[আমার মাটি]


এ মাটির বুকে এতকাল বাস
কেউ তো বলেনি আগে
'এ মাটিতে তুমি আজ ভিনদেশী
আইনের দেশভাগে'।
মনে পড়ে যায় সেই ছেলেবেলা
মিলেমিশে পাঠশালে
একসাথে খাওয়া, ওঠা-বসা, পড়া
সব চলেছিল তালে।
আম্মা হারিয়ে সেই শিশুকালে
মনে নেই তার কথা
অথচ বুঝিনি সেই ছোট থেকে
আম্মা হারানো ব্যথা।
পাশের বাড়ীর নরেনের মা তো
ছিল বুকে আগলিয়ে
আজ তাকে যদি ছেড়ে যেতে বলো
কিভাবে বলবো গিয়ে!
কেউতো বলেনি 'গফুর তুমিতো
আমাদের কেউ নও'
তবে কেন মিছে জিদের বশেতে
দূরে ঠেলে দিয়ে যাও।
প্রতিবেশী আছে যারা এতকাল
ভাবেনি বিদেশী কেউ
পুজো-ঈদে মনে সুখ ছেয়ে গেছে
এসেছে খুশীর ঢেউ।
বিজয়া কিংবা ঈদে কোলাকুলি
মেতেছি তো দলে দলে
কখন তো কেউ প্রশ্ন করেনি
দেশী-ভিনদেশী তুলে।
আপদে বিপদে এগিয়েছি সাথে
মজি নি তো জাতপাতে
তবুও কি এ দেশে হব ভিনদেশী
রাজনীতি তরজাতে!
এখন তো শুনি আযানের ধ্বনি
গীতাপাঠ রামায়নী
একসাথে চলি হাতে রেখে হাত
তবু কেন হয়রানি!
কবিগুরু আর নজরুল বলো
হুমায়ূন শামসুর
তাদের লেখায় তাদের কথায়
একতার পাই সুর।
বাংলার যত খাল বিল নদী
তাই নিয়ে গান গাই
এসব নিয়েই আমার জগৎ
বাংলায় খুঁজে পাই।
এই মাঠ ঘাট এ-পথ আকাশ
আমার তো ছিল আগে
আজ তবে কেন বৈরিতা ব'লে
ভিনদেশী রূপে জাগে।
এক সে মাটিতে রোজ একভাবে
রবি আলো দিয়ে যায়
কখনও তো মনে প্রশ্ন জাগেনি
এ দেশ তারও কি নয়!
রমজানী আর কোজাগরী চাঁদ
একসাথে আলো দেয়
দেখেনা আমার কিবা নরেনের
নিকানো সে আঙিনায়।
গফুর কিংবা নরেনে চলেছে
এ-মাটিতে এতকাল
মাটি ঠিক জানে কার কোন দেশ
কোথা বা জন্মকাল।
আজ যদি বলো ছেড়ে চলে যেতে
কে দেখাবে বলো দিশা!
নাড়ির টানতো আর কিছু নেই
বাদ দিলে মাটি আশা।
যে মাটি আমায় ছোট থেকে চেনে
আরবার দেখো ভেবে
তার কাছে চাও ঠিকুজি আমার
সে মাটি প্রমাণ দেবে।


[দুবাই, ১৫ই ডিসেম্বর ২০১৯]
©চিন্ময়