সে তো ছিল বিবর্ণ আঁধারে ঢেকে


সে তো ছিল,
বিবর্ণ আঁধারে ঢেকে
সুঁপিয় জলের সিঁথানে; খুব কাছে
ঝরনার জলের স্পর্শে
লজ্জাবতীর অঙ্গনার মহল আঁকড়ে।


নক্ষত্র ভাসা,
রাত্রি ঘন আঁধারে
নক্ষত্রের আলোর সুর্রম্যে; মৌনতা ভেঙ্গে
যত চাওয়া ছিল তার
আঁধারে খোলা আকাশের নগ্ন দ্রোহ।


চুপি চুপি,
সিমের বেগুনি ফুলের সাজ
শরীরে শিশির ধোয়া চন্দনের প্রলেপ;  যেন বাহারি নেকাবে
জলের তির তিরে ঢেউয়ে
রাত্রি ফুরাবার সে কি তুমুল উর্ত্তেজনা।
====


তুমি তোমাতে বেড়ে উঠা


তুমি তোমাতে
বেড়ে উঠা,
যত নিক্তির নিক্কন কালে;
সুবর্ণ রূপ জৌলুস
অর্ন্তধানে লুকায়িত
যেন ঝিনুকের বুকে
মুক্তা ভান্ডার।


কালের পাড়ে তখন
সিঁধ কাটার,
বিবর প্রলয় দুর্বার ঝঞ্ঝা;
রাতের আঁধার পলে পলে
প্রহর যায় গড়িয়ে
কোথায় সে?
তোমাতে যার মরণ।
=====


সে পথ ছিল তারই


সে পথ ছিল তারই
নিত্য চলাচলে যেন তারই আঁকা। যেন কাগজে পথের দাগ টানা। ঋতু বদলে সেই পথ কখনো মলিন বিধুর। আবার কখনো বর্ষার জলে ডুবে সারা। আবার বসন্তের সবুজ ঘাসে ঢাকে।


পথের মসৃণ গায়ে সোদা মাটির রং মাখা। দু'ধারে আগাছায় আচ্ছাদিত। ঘাসফুলেরা বাতাসে দোল খায়। ফুড়িয় ডানায় উড়াউড়ি। ঐ পথে হয়তো এখনো কোন কিশোর নাটাই হাতে দাঁড়িয়ে, স্বপ্নের ঘুড়ি উড়ায় আজও।
====


বিনিসুঁতার মালা


ঐ যে কথায় বলে না, বিনিসুঁতার মালা। প্রেম নামের আঙ্খান, যাকে বলে। কাজল কালো গাও। মৌন দিঘীর পাড়। আঁচল খোলা উঠান জুড়ে রাজহংসির দল।


এমনি গহনে, প্রেম ছিল অফুরান। তবু মালা গাঁথা হল না তার। প্রেম ছিল অপার। চাওয়ার সাধ্য ছিল ক্ষীণ। তাই পুড়েছে যৌবন তার। প্রেম কহুক ডেকে দ্বারে বারং বার। নিত্য হেলায়, তারে করেছে তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য। এখন কেন তবে এ মিনতি?
=====


নয় সে তো প্রেম


রূপ জৌলুস
সে তো কামনার
ফুলহার।


নয় সে তো প্রেম
প্রেম পুঁজার
উপহার।


কামে বাসনা
সে তো রতিভ্রুম
কামুকি।


নয় সে তো প্রণয়
নন্দন দহন
ভালোবাসার।
====


সে তো ছিল


সে তো ছিল,
অনেক দূরে গাঁও পারাবার; সড়ক পথ পেরুলেই
মেঠো পথ ধরে এগুলেই।


ধানি মাঠের ক্ষেত পেরিয়ে
সবুজ গাছ গাছালিতে ভরা ঐ গাও; সজনে গাছে ভরা উঠান
খড়ের চালে ঐ বাড়িটিই।


কলতলায় আতাফলের গাছ
উঠানে পাশে পুঁইমাচা; ডালিম গাছে টোনাটুনির বাসা
ঘরের কার্নিশে বসে চুড়ই জটলা।
====


নিপুনা সৌমার্য্য


তারে ডাক দিয়ে, উড়ে যায় পাখি। আনমনে তারে খুঁজে খুঁজে সারা। বিধুর ধূঁসর বিকেল বেলা। ঝুল বাড়ান্দায় স্মৃতির কত নিক্কন মেলা? না পাওয়ার আক্ষেপ দোলাচল।


নিপুনা সৌমার্য্য। চক চকে, ফকফকা আধুনিকতার জীবন এখন তার। তবুও কোথায় যেন তিলক বিন্দুর? খচ খচে ব্যথা যানান দেয়। ওমে ঢাকা বুকের পাঁজড়ে।
=====


এক দিন তারই আমন্ত্রণে


এক দিন তারই আমন্ত্রণে,
গোধূলি বেলা।
হাটুরিয়াদের বাড়ি ফেরার,
অমোঘ সাঁঝ বেলা।
মেঠো পথে ধুলোর বালুয়াড়ি,
সাঁঝ নামের মেলা।
হাতে হাতে লন্ঠন জ্বলা,
যেন জোনাক ঝাঁকের মেলা।


গোধূলী সাঁঝে উঁইপোকার ঢিবি জুড়ে,
সাঁঝ লালিমায় উড়াউড়ি।
উড়াউড়ির সাঁঝে তারই সুর বাজে,
বিঁধুর বিরহ আঁকে দিগন্ত পাড়ে।
=====


চেনা ছিল যে পথটি তার


এই পথ তার বরাবরই চেনা ছিল। আজ এই পথের মোরে, অবাক হয়ে পথ চেনার প্রত্যয় বুনে। এই দিকে না ঐ দিকে। বুঝে উঠার বিপন্নতায় পেয়ে বসে আজ।


এদিক ওদিক, চেয়ে চেয়ে, কত কত পরিবর্তন তারই চোখের সমুখে? যে ঘাসে নিত্য চলাচল, মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে দালান।
বড় উঠানের টিনের চৌচালা বাড়িটায়, এখন বুনেদি মার্কেট।
=====


তারই একান্ত অবসর


পানকৌড়ির ডুবসাঁতার,
আত্মমগ্নতায় প্রণয়।
ক্ষয়ে ক্ষয়ে নিঃশেষিত আজ; তারই ভাবনার
কোরাজ গায় জলের ছম ছম।
পদ্মপাতায় এ কোন টলমল? জলছবিতে ভাসে
আত্মবিলাপ তারই মর্মের গান।


দূর হতে ভেসে আসে,
ছেঁড়া মেঘের দল; গা ছম ছম সাঁঝ বেলা
তারই একান্ত অবসর।
কোথায় ছিল এমন?
সন্ধ্যা তারা লোভনিয় আমন্ত্রণ; সে তো বিরহ
প্রণয় দ্রোহ পুঁজনিয় অনল।
======


১৪২৩/২৫শে মাঘ/ শীতকাল।