কোকিল ডেকে ডেকে আত্মহারা


বসন্ত এসে গেছে। সনাতন আদল ছেড়ে বেড়িয়েছে, নতুন নতুন স্বপ্ন মুখো জীবের উদ্ভাস। কবিতা গানে, বাউল বসনে, রং লেগেছে। বাউল মুখে মুখে মাছের পোনার ঝাঁকের মতো গীতের সমারহ। আদি অন্তে যেন নতুন অবগাহন। ধুলায় গড়াগড়ি যায়, মাদার ফুলের লাল দল। উঠানে দক্ষিণা বাতাসে ঝর ঝর করে ঝরে সজনে পাতা। পলাশ ফুটেছে। শিমুল ফুটেছে।


আমের বোলের মৌ মৌ গন্ধ ভাসে বাতাসে। সরোসির খোপায় গাঁধা ফুলে বেনুনী বাঁধা। যুগোল প্রেমের খুনসুঁটির সুর লহোরীতে, কোকিল ডেকে ডেকে আত্মহারা।
=======


সন্ধ্যাবতী গাঁও


সন্ধ্যাবতী গায়ে, কলাবতি ফুল ফোটে। কলতলার নালায় কলাবতির ঝাড়। আঁচল মোরা বউ ঝিদের উদাস কোলাহল। পুকুর পাড়ে শান বাঁধা ঘাট। নিত্য দোলাচল। মিহি বাতাসে জলের ঢেউ বিলিকেটে যায়। কাদা জলের ধার ঘিঁসে নয়ন তারা বিছিয়েছে শরীর, জলছবি দেখে দেখে। হেলেঞ্চা দল। তার যুগোল প্রেমিক বুনে লজ্জাবতী লাজে ভাসে জলে।


আহল্লাদে কোন মাছ দিলে উঁকি, জলভেজা গায়ে চুপষে পড়ে নুইয়ে। পদ্ম পাতায় বসে থাকে সোনামুখো ব্যঙ। জলমাকড়ষা জলের উপর যাচ্ছে দৌড়ে ছুটে। উৎফুল্ল জলে ডুবে ডুবে সারা। হাসের ছানার দল।
=====


ঘাসফুল


পথের দু'ধারে সবুজ আগাছার  যেন আড়মোরা ভাঙ্গেছে। শীতের মর্মদহন ভুলেছে। নতুন পত্র ডানায় উদবেল, যেন কোলাহলে দিবে উঁকি। দক্ষিণা হাওয়ায় মাতাল যেন ঘাসফুল দল। জুটেছে হাজার রকমের পোকামাকড় না না রং এর।


জুটেছে আরও ফড়িং ডানায় উৎফুল্ল প্রজাপতির ঝাঁক। রং বেরং রং এ। উড়ছে বসে ঘাসফুলে। লাউ ফুলে। ঘাসের নরম মৃত্তিকায় খুঁজে ফিরে খাবার, শালিকের ঝাঁক।
=======


শীতের ডোবা


শীতে ডোবা জলের স্বল্প, স্বচ্ছ আচ্ছদন। অগভির জলে ভরা। বানের জল সেই নেমে গেছে কার্তিকে। তার পাড় শুকিয়েছে সবে। নন্দন মৌনতায় ডেকে উঠে ডাহুক ডাহুকি; ডোবার কোনায় কচুরি পানার ঝাঁড়ে। চারিদিক হতে, নেমেছে কত জলে ভাসা আগাছা? আগাছার বিস্তার পানায় প্রায় ঢেকেছে ডোবার জল।


মাঝে মাঝে স্বচ্ছ জল। করে টলমল। নীল আকাশের জল ছবি ভাসে। শুকনা পাড়ে, না না পায়ের কাদার ছাপ, যেন মুখ তুলে হাসে। কাদা জলে পোঁতা কঞ্চি এখনও জলে উপর। সেথায় বসে পড়ে এক সবুজ গা, লাল ঠোঁটের মাছরাঙা।
========


সন্ধ্যাবতী গায়ে বৃষ্টি এল নেমে


সন্ধ্যাবতী গায়ে নেমে এল বৃষ্টি। সে কি বৃষ্টি? ঝম ঝম ঝর ঝর, গুরু গুরু মেঘ ডেকে ডেকে। উঠানের যত ধুলো যায় গড়িয়ে জলে। টিনের চালে বিষ্টি মাখা শব্দের গান বাজে। পুঁই মাচা ভিজে সারা। খরের পালা। উনুনের চাল। চালকুমড়া। কলতলায় আতা গাছ টা। কলাবতির ঝাঁড়। উঠানে সজনে গাছ টা। ছোটদের খেলনা পাতি চুলো সহ ভিজে গেল সব।


সন্ধ্যাবতী গায়ে বৃষ্টি এল নেমে। এপাড়া ওপাড়া, ভিজে গেল উত্তর ও দক্ষিণ পাড়া। মেঠোপথ কাদায় মাখামাখি। লেগেছ বাদল।
=======


সূর্য উঠে ভোরে


সন্ধ্যাবতী গায়ে সূর্য উঠে ভোরে। সাদা আলো ঝেড়ে এবার লালছে হলুদভা আলোয় ঢাকে, সন্ধ্যাবতী গাঁও। চন্দনার ঝাঁক যায় উড়ে। বাঁশঝাড়ে সাদা বক বসে। ভোরে আলো পরে তার গায়ে। যেন আঁচল উড়ায় মেঘ বালিকার কানে কানে।


সবুজ টিয়া সবুজ গাছের পাতায় খেলে লুকোচুড়ি, এদিক ওদিক করে ছুটাছুটি। চালকুমড়া চালে, সাদা চুনে চক চক করে। কালো ভ্রুমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে ঘুড়ে।
=======


সাঁঝবেলা


সাঁঝবেলা গাঁয়ের পরে যেন স্বর্ণ আলো ঢালে। অতিশয় নরম বেদন গাছের পাতার ফাঁকে স্বপ্ন উঁকি মারে। চারিদিক স্বপ্ন রব। পরে যায় সারা। এবার গাঁয়ে ফেরার পালা। হাটুরিয়া হাঁটে মেঠোপথে। পথিক পথের বাঁকে। রাখাল ফিরে ধেনু নিয়া।


উঁইয়ের ঢিবি, সাঁঝ লালিমায় যেন উড়বার মেলা বসে। উড়তে উড়তে ধুয়াষা আকাশে পাখি ঠোঁটে মরে। যেন সাঁঝ লালিমায় সাঁঝের আতস বাজি ফোটে।
=======


দিগন্তের পাড়ে


দিগন্তের পাড়ে, ঐ দেখা যায় রং এর আঁধারে চিত্র পট। যেন ধরতে ধরতে উদাস বুনে যায় পথিক। যেতে পথে দিগন্তে, পথ নাহি কমে। যত পথে হাঁটা ততই পথ আঁকে। দিগন্ত এক মরিচীকা পারাবার। নীল আকাশ ছুঁয়েছে তায়।


নিপুন অঙ্গ নিপুনতা মেখে সাজিয়েছে ঐ দিগন্তের পাড়। এ এক মোহ মায়া জন্মা জন্মান্তের। আগল খোলা আকাশ জানে। এ কোন নন্দন মোহ মায়া চোখ জুড়াইয়া যায়।
=======


বন বিথিকা


নিত্য কালে বন বিথিকা ঋতুর ভাঁজে ভাঁজে সাজে। কখনো নাঙা। কখনো সবুজ পত্র পল্লবে। আবার ফুলে ফুলে সারা। আবার ফলের গন্ধ ভাসে ঋতুর মর্মগুনে। মন মাতালো পলাশ শিমুল দক্ষিণা হাওয়া গায়। আগুন ঝরা পলাশ বনে, মন উদাস হয়।


বন বিথিকায়, ঝরা পাতার মর্ম বেদন; আঁধার রাতে জোনাক জ্বলে। জোছনা বিভাস একটু হলেও বন বিথিকায় স্বপ্ন বুনে। হাজার তারার রাত্রি যখন বন বিথিকার সিঁথান জুড়ে রুপো কাঁঠি।
========


বসন্ত যৌবন


রুপ রঙ রসের আগুন ঢালে, বসন্ত যৌবন। যে বীজে সুষ্ক প্রদাহ। তাহাতে জলের মৃক্তিকা মহা প্রলয় গুলে। আজ অঙ্কুরোদগম। সবুজ পাতায়, বাহারি মস্ত যৌবনা। অঙ্গে তার সৌরভ জোছনা ঝরে। কালে কালে এ রঙ যে যৌবনের।


বসন্ত বাউড়ি উঁকি দিয়ে গেল ঝোঁপের আঁড়ালে। কোকিলের কুহু কুহু ডাক মাতায় চারিদিক। আমের বোলের মৌ মৌ সৌরভ মৌমাছিদের মুধু ঘ্রাণে চঞ্চল উড়াউড়ি।
========


১৪২৩/০৪, ফাল্গুন/ বসন্তকাল।