কলিতে ছিলেন এক বামানন্দ স্বামী
সর্বত্র সেবক তার, ভক্ত নামি দামি।
বসাতেন সভা তিনি প্রাতে ও সন্ধ্যায়
মান্য গণ্য ভক্ত ভরে থাকিত সভায়।
দ্বিপ্রহরে প্রতিদিন সভা সাঙ হলে
সাধু যেত নিজ ঘরে লোক অন্তরালে,
সেথায় প্রস্তুত হত কোন এক নারী
নব নব কায়া রোজ, নবীনা, কিশোরী
স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় বাবাজীর সনে
পুড়িতে হইত তার কামনা আগুনে।
সুবিশাল আশ্রমের বিরাট প্রাঙ্গণে
শোনা যেত আর্তনাদ ঘোর মধ্যযামে।
প্রতিবাদ করিলেই সেই কন্ঠ্স্বরে
স্থান হত প্রাঙ্গণের মৃত্তিকা অন্তরে।
কোথায় পাইল সাধু সর্বশেষ স্থান
শোনাতে এসেছি আজ সেই উপাখ্যান।
-------
একদিন দ্বিপ্রহরে পূর্ণ সভাস্থলে
সধবা রমণী এক বসিয়া বিরলে
লজ্জানত নেত্রে যেন কি মিনতি আছে
হেরিয়া বাবাজী তারে ডাকিলেন কাছে
"বল শুনি কি বাসনা রাখিয়াছ মনে"
নারী কহে "প্রভু, কব একান্ত গোপনে"
উৎসুক সাধু ভুলে বাকি সব কাজ
ঘোষণা করেন সভা সাঙ হল আজ।
রূপসীরে লয়ে সাধু গেলেন অন্দরে
কক্ষে আসি দিলা ত্বরা দ্বার রুদ্ধ করে।
কহিলেন "মনে তব যা কামনা আছে,
নির্ভয়ে বলিয়া ফেল সব মোর কাছে"
কহে নারী "প্রভু মোর ভাগ্যে নাই সুখ
একবার দেখিতে চাই সন্তানের মুখ,
পতি সনে বহুবার করেছি সঙম
মোর ত্রুটি নাই প্রভু, স্বামী-ই অক্ষম।
আপনার অতি বড় ভক্ত মোর পতি
এসেছিনু আজ লয়ে তার অনুমতি
বাঞ্ছা কর পূর্ণ মোর, আজি এ প্রাসাদে
রত্নগর্ভা কর তব কৃপার প্রসাদে"।
শিহরিয়া সাধু ভাবে, কোন পূণ্যবলে
স্বয়ং আসি এ রূপসী নিজে ধরা দিলে।
তুলিয়া ধরিয়া তার নত মুখখানি
কহিলেন "তোরে যেন জন্ম জন্ম চিনি,
কামনা করেছি যেন তোরে বারে বারে
পূর্ণ হবে বাঞ্ছা তোর আজি এই ঘরে"
এই বলি সাধু তারে কাছে টানি লয়,
এ সুযোগ কোনরূপে হারাবার নয়।
পূর্ণ হল রুদ্ধ ঘর সঙমধ্বনিতে
সতীর শোণিত মেশে সাধুর শোণিতে।
সমাপ্ত হইলে তার কামনার সুখ
চুম্বন করিতে যায় রমণীর মুখ...


অকস্মাৎ সাধু যেন বজ্রাহত হয়ে
রহিলেন রমণীর মুখপানে চেয়ে
ছিন্ন করি  স্মৃতিজাল ঠিক সেই ক্ষণে
স্মরণ হইল যাহা ছিল বিস্মরণে।
বহুদিন পূর্বে এক কিশোরী নবীনা
এসেছিল দ্বারে তার হয়ে ভাগ্যহীনা,
বিবাহের রাত্রেই সে নারীর পতি
অকস্মাৎ অঘটনে লভে অধোগতি।
অতি বড় ভক্ত ছিল পতিদেব তার
বিধবা নবীনা তাই জীবনের ভার
সমর্পিতে আসিয়াছিল সাধু পদতলে,
পরিবর্তে সাধু তারে কামনার জালে
নিষ্পেষিয়া করেছিলো সবলে হরণ
ভাগ্যহীনা রমণীর লজ্জা আভরণ।
অট্টহাস্যে মিশেছিল আকুল ক্রন্দন,
স্মরিয়া ঘটনা তার হৃদয়স্পন্দন
দ্বিগুন হল, লোপ পেল শ্রীমুখের জ্যোতি
নারীও বুঝিল, উঠে দাঁড়াল সে সতী।
সহসা কমলা হল করালবদনী
আরক্তিম চক্ষু যেন বিচ্ছুরে অশনি।
কহিলা সে "শোন তবে, সেই দিন হতে
স্বামীগৃহে ফিরি নাই, ফিরিয়াছি পথে,
ঘুরিয়াছি অগণিত অপবিত্র ধাম,
অন্তে পাইয়াছি যাহা চাহিয়াছিলাম।
কালান্তক যৌন ব্যাধি শরীরে আমার
স্পর্শিবে যে মোরে তার মৃত্যু অনিবার।
এবার নিশ্চিন্তে যাব মরণের পথে,
যাব, তবে, একা নয়, তোরে লব সাথে"।
বিস্ফারিয়া চক্ষু সাধু, বক্ষ ধরে চাপি
সমস্ত শরীর উঠে যন্ত্রনায় কাঁপি
বাকরূদ্ধ আর্তনাদ শুনিল না কেহ
তরাসে থামিল শ্বাস, প্রাণহীন দেহ
লুটায়ে পড়িল দুটি পূণ্য পদতলে
শেষ রশ্মিপাতে রবি গেল অস্তাচলে।


অন্ত হইল এইরূপে সাধু উপাখ্যান
চন্দ্রানন কবি ভণে, শুনে পূণ্যবান।