[ জীবাশ্ম ]


বিবর্তনের ধারায় প্রকৃতির মাঝে
বেঁচে থাকার লড়াই এ
আজ আমরা পরাভূত,
প্রস্তরীভূত শিলার মাঝে।


পঞ্চাশ লক্ষ বছর আগেকার কথা...
আমাদের আবির্ভাব ঘটেছিল
এই পৃথিবীর বুকে,
এরপর...
এরপর কেটে গেছে
হাজার হাজার বছর...
বিবর্তনের সাথে পাল্লা দিয়ে
সময় কে পিছনে ফেলে
এগিয়ে গিয়েছি আমরা...
আমরা ম্যামথ।


পৃথিবী সৃষ্টির আদি কাল থেকে
সময় যত এগিয়েছে
আমরাও ছাড়িয়ে পড়েছি
দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে,
এক মহাদেশ থেকে
অন্য আর এক মহাদেশে।
আমাদের বিশালাকৃতি বপু নিয়ে
দাপিয়ে বেড়িয়েছি আমরা
জঙ্গল থেকে জঙ্গলে,
পাহাড় থেকে সমতলে।
প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা সহ্য করেছি
যুগের পর যুগ ধরে,
সময়ের তালে তাল মিলিয়ে
তিলে তিলে পরিবর্তিত করেছি
আমরা নিজেদের...
মানিয়ে নিতে শিখেছি
প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা
আর সহ্য করতে শিখেছি
চরম আবহাওয়াকে।
মনোরম নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া ভুলে
তুষারাবৃত মেরুপ্রদেশেও
বেঁচে থেকেছি আমরা
উলি ম্যামথ নামে...
সেটাও চারশ হাজার বছরের কথা।


জীবন যুদ্ধে সহজে হার মানিনি আমরা,
প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে
আমরা আছি...
আমাদের অনেক পরে
যারা এই পৃথিবীতে এলো
সেইসব গুহামানব,
তাদের সাথেও লড়াই করেছি
জীবন সংগ্রামে আমাদের
অস্তিত্ব বজায় রাখতে।
জঙ্গলের রাজত্বে টিকে থাকার লড়াই-এ
ধীরে ধীরে হার মেনেছি
শক্তিতে কম অথচ বুদ্ধিতে বলবান
ওই প্রাচীন মানবের কাছে।
তবুও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাইনি আমরা
ছাড়িয়ে পড়েছি দুর্গম মেরুপ্রদেশে,
বেঁচে থাকার তাগিদে।
অবশেষে গুহামানব আর প্রকৃতির রোষে
আমরা ক্রমে চলে যেতে থাকলাম
অবলুপ্তির পথে,
একসময় বিলুপ্ত হয়ে গেলাম
এই সুন্দর পৃথিবী থেকে।


আমাদের স্থান এখন সুপ্রাচীন গুহাচিত্রে
অথবা অনাবিস্কৃত থাকা
কোনও শিলার মাঝে,
নয়তোবা মেরুপ্রদেশে জমে থাকা
জমাট কঠিন বরফের মাঝে।
কখনওবা নদীগর্ভ থেকে আবিষ্কৃত হয়ে
লোকালয়ের সুদৃশ্য জাদুঘরে
জীবাশ্ম হয়ে আমাদের অস্তিত্বের
জানান দিচ্ছি আমরা।


বর্তমান সভ্য মানবের কল্যাণে
আজও হারিয়ে যাইনি আমরা
পৃথিবীর ইতিহাস থেকে...
মুষ্টিমেয় কিছু বিজ্ঞান মনস্ক
মানবের কল্যাণে
হয়তোবা কোনদিন ক্লোন হয়ে
আবারও ফিরে আসতে পারি
এই সুজলা সুফলা ধরিত্রীর বুকে।


[আবুধাবি, মে ২০১৬]
©চিন্ময়