[ অদ্ভুতুড়ে ]
নীলগঞ্জে নীল চাষ নেই
নেই নীলকর বাস,
নেই তিতুমীর বাঁশের কেল্লা
আজ সব ইতিহাস।
নেপালগঞ্জে সকাল হলেই
জ্যান্ত মাছের হাট,
বিরাট বড় মাছের আড়ত
বাড়ন্ত ঠাট-বাট।
কিষানগঞ্জে এখনও বেঁচে
কামতাপুরী ভাষা,
আঞ্চলিক এই ভাষা রক্ষার
আশায় মরে চাষা।
রায়গঞ্জের পক্ষীনিবাস
কুলিক নামে খ্যাত,
শামুকখোলের বসত ভূমি
কুলিক তীরেই রত।
দরিয়াগঞ্জে গেলেই পাবে
বই প্রকাশক যত,
পথ দুপাশে সারি দিয়েই
বইয়ের দোকান কত।
রাজগঞ্জে গবাদি প্রানীর
জমে হাটের মেলা,
প্রশাসনকে লুকিয়ে চলে
বেচাকেনার পালা।
বক্সীগঞ্জে হাট জমে যায়
বাড়ে যতই বেলা,
পদ্মাপারের হাটের স্মৃতি
মনে পড়ে ছেলেবেলা।
নবীগঞ্জের দৈত্য দানোর
নেইতো কোনো খোঁজ,
শীর্ষেন্দুর লেখায় আজও
মেলে তারই খোঁজ।
পাহাড়গঞ্জে নেইতো পাহাড়
আছে আঁধার গলি,
ভারতবর্ষের আমস্টারডাম
এইটাই মেনে চলি।।
[কুয়েত, ১১ই সেপ্টেম্বর ২০১৯]
©চিন্ময়
পাদটীকাঃ
নীলগঞ্জঃ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতা নিকটবর্তী বারাসাতের কাছেই এর অবস্থান। জায়গাটা নীলগঞ্জ বারাসাত নামেও পরিচিত। জায়গাটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তিতুমীরের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল হয়ে আছে।
নেপালগঞ্জঃ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ কোলকাতার একটি জনপ্রিয় এলাকা। কবরডাঙার অনতিদূরে এর অবস্থান। এখানকার জ্যান্ত মাছের হাট খুবই বিখ্যাত। দক্ষিণ কোলকাতার সবচেয়ে বড় জ্যান্ত মাছের আড়ত এটি।
কিষানগঞ্জঃ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সংলগ্ন উত্তর বিহারের একটি জায়গা। মূলত রঘুবংশী সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। এদের ভাষা কামতাপুরী বা রংপুরী একটি স্বতন্ত্র আঞ্চলিক ভাষা। এই ভাষার স্বীকৃতির জন্য এদের লড়াই দীর্ঘদিনের।
রায়গঞ্জঃ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর দিনাজপুর জেলার একটি শহর ও পৌরসভা এলাকা। এটি উত্তর দিনাজপুর জেলার সদর দপ্তর। এটি ২০০ বছর বয়সী প্রাচীন এক শহর। রায়গঞ্জ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য কুলিক পক্ষীনিবাস নামে পরিচিত। এটি এশিয়ার বৃহত্তম পাখি অভয়ারণ্য।
দরিয়াগঞ্জঃ ভারতের পুরানো দিল্লীর অঞ্চল। এই অঞ্চলে দিল্লীর প্রকাশনালয় গুলো আছে। প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা ফুটপাত জুড়ে ছড়ানো বইবাজার। পুরনো দিল্লির এই বিখ্যাত বইবাজার বসে শুধু রবিবার সকালে। এই বইবাজারে মূলত পুরনো বই ও পত্রপত্রিকাই কিনতে পাওয়া যায়।
রাজগঞ্জঃ ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার একটি বিধানসভা কেন্দ্র এটি। রাজগঞ্জ গোরুহাটের জন্যে বিখ্যাত। এখানে গবাদিপশুর কেনাবেচার হাট খুবই প্রসিদ্ধ। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এখানে গবাদিপশুর কেনাবেচা জোরদার ভাবে চলে।
বক্সীগঞ্জঃ ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জামালপুর জেলার উপজেলা ও একটি প্রশাসনিক এলাকা এটি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় এটির উল্লেখ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের শেষ সীমান্তে, নয়নাভিরাম গাছ-গাছালী ও চির সবুজ ঘন বনের গা ঘেঁষে গারো পাহাড়ের পাদদেশে বক্সীগঞ্জ অবস্থিত।
নবীগঞ্জঃ প্রাক-স্বাধীনতা কালে ভারতের আসামের একটি অংশ ছিল এই নবীগঞ্জ। পরবর্তীতে বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার উপজেলা হিসাবে পরিচিতি পায়। বিশিষ্ট সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর নবীগঞ্জের দৈত্য বইতে নবীগঞ্জের উল্লেখ পাওয়া যায়।
পাহাড়গঞ্জঃ ভারতের নিউ দিল্লি রেলস্টেশনের অনতিদূরে অবস্থিত অঞ্চল এটি। পাহাড়গঞ্জ পুরোনো দিল্লীর ঐতিহ্য বহন করে চলেছে আজও। দিল্লির পাহাড়গঞ্জকে ভারতবর্ষের আমস্টারডাম বলা হয়। প্রধানত সস্তায় রাত কাটাবার প্রচুর হোটেল থাকায় পর্যটকদের কাছে এটি খুব জনপ্রিয়।