[ অপরূপা তাক্তসাং ]


পাহাড়ের অবিন্যস্ত পাকদণ্ডী
আর অজস্র খাড়াই পেরিয়ে
যাত্রা শুরু তাক্তসাং এর পথে।
জঙ্গলের পাখ-পাখালির ডাক
ঘামে ভেজা শরীর আর
যাত্রাপথের ক্লান্তি সঙ্গে নিয়ে
এ যেন এক অজানার উদ্দেশে
স্থির লক্ষ্যে এগিয়ে চলা।


ঝরনার কল-কল শব্দে
থমকে দাঁড়াই কিছুক্ষণ—
নয়ন ভরে উপভোগ করি
তার অপার সৌন্দর্য,
উপর থেকে নিচে পড়ে
সর্পিল পথে ধরে
নিরন্তর তার বয়ে চলা।


ছোট্ট একটু বিরতিতে
মনের গহীনে ছবি এঁকে নিই
এই ছায়াঘন অরণ্যের,
এর পর শুরু হয়
আবারও এগিয়ে চলা।
চলতে চলতে এক সময়
ঝরনার শব্দ বাতাসে মিশে যায়,
এক অনাবিল সুখের আবেশে
হারিয়ে যাই নিজের মাঝে।


চমক ভাঙ্গে আচমকা
আপন গতিতে ছুটে যাওয়া
পথভ্রষ্ট ঘোড়ার ডাকে।
চকিতে নিজেকে সামলিয়ে
আবার শুরু এগিয়ে চলা
ধীর পদক্ষেপে উপরের দিকে—


হঠাৎই সমস্ত শব্দ মিলিয়ে গিয়ে
নেমে আসে অসীম শূন্যতা,
নিঃশ্বাস প্রশ্বাস এর শব্দে
নিজের অস্ত্বিতের টের পাই—
বুকের মাঝে ধক ধক শব্দ
জানান দেয় প্রাণের উপস্থিতি।
এ যেন এক অনন্ত যাত্রা
পাকদণ্ডীর পর পাকদণ্ডী বেয়ে
কেবলই উপরে চলা।
মাঝে মাঝে যাত্রার বিরতি
আর বুকে বিশুদ্ধ বাতাস ভরে
পরের ধাপ পেরোনার প্রস্তুতি।


স্থির লক্ষ্যে কেবলই এগিয়ে চলা
মাঝে মধ্যেই অনভিপ্রেত যাত্রাভঙ্গ
পথ ছাড়তে হয় ঘোড়ার পালের
নিচে নামার পালায়।
পাকদণ্ডীর পথ-রেখার পাশে সরে
ক্ষনিকের বিরতি মাত্র,
ঘোড়ার পাল নেমে গেলে
আবার শুরু চলা—


পূন্যলোভাতুর মানব মানবীর
যাত্রা পথের সঙ্গী পথের সারমেয়,
নিঃশব্দ তাদের অনুসরণ
একদল থেকে আরেক দলে।
চলতে চলতে এসে পৌঁছাই
পাহাড়ের এক সমতল ভূমিতে,
যেখান উন্মুক্ত পাহাড়ের কোলে
মাথা তুলে দাঁড়িয়ে
অষ্টম শতাব্দীর সেই
অভূতপূর্ব স্থাপত্য শৈলী,
মানবের অপূর্ব সৃষ্টি
অপরূপা তাক্তসাং...


[ভুটান, ১৮ই অক্টোবর ২০১৫]
©চিন্ময়


বিঃদ্রঃ ভুটান এর পারোর তাক্তসাং মনাস্ট্রি কে নিয়ে লেখা