এ অসুখ যত না কঠিন,
সময় মনে হয় তার চেয়েও বেশি কঠিন
এক দু:সময় এই ধনাঢ্য পৃথিবীর বুকে
মানুষের সমাজের উৎসমূলে,
দু:সময় দ্বিধান্বিত রাষ্ট্র ও তার সমস্ত অঙ্গরাজ্যের মধ্যে,
শহরগুলির অলিতে গলিতে
আমজনতার ঘরে ঘরে।


অথচ খুব বেশি তো কিছু চাওয়া হয়নি
বলা হয়েছিল কিছুদিনের জন্য হবে লক ডাউন
আর থাকবে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং,
ঘরের মানুষ ঘরেই থাকবে –
নিদান এটাই ছিল।
তা-ও তর সইল না অনেকের,
বেরোতেই হবে
নইলে যে হাঁসফাঁস করে ভেতরটা—
কতদিন পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে সিগারেটে টান পড়েনি
কতদিন চায়ের আসরে করা হয়নি গুলতানি,
অভ্যাসই ছিল কাজ সেরে দিনান্তে বসবে ঠেকের আড্ডা
না হলে যে ঠিক মতো রাতের ঘুমটাই হয়না।
অথচ ভেতরটা যে নিজেরই ছিল –
নিজের ঘর, নিজের লোক, নিজের মন,
নিজের আঁকিবুকি আর নিজের খেয়ালখুশি
--নিজের নিজের মতো করে তো ঢের ভালো থাকা যেতেই পারত!
তা-ও পোষাল না অনেকেরই,
তরও সইল না।
মুখে মাস্ক নেই, আর থাকলেই বা কী
ব্যবহার দোষে সে যে  না-থাকারই সমান,
অভ্যাস কি এত অল্পেতেই বদলায় –
যত্রতত্র থুথু ফেলা চাই
কুলকুচি করার অভ্যাসও ছাড়া যায় না,
নিজেরটাই আগে করে নিতে হবে,
তাই লাইন টপকে বেলাইনও হওয়া চাই,
ডিস্ট্যান্সে কী আর আটকায়
তাড়া যে ভীষণ!
হায় রে অবোধ মানুষ, এতই তাড়া যখন,
জীবন না এবার তাড়াতাড়িই গুটিয়ে যায়!  


সবই হচ্ছে, হলও! লকডাউনও শেষ হবে একসময়।
কিন্তু তারপর,
তারপরও যদি অসুখটা না সারে—
যদি লেগেই থাকে শব্দহীন চলে যাওয়া কারুর না কারুর!
পৃথিবীতে কিন্তু ফুল ফুটবে যথারীতি
নদীতীরে হবে সূর্যোদয়
সূর্যাস্ত দিগন্তে রঙ ছড়াবে রোজ,
রাতের আকাশে ফুটবে তারা
জ্যোৎস্নায় মাতবে নদী ও বনাঞ্চল।
কিন্তু যে লোকটার সেদিন খুব তাড়া ছিল, সে যদি চলে যায়,
যদি আমাকে চলে যেতে হয় অকালে,
ঠিক মতো মাস্ক পড়েনি যে লোকটা,
তাকে যদি গোটা শরীর মুড়ে
শেষ বিদায় নিতে হয় এই পৃথিবী থেকে—
তাহলে তো বেঁচে থাকাটাই ব্যর্থ হয়ে যায়,
অথচ আমরা প্রত্যেকেই
একটা গোটা জীবন বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলাম।