বিশ্বাসের শিকড় তখনই উপড়ে গেছে
যখন শ্বাশুড়ি তাঁর পাঁচ ছেলেকে
আমার ‘স্বামী’ বলে ঘোষণা করেছেন।
অথচ, আমি তো স্বয়ম্বরা!
কে আমার স্বামী,
তা তো একান্তই আমার পছন্দের বিষয়!
সেই আমাকেই মানতে হল
– নান্য পন্থাঃ।
.
আমি পাঁচ পুরুষের স্ত্রী হয়েও একা
স্বামীদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা স্ত্রী আছে
এমনকি অর্জুনেরও! সেও কেবল আমার নয়!
একেক স্বামী ডেকে নেবে এক এক বছর
প্রতি বছর আমার স্বামী বদলে যাবে
এবং, সে সিদ্ধান্তও আমার নয়, তাঁদের।
.
হস্তিনাপুরে শ্বশুরালয়ে আমি দেখেছি
আমার অবিবেচক স্বামীরা
জুয়ায় পরাজিত হয়ে স্ত্রীকেও বাজি ধরে;
হাতি, ঘোড়া, খাট-বিছানার সাথে
অবহেলায় বিকিয়ে দিচ্ছেন নারীর সম্মান।
রি-রি ঘৃণায় আমার তরুণী শরীর জেনে গেছে
অন্ধ সময়ে ধর্ষকাম শ্রদ্ধেয় ভাসুর
স্নেহের প্রিয় দেবরকূল লালসায় উন্মাদ হয়ে
ভরা রাজসভায় প্রকাশ্যে বস্ত্রহরণ করে নেয়...
.
আর, জ্ঞানী, প্রাজ্ঞ আচার্য-গুরুজনরা তখন
স্নেহান্ধ অথবা সম্পদের মোহে নির্বাক স্বাক্ষী
কন্যাসমা রজস্বলা বধূর একান্ত গোপনীয়তা
প্রকাশ্যে এনে আমোদিত হন আর্যেরা।
.
অথচ, সবের মূলে দায়ী না কি নারীরাই!
সীতা অপহরণে জন্যই নাকি রাম-রাবণ যুদ্ধ
আমার বস্ত্রহরণেই জন্যই নাকি
ভারত জুড়ে ভ্রাতৃঘাতী মহাযুদ্ধ!
.
আমি তো সামান্যা মেয়ে, দ্রুপদনন্দিনী,
আমিও কি জানি না, ভ্রাতা কৃষ্ণের চালে
ক্ষমতার আর্য লালসায়, ঔদ্ধত্যের আস্ফালনে
এ যুদ্ধটা অবশ্যম্ভাবীই ছিল?
.
অথচ, আমরা, সীতা-দ্রৌপদীরা
চিরকাল বিশ্বাসভঙ্গের আঘাতে আঘাতে
জর্জরিত, রক্তাক্ত হয়েই চলেছি।
আর্যাবর্তে অপবাদ আমাদেরই চিরসঙ্গী।
বার বার আমাদেরই কপালে রক্তচিহ্ন
পায়ে ধাতব মলের বেড়ি দিয়ে
আর দু-হাতে শাঁখা-পলায়
দাসত্বের চিহ্ন ধারণ করতে হয়।
মিথ্যা অপবাদের থেকে মুক্তি পেতে
প্রতিবার শুদ্ধতার প্রমাণ দিতে
শুধু নারীদেরই অগ্নিপ্রবেশ করতে হয়।
.
মাঝে মাঝে আমারও মনে হয়,
আর নয়, আর নয়, সময় হয়েছে!
মাথা তুলে দাঁড়াতেই হবে আমাদের
সতীন চিত্রাঙ্গদার সহযোদ্ধা হয়ে
অস্ত্র তুলে নিই, ডাক দিই সখীদেরও...