হাত বাড়াতেই অচেনা পথ
যাচ্ছে পথিক হেঁটে, পথ যে দিগন্ত সম
যতই সমুখ বাড়ায় ততই লম্বা হয়।
ঐ বুঝি আকাশ ঠেকেছে,
উড়ছে মেঘের পাঁজা, সবুজ মাঠের উদাস হাওয়া
ঐ গাঁও টা উজালা, যেন, বসেছে মেলা !
প্রকৃতির সাজ মনটা কাছে টানে।


পথিক অবসর,
মাদল বাজায় বটের ঝুড়ি
বউকথা কও, হলদে পক্ষি পাকা ফল ঠোঁটে
ফলের খোসা পরে নীচে, শরীর জুড়ানো বাতাস
চোখের পাতা বুজে আসে পথিকের।
যৌবন বিভাস পথিক বসন
সবুজ পাতার বন, ডাক দিয়ে যায়
বসন্ত বাউড়ি রঙ্গিন ডানায় উড়ে
শঙ্খচিল ঐ দুর আকাশে,
আলোয় করে ঝিলমিল ।


উড়ছে ঐ লাল নীল সাদা ঘুড়ি
দুরন্ত কৈশর স্বপ্ন বুনে; মেঘের ডানায় ভাবনা ভাসে
তেপান্তরের মাঠে সেই রাজ কুমার
ঘোড়া হাঁকিয়ে যুদ্ধে নামে ।
অথচ সেই পথিক আজও
তেপান্তরের মাঠ খুঁজে ফিরে,খুঁজে ফিরে
রঙ্গিন ঘুড়ির এলো মেলো উড়া,বাতাসের সুমন্দ সু-বাস!
পথে কুড়িয়ে পাওয়া পালক, শঙ্খচিলের
আর দুরন্ত কিশোরের ধুলামাখা শরীর।


খুঁজে ফিরে পথিক বর
ছোট বেলার বটের ঝুড়ির দোল খাওয়া উল্লাস!
খুঁজে ফিরে স্বপ্নচারী পথিক দাদীর মুখে,
গভীর রাতে ভুতের গল্প শুনে
তন্দ্রায় ভাঙ্গা স্বপ্ন!
খুঁজে ফিরে সব্যসাচী পথিক দুরন্তপনার
রাতভর চড়ুইভাতির স্মৃতি সুখ!
পথিক খুঁজে ফিরে,
জ্যোত্স্না বিভাস যৌবন কণ্ঠ নীল
চোখের সামনে যত স্বপ্নের ঝিলিক
স্বচ্ছ জলে রঙ্গিন গা মাছের সারি ঘুরে।


মেঘের আঁড়ালে উঁকি দেয়
রৌদ্র আকাশ, যে পথিক বসে মেঘের ভেলায়
মায়ার টানে হাওয়া উড়ায়।
যাচ্ছে পথিক কোন সে দূরে
পথের মায়ার টান, অচেনা পথের নতুন সুখ
বুকে ধরে রাখে।


অচেনা পথ মায়ার পথ
নষ্ট পথের সুখ, হাত বাড়ালেই ভরবে বুক,
অচেনা এক স্বপ্ন সুখ।
পথের মাঝে ভৈরবী সুর
বাজায় বিরহী রাখাল,যাতনা ভরা বুক যে তার
যেন খোলা আকাশ!
নদীর চরের কষ্টের মত
রাখাল উদাস হয়, এই বুঝি তার প্রিয়ার খবর
আসবে মিষ্টি বায়ে ।


চোখের চাওয়ায় মন ভরাবে
সবুজ মাঠের মত
যাক না পরে ভাটিতে বেলা
রঙ ছড়ানো সাঁঝে; পরলো বেলা দিন ফুড়ালো
আঁধার আসবে ঝেঁকে।
মাতাল পথিক হাটছে পথে
আঁধার ঝরা রাতে; রাত গড়িয়ে চাঁদ উঠেছে
খানিক আলোর খেলা, ঘুমিয়ে পথিক স্বপ্ন দ্যাখে!
ক্ষুধার রাজ্যেই সারা।


মেঘের ডানায় উড়ছে পথিক
দিচ্ছে উঁকি মেঘের ফাঁকে,
এক ঝাঁক চঞ্চল স্বপ্ন; স্বপ্ন সুধা পানে
নেশার রাজ্য অপরিমেয় প্রসারিত হাত
পথিকের বুক শীতল করে।
সঁপে দিয়েছে পথিক, জীবন যৌবন
ভালবাসবার সব প্রহর গুলো; দক্ষিণা হাওয়ায়
ভোরের পাখির ডাক, নরম আলোর ছটায়
পথিকের ভাঙ্গাল ঘুম আলোয় ভিজে।


হাত দিয়ে চোখ রগড়াতেই
চড়ুই জুটির কিচির মিচির; ডোবার ধারে
শালিকের জটলা!
আড়মোড়া শরীরের যন্ত্রণা ছাড়লো।
খুব ব্যস্ত লাল পিঁপড়ার সারি
চোখ পড়তেই থমকে গেল
পথিক বর! এমন সু-ভদ্র সকাল
যেন বৃষ্টিতে ভেজা ধৌত করা শরীর প্রকৃতির;
প্রিয়ার ঠোঁটে চুম্বনের মত সুখের ।


এত সুখ-বর্ণ ছেড়ে
পথিক মনে মনে গেয়ে উঠে; বাউল পদের
যেন চেনা এক সুরে! তার বুকে উত্থলিত হয়
সে আমার কেমনে হইলে পর?
যার আঁচলে সুখের ঘর
দেখে ছিনু নিরন্তর !!
পথের মাঝে আমায় ফেলে
ধরলে অচিন পথ;
সে আমার কেমনে হইলে পর !!
______________
২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৭ !