কেন। কবিতায় উচ্চমার্গীয় আবেদন থাকতে হবে। দর্শন থাকতে হবে। কাব্যিক নানান অংলকারে সমৃদ্ধ হতে হবে কবিতা।  নির্ভুল বানানের হতে হবে কবিতা। বানান ত্রুটি সৌন্দর্যহানী ঘটায় কবিতার। যতিচিহ্নের ব্যবহারও থাকতে হবে ঠিকঠাক। নতুন কিছু থাকতে হবে কবিতায় যা আগে  ঠিক এমন করে বলেনি কেউ বা লেখেনি কেউ। বাক্যগঠনে মৌলিক কোন ভুল থাকা চলবে না কবিতায়। সাধু চলিতের মিশ্রণ থাকা চলবে না কবিতায়। পুরনো অপ্রচলিত শব্দের ব্যবহার মূলত যা আমরা মুখে বলি না তা কবিতায় ব্যবহার না করাই ভালো । কঠিন,দূর্বোধ্য, অপ্রচলিত ডিকসেনারীয় শব্দ ব্যবহার না করে সহজে সুন্দর সাবলিল শব্দের বুননে কবিতা লিখা উচিত।অতিকথন পরিহার করা উচিত কবিতায়।কবিতায় বাড়তি মেদ না থাকাই ভালো। অল্পতে অধিক প্রকাশেই কবি ও কবিতার সার্থকতা। সর্বোৎকৃষ্ট  প্রকাশের সৌন্দয্যই মূলত কবিতাকে সুন্দর ও সার্থক করে তুলে। কবিতা সামনে এগুবার পিছনে যাবার না। অবশ্যই নিজের কালকে ধারণ করতে হবে কবিতায় যা বস্তুতঃ কালকে জয় করে মহাকালের হয়ে যাবে।


অন্ত্যমিলকে আমরা অনেকেই ছন্দ মনে করে ভুল করি। দুটো সন্পূর্ণ আলাদা বিষয়। ভুল ও দৃষ্টিকটু অন্ত্যমিলের জন্য অনেক কবিতার ভাবার্থ, গভীরতা নষ্ট হতে দেখা যায়। যা মূলত কবিতাকেই হত্যা করে।কবিতাকে অবশ্যই মৌলিক কবিতা হতে হবে সর্বাগ্রে।একদম নিজস্ব কিছু মৌলিক প্রকাশ থাকতে হবে কবিতায়। আর যার যার নিজস্ব কাব্যভাষা থাকতে হবে। উপমা,উৎপ্রেক্ষা,চিত্রকল্প,মিথ,রূপক আশ্রয়, অনুপ্রাস, অন্ত্যমিল, মধ্যমিল, ছন্দ, তাল, লয়, সুর,নির্বিঘ্ন সাবলিল ক্রম গতি,বক্তব্য ও বর্ণনার প্রবাহমান ধারাবাহিকতা ঠিক থাকতে হবে কবিতায়। কবিতা হবে ধারাবাহিক ঢেউয়ের মতো যা তীরে এসে সমুদ্র সফেনের রহস্য রেখে মিলিয়ে যাবে। বক্তব্য বা ম্যাসেজ থাকতে হবে কবিতায়। কবিতার শেষে ভাবনার কিছু খোরাকও থাকতে হবে । কিছুটা আড়াল থাকতে হবে কবিতায়। কবিতা ব্যক্তিক হয়েও নৈব্যক্তিক হবে। কবিতা কালিক হয়েও হবে চিরকালীন। সর্বোপরি কবিতাটিকে কবিতা হয়ে উঠতে হবে। ছন্দ কবিতার অনেকগুলো অলংকারের একটি মাত্র। মনে রাখতে হবে কবিতার প্রয়োজনে ছন্দ,ছন্দের প্রয়োজনে কবিতা না। আধুনিক ও উত্তরাধুনিক কবিতায় প্রচলিত ছন্দসমূহ উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। জোর করে কবিতা লিখতে যাবেন না কেউ। আপনি কবি হলে কবিতাই আপনার মগজে গুনগুন করে জন্মাবে। ফরমায়েসী ও অনুরোধের কবিতা লিখতে যাবেন না। কবিতা  হবে না সেটা, হবে প্রাণহীন অকবিতা। মনে রাখতে হবে কবিতা একটি শিল্প। কবিতো লিখলেই অবধারিতভাবে ছন্দ সেখানে দোলা দিয়ে যাবে। কবিতা লিখার পর বারবার আবৃত্তি করুন নিজে, দেখুন কোথাও ধাক্কা বা বাঁধা লাগে কিনা যদি সাবলিলভাবে পড়তে পারেন ধরে নিবেন আপনার কবিতা অনেকটাই ঠিক আছে। নিজের কবিতার সবচেয়ে বড় এডিটর নিজেকেই হতে হবে। যে নিজের কবিতার  সবচেয়ে বড় এডিটর সে তত বড় কবি হয়ে উঠে। রবিন্দ্রনাথ তাঁর একটি কবিতা ৩০ বার পর্যন্ত এডিট করে গেছেন তবে আমরা করতে পারব না কেন? নিজের এডিট শেষে ভাল কবিতা বুঝে এমন কবিবন্ধুদের কবিতাটি দেখতে, পড়তে দিন দেখবেন অনেক ভুল তাদের চোখে ধরা পড়েছে যা আপনার চোখে ধরা পড়েনি। সংশোধণ করা শেষ হলে কবিতা ছাপতে দিন,পোস্ট করুন টাইমলাইনে, গ্রুপে। কখনওই টাইপ শেষ করে তাড়াহুড়ো করে ভুলসহ কবিতা পোস্ট করবেন না এতে নিজের লেবেলটা নিচু করবেন নিজেই। আধুনিক কবিতা বক্তব্যের ধারাবাহিকতায় প্রবাহমান ছন্দে লেখা হয়। অক্ষরবৃত্ত,মাত্রাবৃত্ত,স্বরবৃত্ত,মুক্তক ছন্দ আপনি যে ছন্দেই লিখেন না কেন ছন্দ- অন্ত্যমিল ঠিক রাখতে যেয়ে কবিতার মূল ভাবের প্রকাশ ও কাব্যিক গভীরতা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।অভূতপূর্ব প্রকাশের সৌন্দয্যই কবিতাকে দৃষ্টিদন্দন করে তুলে এবং অপরের হৃদয়ে দাগ কাটতে মোক্ষম ভূমিকা রাখে। কবিতায় প্রকাশের নতুনত্ব ও সৌন্দর্যই মূল বিষয়। আপনার চমৎকার নতুন প্রকাশ ভঙ্গিই আপনাকে আলাদা করে দিবে অন্যদের থেকে এবং আপনার নিজস্ব একটি কাব্যভাষা দাঁড়িয়ে যাবে এভাবেই। এমনকি শুধুমাত্র চিত্রকল্পের উপর বেইস করেই একটি ভাল কবিতা দাঁড়িয়ে যেতে পারে। কবিতা হবে সাজানো গুছানো ঘোমটা সমেত নববঁধুর মতো কুমারী লাজুক সুন্দর। সে ঘোমটা উম্মোচন করবে পাঠক।  কবিতা হবে চির আধুনিক। চির যৌবনা। চির অগ্রসরমান। হৃদয় তাড়িত মগজে জন্মানো উচ্চমার্গীয় ভাবাবেগের সর্বৎকৃষ্ট সফল অলংকৃত কাব্যিক রূপই হলো মূলত কবিতা।