[ আমার চোখে সরস্বতী ]


যে মেয়েটা পথের ধারে
একলা বসে আপন মনে
তাকায় শুধু মায়ের দিকে
কাজ ফুরাবে কতক্ষণে।
মাথার ওপর মস্ত বোঝা
কামিন মা তার ব্যস্ত কাজে
ঘাড় ঘুরিয়ে শুধায় শিশু
"মাগো এখন কটা বাজে?
অনেক তো কাজ সারা হল
আরও কত করবে বলো?
কত বার তো এলে গেলে
এবার তো মা ঘরকে চলো।"
ছোট্ট মেয়ে হিসেব রাখে
ক'বার মা তার এল গেল,
ধরাতলেই আঁক কেটে যায়
কাগজ কলম নাই বা হল।
পুঁথি কোথা কলম কোথা
কিম্বা পুরুত শেলেট খড়ি,
ধরার বুকেই আঁকিবুঁকি
এমনি করেই হাতেখড়ি।
সেই মেয়েটা হিসেব কষে
ঝাঁকিয়ে মাথা চুলের ঝুঁটি,
বিহান থেকে সাঁঝ গড়াল
কেনো মায়ের হয়না ছুটি!
দুপুরবেলা জিরেন ছিল
সূর্যি ছিল আকাশপাতে,
পেটের জ্বালা জুড়িয়েছিল
নুন লংকা পান্তা ভাতে।
কাজের বিরাম যদিও ছিল
ঘুম ছিলনা চারটি চোখে,
খুশিতে গা ভাসিয়েছিল
মা-বেটিতে মনের সুখে।
বিকাল বেয়ে সন্ধ্যা নামে
ঘড়ির কাঁটা জানায় ছুটি,
দিনের কাজেও যতি পড়ে
ঘরে ফেরার ছুটোছুটি।
চলার পথে জড়িয়ে গলা
জানায় মাকে ছোট্ট মেয়ে,
"দেখবে আমি বড় হয়েই
শহর যাবো তোমায় নিয়ে।"
মা-মেয়েতে গল্প কথায়
কুঁড়ের পথে এগিয়ে চলে,
পায়ে পায়ে পথ শেষ হয়
হাসি খুশি খেলার ছলে।
দিনের পরে দিন আসে যায়
জীবন কাটে এমনি করে,
সেই মেয়েটা পড়তে শেখে
মাটির বুকেই ধীরেধীরে।
বর্ণ চিনে পড়তে লিখতে
এগিয়ে চলে শেখার পালা,
বড় হবার স্বপ্নে কাটে
ছোট্ট মেয়ের মেয়েবেলা।
এমনি করেই বছর ঘোরে
জীবন চলে আপন খেয়ায়,
মায়ের বুকের আদর মেখে
মনের সুখে দিন কেটে যায়।
ছোট্ট মেয়ে কালের তালে
ডাগর হয়ে শহর যায়,
পড়াশোনায় বেড়ে ওঠে
উত্তরণের সোপান বায়।
মাটির সাথে বেড়ে উঠে
সেই মেয়ে আজ দ্বীপ্তিমতী,
সবার চোখে যাই হোক সে
আমার চোখে সরস্বতী।।


[কুয়েত, ১২ই ফেব্রুয়ারি ২০১৮]
©চিন্ময়