[ইতি তোরই মা]


অবশেষে লিখছি তোকে অনেক বছর পরে
ভাবিস না তুই, ভালোই আছি নিজের মত করে।
সোনালী দিন পার করেছি নেইতো নতুন আশা
এখন শুধুই সময় গোনা কালের স্রোতে ভাসা।
সময় সাথে বাড়ছে বয়েস শরীর যাচ্ছে ঝরে
পার করছি দিনগুলো সব স্মৃতি সম্বল করে।


অনেক সময় পেরিয়ে গেল কয়েক দশক হবে
দিন গুনে গুনে আছি বেঁচে আজও এই ভ'বে।
লিখতে বসে ভুল হয়ে যায় একলা আঁধার ঘরে
স্মৃতির মধ্যে ভিড় করে সব কলমনা আর সরে।
তোর বাবাকে হারিয়ে ছিলাম তুই পাঁচ ছুঁই ছুঁই
সংসারেতে আশার কিরণ ছিলিস শুধুই তুই।
আজ একলা স্মরণ আসে তোরই ছেলেবেলা
কাটতো সময় তোকে নিয়ে বয়েই যেত বেলা।
আমার যত সখ আহ্লাদ সবটা তোকে ঘিরে
ভাবার সময় ছিলনাতো নিজের দিকে ফিরে।


এইতো সেদিন মনে পড়ে স্কুলে ছুটির পরে
হঠাৎ করে শরীর খারাপ ভুগলি বেদম জ্বরে।
তিন-তিন দিন বেহুঁশ ছিল তোকেই কোলে তুলে
জগৎ ছেড়ে ব্যস্ত ছিলাম নাওয়া-খাওয়া ভুলে।
তোকে নিয়েই উৎকণ্ঠায় আমি পাগলপারা
জলপটি দিই বদ্যি ডাকি একেবারে দিশেহারা।
শেষে যখন চোখ মেললি কাটিয়ে জ্বরের ঘোর
জড়িয়ে খুবই কেঁদেছিলাম বুক ভাসিয়ে তোর।
আমি কাঁদায় তোরও মনে বিষাদ গেল ছেয়ে
দুয়ের চোখেই অশ্রু নদী নামল কপোল বেয়ে।
বলেছিলিস 'আমিতো আছি চিন্তা কিসের মা'
তোমার কাছে থাকবো আমি কোথাও যাবো না।
থাকবে তুমি আমার সাথে ছাড়বো না তোমাকে
তোমার ছায়ায় বড় হয়ে দেখবো জগৎটাকে।


সেই কথাটা আজও বাজে আমার প্রাণে ওরে
সকাল সাঁঝে থাকি যখন তোর চিন্তার ঘোরে।
আদর করি আজও তোকে একলা নিজ মনে
তুই তো হলি জগৎ আমার বল ভুলি কেমনে।
তুই তো আমার সোনার সোনা স্বপ্ন দিয়ে আঁকা
তোকে ছাড়া আঁধার সবই জীবন আমার ফাঁকা।
আগলে ছিলাম বুকে তোকে তুইতো ছিলি প্রাণ
তোকে ছাড়া এই অভাগীর সবকিছু আজ ম্লান।
বাড়তে বাড়তে অনেক বড় তুই যে হয়ে গেলি
মা'য়ের কথা ভাবার সময় বেবাক ভুলে গেলি।


প্রশ্ন জাগে মনে আমার খোকন সোনা ওরে
খুঁজিস কি তুই আজও মা'কে রাতে ঘুমের ঘোরে?
ছেলেবেলার কথা কি তোর কিছুই মনে পড়ে?
এখনও কি ভয়েই মরিস গভীর রাতের ঝড়ে?
দুঃস্বপ্নে ঘুম ভেঙে তুই মা'য়ের কাথা ভাবিস?
ঘুম ভেঙে কি মধ্যরাতে আজও মা'কে খুঁজিস।
সবকিছু আজ এলোমেলো স্মৃতি ধূলায় ঢাকে
থাকলে জবাব পাঠাস বাবু দূর-প্রবাসের ডাকে।
মনের কথা লিখে তোকে পাঠালাম এই খামে
রইল আশীষ মায়ের স্নেহ ভালোবাসার নামে।
আসছে দ্রুত শেষের সময় এবারে যাক থামা
চিরজীবন সুখেই থাকিস, ইতি — তোরই মা।


[দুবাই এ্যায়ারপোর্ট, ৫ই মার্চ, ২০২০]
©চিন্ময়