[আশাতীত প্রাপ্তি]


আজ মনে পড়ছে
বারে বারে মনে পড়ছে
সেই রাত্রিটার কথা,
যখন তুমি অভাবিত বাক্যবাণে
আমাকে করেছিলে জর্জরিত,
রাশি রাশি ঘৃনা আর ক্রোধ
উগরে দিয়েছিলে আমারই উপর।
মিথ্যা আক্রোশে সুযোগ নিয়েছিলে
আমার তাৎক্ষণিক নীরবতার,
আমায় করেছিলে পর্যদুস্ত,
ঠিক যেমনটি দ্বৈরথ সমরে
অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত সৈনিক
প্রবল আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়ে
নিরস্ত্র সৈনিকের উপর
তার অসহায়তার সুযোগে।


আমি ছিলাম বাক্যহীন অসহায়,
চেয়েছিলাম তোমার করুণা,
ফাঁদে পড়া বাঘ যেভাবে তাকায়
ব্যাধের দিকে মুক্তির আশায়।
স্বীকার করি আমি অসহায় ছিলাম
তোমার ওই মধু মাখানো
তির্যক বাক্য ব্যূহ মাঝে,
যে ব্যূহ ভেদ করা ছিল অসাধ্য।
অবাক লাগছিল, ভাবছিলাম
শুধুমাত্র সন্দেহের বশে
নির্বিচারে কেমন করে তুমি
দোষারোপ করছিলে আমায়।


একবারও ভাবনি আমার কথা
ভাবনি কোথায় আমার দোষ,
কি আমার অপরাধ,
কেন আমি নীরব।
আত্মপক্ষ সমর্থনে কিছু বলার
কোনো সুযোগই দাওনি সেদিন,
মিথ্যা ভিত এর উপর দাঁড়িয়ে
অন্যের কথায় প্রভাবিত হয়ে
চালিয়েছিলে মানসিক নির্যাতন।
একবার ও ভেবে দেখলে না
যে ভিত এর উপর দাঁড়িয়ে
তোমার এই ক্রোধ, এই আক্রোশ
আমাদের অমূল্য সম্পর্কের মাঝে
তার মূল্য কতখানি।


জানি, সে অবকাশ তুমি পাওনি
পাওনি আমায় বোঝার মানসিকতা,
শুধুই হঠকারীর মত মিথ্যা সন্দেহে
বিভ্রান্তি আর মিথ্যা প্ররোচনায়
আমাকে করেছিলে নাস্তানাবুদ।
একটু তলিয়ে দেখলে হয়ে যেত
সন্দেহের অবসান, উঠত না প্রশ্ন,
থাকতনা ক্ষোভ, হত না বিবাদ।
তোমার আমার মধুর সম্পর্কে
পড়ত না কোনো কালির ছাপ,
আমাকে লাভ করতে হত না
অবিশ্বাসী, মিথ্যাবাদী আর
প্রতারক-এর চরম তকমা।


আজ বুঝেছি এটাই স্বাভাবিক,
এই দুনিয়াতে এটাই দস্তুর।
এখানে চরম সত্যবাদিকে
পরতে হয় নির্মম ফাঁসির দড়ি,
যুগপুরুষকেও ক্রূশবিদ্ধ করে
পরানো হয় কাঁটার মুকুট।
সত্যের কোনো স্থান নেই
নেই কোনো সততা
আছে শুধু মিথ্যা আর মায়া।
আমি দুখী নই অবিশ্বাসী অপবাদে,
মিথ্যাবাদী আর প্রতারকের তকমায়।
এ জগতে এসব মোটেই বিচিত্র নয়,
দুর্লভ নয় আজকের সমাজে।


স্বীকার করি এ তকমা তোমার কাছে পাওয়া
একান্তভাবে আমার আশাতীত প্রাপ্তি।


[চামরাইল, হাওড়া, ১৯৮৬]
©চিন্ময়
বিঃদ্রঃ - ১৯৮৬ সালে লেখা কবিতাটা হঠাৎই হাতে এসে গেল। প্রকাশের লোভ সামলানো গেল না।