আমার অসমাপ্ত কাহিনী
সুনিপা চ্যাটার্জি


যখন হয়েছিল আমাদের প্রথম দেখা,
একটা পাথরে হোঁচট খেয়ে
আমি প্রায় পড়েই যাচ্ছিলাম,
তুমি ছুটে এসে ধরে ছিলে আমার হাত,
জীবনের প্রথম পরশ, প্রথম প্রেম,
প্রথম ভালোলাগা প্রথম ভালোবাসা  ।
তোমাকে আমার হয়েছিল পছন্দ,
তুমিও আমার সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে চাইতে,
তোমার সব কথা ভালো লাগতো আমায়,
আশা জাগাত  মনে,  স্বপ্ন দেখাত প্রাণে ।
তুমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমার সাথে
ফোনে কথা বলতে রাত্তিরে,
রোজ সকালে মায়ের বকুনি
আকসার দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা,
  সেটাও মনে দাগ কাটতো না,
কারণ হৃদয় জুড়ে তখন ছিলে তুমি,
শুধুই  তুমি ।


কলেজ থেকে আমার বাড়ি পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ,
তুমি ত্রিশ  কিলোমিটার মোটরসাইকেল চালিয়ে এসে,
আমাকে কলেজ থেকে বাড়ি পৌছে দিতে ।
তখন আমার সব বিষয়ে তোমার দৃষ্টি ছিল সজাগ,
শাড়ির ফলস, খোঁপায় কুসুম ও সুগন্ধির ব্যবহার ।


আজ আমরা একই ছাদের নিচে থেকেও কেন এত দূরে,
মনে হয় দুই হৃদয়ের মাঝে শ’যোজন  ফারাক ।
আগের মতো আর তোমার কথায় না পাই ভরসা,
তোমার হাতে না পাই সেই জোর ।
একদিন যে কাঁধে মাথা দিয়ে নিজেকে নিশ্চিন্ত মনে করেছিলাম আজ সে কাঁধ আমার কাছে অচেনা, ভগ্নপ্রায় ।
যে বাহুবন্ধনে নিজেকে সব থেকে নিরাপদ মনে করতাম করেছিলাম আজ সেটা বড় অপলকা  ।
হঠাৎ করে কেন তুমি এত বদলে গেলে,
এটা তো নয় আমি তোমাকে চিনতে ভুল করেছি,
বা তুমি আমাকে চাওনি বুঝতে কখনো ।
সম্পর্ক বাঁচাতে যখন আমি তোমাকে নতুন করে
আপন করতে চাইছে,  
তখন তুমি অন্যদিকে মস্তিষ্ক চালনা করছো,
পরিকল্পনা করছ আমাদের  সম্পর্কের ইতি ।
এখন আমার চলাফেরা, হাসি-কান্না সবই
তোমার কাছে সন্দেহ,  বিরক্তিকর ।
অথচ এক সময় ছিল যখন টিচারের
বকুনিতে আমার চোখে জল এসেছিল,
তুমি এক ঘন্টা জীবনানন্দ দাশ শুনিয়েছিলে ।


কিন্তু কতদিন, আর কতদিন এই ঘষামাজা
সম্পর্ক নিয়ে জীবনযাত্রার তরী পার করব ।
অঙ্গার বিছানো রাস্তায় চলা মুসকিল,
সেখানে নৃত্য  কিভাবে করা যায় ।
  মাঝ দরিয়ায় যদি হাল ভেঙে যায়
কেমনে মাঝি পার লাগাবে ।
সত্যি তো এটাই এইরকম ঘষামাজা
জীবন থেকে আমিও মুক্তি পেতে চাই ।
এবার আমি বাঁচবো নিজেকে ভালোবেসে ,
এই প্রতিশ্রুতি নিজেকে দিয়েছি আজ।
জীবনের অনেক বসন্ত পার করে এসেছি,
অপরের পথ চেয়ে ।
আজ হব আমি স্বাধীন,  নেই কোন পিছুটান,
নেই কোন অতীত ।
বাঁচা শুধু ভবিষ্যতে আমার নিজের জন্য,
আর কাউকে হৃদয়ের কাছে আসতে দেবো না,
মনের দরজা  খুলব না আর কারোর জন্য ।
জবরদস্তি সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখার কোনো যুক্তি নেই,
কারো মুখেই মিথ্যা হাসি দেখে
আর হ্রদয় বিগলিত হবার নেই কোন অবকাশ ।
হতে পারে আমার জীবনের
কয়েক মুহূর্তের সঙ্গী ছিলে তুমি
বাকি সারা জীবন আমি একা শুধুই একা,
যেমন ছিলাম আগে  ।


আত্মীয় পরিজন বা  সমাজ কি বলবে,  কি ভাববে
সে ভয়ে কতদিন চুপ করে থাকব ।
ঘর যার পোড়ে  সেই সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায় ।


এবার লিখবো আমি আমার জীবনের অসমাপ্ত কাহিনী,
এতে মুখ্য  অভিনেত্রী আমি নিজেই ।
কারণ আমার মনের দুঃখ,  শরীরের ব্যথা ও অবক্ত যন্ত্রণার
বর্ণনা আমি নিজেই করতে পারব, কেবল আমি নিজেই,
অন্য কেহ নয়,  অন্য কেহ নয়, অন্য কেহ নয় ।।