এ জল কেমন জল?


এ জল কেমন জল?
ঘটা করে চোখে ছল ছল; চেয়ে চেয়ে আকুলতা
বারবনিতার অপেক্ষায় ঘটা; উলু বনে মুক্তা ছিটানো বিলাসিতা
বুনোফুলের গায় বৃষ্টির ছিটেফোঁটা।


আষাঢ়ে মেঘবালিকা উড়ে উড়ে
নীল আকাশে ঘুরে ঘুরে; হাওয়ার সাথে সখ্যতা গড়ে
জলের মাদকতা নেশায় পেয়ে বসে; জলের গর্ভে জল ধরে
নিত্য বারবনিতার যৌবন সাজে।


মেঘ ঘন কালো সাজে দিগন্ত ঢাকে
উনুনের চালে সবুজ চালকুমড়া; সদ্য বৃষ্টিস্নাত লকে লকে ডগায়
সবুজ মাদকতা বুনে; আহা কাক ভেজা বিকেল
বারান্দায় কার্নিশে ছিটেফোঁটা জলে চড়ুই খুনসুটি জমে।
====


তারই ছিল সব


তারই ছিল সব,
বৃষ্টি ভেজা জলের চুম্বন।
মেঘের ঠোঁট বেয়ে; অধীর সুখ জড়ানো
যেন বৃষ্টির ছোঁয়া।
বার বার এই বর্ষা আসে,
মেঘবালিকার আঁচল ঢেকে
তারই গুনগুনি গানে; খুনসুঁটি সুখ বিবর
চুপি চুপি দ্যাখে।


চোখে চোখ রেখে,
নিত্য যে মরন হয়
তারই শরীর সিঞ্চনে; না পাওয়ার
সেই বিরহ টুকু।
মেঘ বৃষ্টির শুদ্ধ স্নানে
খোলা হাওয়ায় ঐ আঁচল উড়ে
শরীর সীৎকার মরমে; আবিষ্ট গ্রহন লাগা
চাইবার শেষ চুম্বন।
====


আজ অপরাহ্ণে একপশলা বৃষ্টি চাই


আজ অপরাহ্ণে একপশলা বৃষ্টি চাই
দিনের আগল খোলা যাতনা ঢলে পরে বেলায়,
নিঃস্ব বেলার মতো রিক্ত যে; বড় বেশী ঘনালে আঁধার
বহুভুজ মেঘের মতো করে সাজানো সরল আকাশ।
অসম যাতনা কঙ্কাল বুনে,
অহরহ স্মৃতির ঘোর লাগা বিদ্রুপ
মৃত্তিকা ক্ষয়ে ক্ষয়ে;
জীবাশ্ম জন্মদানে বেঁচে থাকে আমৃত্যু।


আমি সেই মৃত্যু সোপান অচেনা পথে
চলেছি গোপনে জোনাক ঝাঁকের পিছে পিছে,
ভয় শংকা হীন প্রাণে পথের মরীচিকা বানে
আঁধারে বুঁদ স্বপ্ন ঘোর গঙ্গানোর মতো।
সেই সরল আকাশের মৌনতায় ডুবে
আরধ্য একপশলা বৃষ্টি সবুজ কুঁড়ির জন্য
জীবনে সজীবতার জন্য।
=====


আর কি বা চাওয়া ছিল তার?


আর কি বা চাওয়া ছিল তার?
চাওয়া পাওয়ার এই দীর্ঘ পথ। অমানিশায় রজনী কেটে গেল কত? আকাশে তবুও ভাবনার অম্বর উড়ে। স্বপ্ন ডানায় ভাসে জীবন। তাও আবার চাইবার সুখটুকু পাবার আশায়। দিনের বিপন্ন রাতের গায়ে কড়া নারে। শুদ্ধ বাতাস গুমোট গরমে রুপ নেয়। মিছে মেঘ কখন যে ঘূর্ণিঝড়ে তড়পায় কে জানে? কে জানে জীবন নিয়তির বেড়াজালে আবদ্ধ? তবু তার চাওয়া ছিল ঢের বেশী। এতটুকু জীবনে যতটুকু দরকার তার চেয়েও বেশী। ঢের বেশী, সেও তো জীবনে জন্য; জীবন বাঁচার জন্য! না বাঁচার জন্য জীবন? ক্ষুরধার সঞ্চালন বটে।


সব কিছু আপেক্ষিক ভাবনায় মিঠে না। এই চাওয়ার আধিক্য প্রবল। মেঘ তার শরীর জুড়ে বৃষ্টি বয়ে বেড়ায়। নদী তার জোয়ার ভাটায় মত্ত। বসন্ত এলে ফুল বাহার। তাই তো চাওয়ার অসম লোভ। আত্মার কিটের জন্ম হয়।
=====


নীল জুড়ে সেই তুমিই ছিলে


প্রতি মুহূর্তে হাঁটছি চেনা অচেনা দুটো পথেই
অচেনা পথে হাঁটলেই সেই পথ নতুন করে চেনা হয়েছে।
অনেক পুরোনো পথে হাটা হয়নি বলে
আবার অচেনা ঠেকেছে; আকাশ পথের ভাবনায় বিষ্ময় পথ
তবুও আকাশ চেনা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখে।


নীলের অম্বর ঘন ছায়ায় বৈচিত্র্য আঁকে মনে,
তাই বোধ হয় ভুলার নয়; ভ্রম ঘুচিয়ে স্বপ্নবোনা বিশালতা।


যে বিষাদ ভাবায়, নীল জুড়ে সেই তুমিই ছিলে
আড়ম্বর ঘনঘটায় পথের বিদ্রুপ এরিয়ে; আকুল করা
পথের ধারে আগাছা বেড়ে উঠা ঘাসফুল ছোঁয়ায়
পথের সেই স্নিগ্ধ মৌনতা এঁকেছিল কাকতালীয় বিষ্ময়।
====


ফেরা হল না আর বাড়ি!


মেঘের আঁড়ালে যেমন রংধনু লুকিয়ে বাঁচে
পঞ্চমী চাঁদের বিভাস; খুঁজে মরে জোনাক জোনাকি।
আমার মতোই ছিলাম বেশ
দীঘির জলে ঢেউয়ের মতো নির্লিপ্ত।


জ্যৈষ্ঠের চাঁদ যখন ঢালছে তার জ্যোৎস্না
ঢেউ খেলানো মত্ত ঝিকিমিকি রং এর আঁচল।
ফেরা হল না আর বাড়ি! গুহা দ্বারে
যে ছিল দাঁড়িয়ে, কালের প্রহর মাথায় চেপে।


আমলকি বনে,
গ্রহন লাগা বাতাস বলে যায় বিরহ কথন
পথের বাঁকে বসেছে কালের মহুয়া নেশার মেলা
নেশায় বুঁদ এখন সব লুট হয়ে যায়; বিপন্ন কোলাহলে
হৃদয়-কোমল প্রসন্ন রংধনু যেন
জলের কোনায় ছড়ানো দেহ তার।


সেই অঙ্গেই তার করেছে উত্তরসূরি প্র-পিতামহের
ছড়িয়ে দিতে কালে কালে রক্তের আকড়;
ছড়ানো বিপন্নতায়।
=====


তাকে জানতে চেয়েছি


তাকে জানতে চেয়েছি,
আচমকা মেঘের মতো,মেঘ যেন তার
জলের ছোঁয়ায় বেঁচে উঠে অবলীলায়;
তেমনি বাঁচতে চেয়েছি! জেগে উঠতে চেয়েছি!
নিঃস্ব মেঘের মতো সব ফুড়িয়ে।


লজ্জাবতীর মতো জড়ানো সীৎকার
কুড়াব তার রঙধনু! আঁচল পেতে বস
ফুলের রেণু সাজাবে, সবুজ ঘাসের গালিচায়
হে পূর্ণা দেবী; আঁড় চোখে তাকিয়ে রয়
যুগোল কাঠবিড়ালি।
=====


এ কোন বিস্ময়?


একলা পথে হটাৎ চোখ এ, এ কোন বিস্ময়?
পথের ধুলায়,
জন্মান্তের অবয়ব হলি খেলে।


মাতাল হাওয়া সর্বনাশের আঁচল উড়ায়!
খেলে খেলে ধুলোর
প্রণয় অঙ্গে প্রলয় গিঁট বাঁধে।


তারই আকাশে একদিন স্বপ্ন ধোয়া রংধুনু,
উঠেছিল সম্মস্বরে
আজ কেন মলিন বদন ভাসে?


জোছনা হেরে ছিল বিস্ময়ে লাজে,
ঢেকে ছিল আঁধার লুকায়ে
কেন তবে পিছুটান চলতে পথে?


সময় কালের সুখ ভোগ কি নিয়তির হাতে?
প্রাতে নিঃস্ব আলো
নরম কোমল কেন বেদনার সাঁঝা আঁকে?
====


এ কোন ফসিল লুটায় রক্ত কোণায় মিশে?


হৃদয় গুহায়,
এ কোন ফসিল লুটায় রক্ত কোণায় মিশে?
চেতন বেলায়,
এ কোন মাকড়সার জাল বুনে হৃদপিন্ত জুড়ে?
পলে পলে,
এ কার ছায়া মর্ম বেদনার চিতায় প্রেম পুড়ে?
জেগে জেগে,
ভেসে ভেসে যেন আকাশের ঐ ভাসান মেঘ উড়ে!
====


এক দিন ছিল সে তো! লজ্জাবতীর সহচর


এক দিন ছিল সে তো! লজ্জাবতীর সহচর। সরষে ক্ষেতে, হলদ পাঁপড়ি ঝড়া আবিরে, লজ্জাবতী যেন চুপসে সারা। মাড়িয়ে গিয়ে ছিল কাঠবিড়ালীর খুনসুঁটির মত্ততা।


সেই মত্ততাই, একদিন কাল হল তারই। চাওয়ার অসিম সাহসই একদিন প্রেম স্বপ্ন ভাসাল। লজ্জাবতীর আদল খুলে, ঠোঁট লেহনে হাসাল। লজ্জাবতীর পাতার শিরা উপশিরায় এ কোন কুঁকড়ে যাওয়া অমানিশায় হারাল?


শিশির ভেজা কাঁপানো জল মুছে, আলোর নৃতে আড়মোড়া ভাঙে। যেন নদীর মোহনার কোলাহল। জাগে সুখ, জাগে বিস্ময়, উজার খরায় নামে বর্ষা। চুঁয়ে পড়া জলে, মৃত্তিকা সোদা ভিজে, বীজের অনাহারি সিক্ততায় অঙ্কুরোদগম।


১৪২৩/১৯, মাঘ/শীতকাল।