[ বৃদ্ধ শিরীষ ]


রাস্তা তো নয় বন বীথিকা সবুজের সমাহার
দুপাশে তার বৃদ্ধ শিরীষ দাঁড়িয়ে সারে সার।
পথ চলতি পথিক পেত স্নেহের পরশ তাতে
ছাতার মত দাঁড়িয়ে ছিল গ্রীষ্ম কি বরষাতে।
ঋতুর সাথে মানিয়ে নিজে উঠত ফুলে ভরে
অপূর্ব এক শোভার বলয় রাখত তারে ঘিরে।
প্রখর রোদে একটু আরাম খুঁজত পথচারী
বর্ষাতে বর্ষাতি বিনায় ছিল এ দরকারী।
মানব ত্রাতা ছিল শিরীষ পরিবেশের সাথী
সারা বছর পাখপাখালির ছিল সমব্যথী।
মনের সুখে থাকত তারা বৃদ্ধ শিরীষ শাখে
শিরীষ ছিল বন্ধু সবার আঁকড়ে ধরে রাখে।
ভরা বাদলা ঝড় ঝাপটা কিছুতে নেই ডর
শিরীষ কুলই ছিল ত্রাতা আপন সবাই তার।
রুক্ষ বেলায় ক্লান্ত পথিক বসে তাদের তলে
দুএক দণ্ড জিরিয়ে নিত গঞ্জে ফেরার কালে।
ছায়ায় ঢাকা শিরীষ খুড়োর এই ছিল কপালে
শেষ বয়সে পড়ল তারা দুষ্টু লোকের জালে।
কেউ দেখেনা গোড়ায় কারা রাসায়নিক ঢালে
শিরীষ বুড়ো দুর্বল হয় পাজি লোকের চালে।
চলতে থাকে হত্যালীলা আড়ালে আবডালে
কেউ জানেনা কারা ঘটায় রাত্রি গভীর হলে।
দিনের পরে দিন চলে যায় আহার নাহি মেলে
জল বিহনে বিষ পানেতে শরীর না আর চলে।
শীর্ণ কায়া অবশ দেহ ঝিমিয়ে শিরীষ পড়ে
স্বাস্থ্য ঢলে শরীর ভাঙে একটু হালকা ঝড়ে।
বৃদ্ধ শিরীষ ভাবতে থাকে এটাই বিধি লিখন
মানব সেবায় নিয়োজিত প্রাণে এইটাই প্রতিদান।
পথের দুপাশে পড়ে আছে আজ মৃত শিরীষের সারি
অবাক জনতা হাজার সেলাম তোমারে বুঝতে নারি।


পথের দুধারে সারি সারি শুধু শুকনো শিরীষ গাছ
মুখেই বড়াই সবুজ ফেরাও লাগাও চারা গাছ।
নেই কোনো হুঁশ প্রশাসনের কেমন করে হয়
হয়তো-বা সব জেনে বুঝেই চুপটি করে রয়।


[দুবাই, ৫ই আগস্ট ২০১৯]
©চিন্ময়