সালটা  ১৯৯৯ , তোর মনে আছে বন্ধু ! 
ইউনিভার্সিটি ক্যান্টিনে
আমরা দুজন প্রায়শই মুখোমুখি ,
চায়ের কাপে কতদিন
ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুধু ,
সামনের অনাগত দিনগুলিকে
অনর্গল বাংলা ভাষায় ,
তার অক্ষর , শব্দ ও বাক্যের বিন্যাসে
কখনো আমার কবিতায় আবার কখনো তোর কথায়  
স্বচ্ছ থেকে স্বচ্ছতর করার কঠিন এক প্রয়াসে আমরা সামিল ! মনে আছে তোর ! 


তোর নিশ্চয় মনে আছে
সেবছর হাসপাতাল আউটডোরে
কী কঠিনই না পরিস্থিতি ,
আর সামলাচ্ছি আমরা দুজন –
আমরা সত্যিই তখন দুজন !


এরপরও আছে । প্রেম ভেঙ্গে গেল আমার ।
প্রথম যার ভরসার আলতো হাত আমার নুইয়ে পড়া ক্ষত-বিক্ষত কাঁধ ছুঁয়ে গেল ,
প্রথম যার চোখের ভাষা জানাল
এইদিন সহ্য করতে তারও মন চায়নি একমুহূর্ত ,
সে তুই-ই বন্ধু !  তুই-ই ছিলি সেদিন !


বন্ধু , আজ রাসবিহারী অ্যাভেনিউ-গোলপার্ক হয়ে
ঢাকুরিয়া ব্রিজ ধরে নেয় তোর গাড়ি
তুই খুশি হোস এই গতির আনাচেকানাচে
মুঠো ফোনে ভেসে এলে
এসময়ের কোনো চেনা কণ্ঠস্বর ,
আর আমারও তোর মতোই একই অভ্যাস
শহরের এ-মাথা ও-মাথা এক করে ছুটে চলি ।
ব্যস্ত দুজনেই নিজের নিজের কম্যুনিটিতে আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ,
অথচ নিজেরাই কেউ কারোর প্রয়োজনের লিস্টে নেই ,
কোনো ফোনের কল লিস্টেও নেই !


ঠিক কথা বন্ধু , দামি সময়ের অপচয় আমরা করিনি ,
ভদ্রতায় অকৃপণ থেকে বলেছি , ‘সেরকম সময় সুযোগ হয় না রে আর !’


বন্ধু তা-ও , তা-ও আমরা কী করে ভুলে গেলাম
একসময় বাম-ডান , দুর্নীতি-বিবেক , গণতন্ত্র-ধনতন্ত্র 
সবই ছিল আমাদের টেবিল চাপড়ানোর বিষয় ,
গিটার , তবলা , এসরাজ , ধ্রুপদি গান
ক্লাসের বান্ধবী থেকে পাশের বাড়ির মেয়ে
চুলচেরা বিশ্লেষণে ও আলোচনায় আমাদের মাঝে উঠে আসত কতবার ! 


এরপর আর কী কথা বলব বল 
আমরা দুজনেই যে দুজনের হাত ছেড়েছি অনেকদিন ,
তুই যখন ঢাকুরিয়া ব্রিজ হয়ে ওপারে যাস
তখন হয়তো আমি ফিরছি বালি ব্রিজ ধরে ,
দুজনেরই হাতে মুঠোফোন , কোলে ল্যাপটপ ,
দামি শার্টপ্যান্টে ও শরীরে বিদেশি সুগন্ধির মিষ্টি অনুভূতিতে
দুজনে আজও আমরা তরতাজা যুবক  ,
আর পাশেও হয়তো আমাদের সুবেশা কোনো নারী!


দুজনেরই হয়তো কোনো সময় নেই রে আর
এই পুরোনো কিন্তু আপাত অনিচ্ছের সম্পর্কটাকে মনে রাখার , ধরে রাখার !


আসলে আমরা আলোচনাটা 
সেই ১৯৯৯ সালেই
অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় ফেলে রেখে এসেছি --
জানিনা সেই অতৃপ্ত মানসিক আত্মার জন্য
আমার আজকের এই প্রায়শ্চিত্ত
কোনোদিন তোর কাছে পৌঁছবে কি না !