কুয়াশার নৈশব্দে, শিশির ভেজা পথ


কুয়াশার নৈশব্দে, শিশির ভেজা পথ। বালুকোণা শিশিরে মাখে,পথিকের পাদুকার চিহ্ন আঁকে। নৈশব্দের আগলে ঢাকে, যেন বেলুয়াড়ি মাঠের পর মাঠ নবান্ন্য ধানের ক্ষেতে নেতিয়ে পরা নাড়া।
শিশির বিন্দুর সুবর্ণ আলোর ফুলকি, আগাছার ডগায়।


পথের ধারে, লা্উয়ের মাছা। সাদা ফুল। সবুজ পাতা। সাদাফুলে লাল ফড়িং ডানা মেলে বসে আছে। ফড়িং এ পাখা শিশিরের কুয়াশায় ভেজা। যেন ফড়িং ডানায় মাকড়ষার জাল। পাতা চুয়ে টপ টপ করে শিশির ঝরে।
====


পাখিদের সপ্তকলা


আমলকি বনে,
মৃদ হাওয়ার প্রদাহ আঁকে
নৈশব্দের পাতার ঝরার যেন স্বৈল্পিক বিপন্নতা।
ঐ মেঘে আঁড়ালে,
কুয়াশার গা ফুঁড়ে পাখিদের সারি
দিগন্ত গায়ে যেন স্বপ্ন বুনে চলে।


আমলকি বন আজ নিঃস্ব
পাতা ঝরে নাঙা, উদল আকাশ চেয়ে থাকে
পাখিদের সপ্তকলা আসচ্ছ্বদনে।
===


মাঘের শীতে বন্ধ্যা ডোবা


মাঘের শীতে বন্ধ্যা ডোবা। কচুরি পানা আর আগাছায় ঢেকেছে বেশ। ডোবার কোণে কচুরি পানার ঝাড়,ঐ ঝাড়ে গজিয়েছে নলখাগড়া গোছা। কচুরি পানা আর নলখাগড়ায় বন যেন শিশিরে ভিজে আরম্বর আচ্ছাদনের ওমের প্রাণাজ্জ্বল ডাহুক ডাহুকির গাগরি।


হালকা বাতাসে, ডোবার জলের শরীরে কাঁপন লাগলে। ডোবার ধরে পলির কাদায় হেলেঞ্চা সমারহ। পানিতে শরীর তার সিঁথির নৃত্যে বিছানো। কালো টলটলে জলে, দাঁড়কিনা মাছের আনাগুলা। ডোবার ধানের পোঁতা কঞ্চির ডগায় মাছরাঙা মাছ ধিয়ানে।
=====


শিকারি


আহত প্রজাপতি,
শিশিরে ভিজে মাকড়সার জালে আটকা।
জালের ছ্ই এ পাহাড়ায়
শিকারি মাকড়সা।
কুয়াশার আঁধার, বিমূর্ত নষ্টাল জিয়ায়
প্রজাপতিটা; প্রহরের প্রহর গুনে
আলোর মুখ দ্যাখে নি।
শিকারির বোনা ফাঁদ
মৃত্যু নামের করবি ফুলের
বাসনা কুয়াঁশায় ভেসে আসে।
====


ক্ষেতের নাড়ায়, আগুন দিয়েছে কৃষক


ক্ষেতের নাড়ায়, আগুন দিয়েছে কৃষক। স‌্যাঁত স্যাঁতে নাড়া, ধুঁয়ার আদলে জ্বলে। কুয়াশার ঢাকা ভোরের আকাশে, ধুঁয়ার কুন্ডলি উঠে। উত্তরের হাওয়ায়, সজনে পাতা ঝরে। উঠানে খর পোড়া আগুনে দু'হাতের তালুতে একটু ওম খুঁজে।


উনুনের খড়ের চাল। শিশির ভেজা চাল ফোঁড়ে, ধুয়ার কুন্ডলি উড়ে। কলতলায়, বধুয়ার জটলা। হাঁড়ি বাসন মাজার, জল কথার পৌরনাকি খিস্তি খিউর, কিচির মিচির। যেন ডেবার ধারে শালিকের ঝাঁক। ছানাদের খাবারে জন্য আহাজারি।
=====


বল্গা হরিণ ছোটা হাওয়া এখন


বল্গা হরিণ ছোটা হাওয়া এখন,
উত্তরের হিম কাহন।
শিশির প্রপাতে,
বরফ কুচির কুয়াশার অঙ্গ
ঘাসের স্তুপে, জোনাক জোনাকি
আলো জ্বেলে ঝিমায়,
উড়বার বাসনায় অনাহারি
তৃঞ্চায় চাতকির মতো।
=====


বিলের জল এখন স্থিরতায়


বিলের জল এখন স্থিরতায়। শুধু হাওয়ার আন্দোলনে, শির শিরে
ঢেউয়ের নাচন তোলে। বানের জলে, পলির গাথ পরেছে তলানিতে। তাই তো টল টলে জলে জলছবি ভাসে।


জেলেদের নায়ে আড়ম্বর আনাগুনা। কেউ জাল ফেলেছে। কেউ জাল টেনে উঠায় নায়ে। জালে আঁটা মাছদের আপ্রাণ লাফালাফি, সেথে জেলেদের মুখে তৃপ্তির হাসি।
=====


জালের ফাঁদ


বিলের মোহনায় খোড়াজাল পাতা,
জেলে বসে থাকে
ত্রিভুজের ঐ কোণে; মাছরাঙা মতো
কখন জালে পরবে টান?
আর এমনি হেসকা টানে, জাল গুটিয়ে নিয়ে
মাছের ঝাঁককে ফেলবে ফাঁদে।
মাছের শরীরের জল নিংড়ে পরে
ঝর ঝর করে;
ফাঁকা পাশের সুতায় বুনানো জাল
জল না হি ধরে।
====


বেনি বাঁধা কলার মোচা


বেনি বাঁধা কলার মোচা। সবুজ কলাগাছে পাতার আঁড়ালে ঝুলে। মোচা ফুটেছে, ভ্রমর গুঞ্জন। মৌ মৌ মৌমাছির ঝাঁক।
কুয়া তলায় নালায় কলাবতি ফুলে ঝাড়।
যেন বাঁশ ঝাড় আদলে দুলখায়।


রাতভর বাদুর পেঁচাদের উড়া উড়ি। রাতের বাতাসে শন শন ভুতুরে আওয়াজ। যেন আকাশ থেকে নামছে পরি।
জোছনা মাখা ফকফকে রাত।
লেপের ওমে ঘুমে বিস্মৃতি।
====


যেন নোনা ধরা রাত


যেন নোনা ধরা রাত। খাঁজকাটা শিশির কুঁয়াশা খসে খসে পরে। আচমকা টিনের চাল হতে টপ টপ জলের ফোটা পরে। রাত গভীর হতে গভীর হতে থাকে। জোছনা উঠার ঢেড় বাঁকি।


আঁধার কোলাহলে পোকামাকড় দল বেঁধে, একই সুরে বার বার ডাকে। যেন রাতের মেলা বসেছে। আর দল বেঁধে গন ধরে। দূর হতে ভেসে আসে, শীতের কাঁপনে, শেয়ালের ডাক।


গভীর রাতে নক্ষত্র আলোয় আকাশ সাজানো। কোন কোন আলো খসে পরে আঁধারের গায়। ঐ তো ঐ তারাটা, কখন খসে পরল?না কি মিলিয়ে গেল এমনি এমনি? রাতের দ্রোহে।
====


১৪২৩/২২, মাঘ/শীতকাল।