[ গ্রাম ]


ধূ-ধূ করে মাঠ         মেঠো পথঘাট
          এই গ্রাম তারি মাঝে,
ছায়া সুনিবিড়          ছোট ছোট নীড়
          হেথা হোথা বিরাজে।
উঁচু তালগাছ          করিছে বিরাজ
          সারি সারি গ্রাম ঘিরে,
সদা সমীরণ           বহে অনুক্ষণ
          স্নিগ্ধ কোমল সুরে।
সমীরণ বয়            ডালপালা তায়
          হেলেদুলে যেন খেলে,
আকাশের কোলে      ছন্দে ও তালে
          মেঘেরাও উড়ে চলে।
গ্রাম মাঝে সেথা       দেখি বসে হেথা
          শ্রান্ত ক্লান্ত দেহে,
আদিবাসী বলা         মাজিতেছে থালা
          কত না পরম স্নেহে।
দুপুরের পরে           খেটে ফিরে ঘরে
          দিবানিদ কেহ সারে,
উলঙ্গ খোকা            খেলা করে একা
          আনমনে ধুলি পরে।
মেলে দিয়ে দেহ        হুঁকো টানে কেহ
          মেটে আঙিনার পরে,
গৃহবধু কোনো           কেশ বাঁধে যেন
          অবহেলে অনাদরে।
বেলা পড়ে যায়          রবি ডুবে যায়
          ধীরে ধীরে নাম রাতি,
তালগাছ ঘিরে           দেখা যায় দুরে
          সন্ধ্যা তারার দ্যুতি।
দ্বীপ নিভে যায়           এই ছোট গাঁয়
          পুরিলে প্রথম যাম,
নীরবতা নামে            ঝিঁঝিঁ ডাক থামে
          আঁধারে লুকায় গ্রাম।


[কোন্ডাপল্লী, অন্ধ্রপ্রদেশ ১৯৮৭]
©চিন্ময়


বিঃদ্রঃ — সালটা ১৯৮৭, কর্মসূত্রে তখন অন্ধ্রপ্রদেশের ছোট্ট একটি আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম কোন্ডাপল্লীতে কর্মরত। বিজয়ওয়াড়া শহর থেকে প্রায় ২৩ কিমি দূরের প্রত্যন্ত গ্রাম। শহুরে সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন। গুটিকয়েক আদিবাসী পরিবার নিয়ে গড়া সেই গ্রাম। কৃষিকাজই মূলত জীবিকা ছিল ওদের, তবে ওই জায়গায় নতুন এলপিজি বটলিং প্ল্যান্ট তৈরি হবার সুবাদে অনেক গ্রামবাসীই রেজা-কুলির কাজে যোগ দিয়েছিল এবং আশেপাশের গ্রাম থেকেও রুজির খোঁজে এসে এই গ্রামে অস্থায়ী ঠিকানা গেড়েছিল বহু মানুষ। সৌভাগ্যক্রমে কাজের ফাঁকে গ্রামের মানুষ জনের সাথে মেলামেশার সুযোগ হয়েছিল এবং তাদের জীবনযাত্রার সাথে পরিচিতি ঘটেছিল। সেই গ্রাম ও গ্রামবাসীর জীবন যাত্রা নিয়ে এই কবিতাটা লেখা এবং কোন্ডাপল্লীর সেই গ্রামবাসীদের উৎসর্গ করা।