বৃষ্টিতে ভিজছে চাটগাঁ, আর আমি হেঁটে চলছি বৈরী ফুটপাথ ধরে,
হাতল ভাঙ্গা ছাতা নিয়ে।
বৃষ্টি নামে আবার বৃষ্টি থামে, তারপর মনে মনে কথা বলা, হাঁটার সাথে হাতেহাত রাখি
অদৃশ্য তোমার সাথে।
কতদিন হল তোমার হাত ধরেছিলাম?
যদি আবার তোমার সাথে কথা হতো এই রাজপথে,
তবে বুকফুলিয়ে বলতাম আসল প্রেম চিরকালই আবছা থেকে যায়।
এ যেমন, এই শহর এতো কিছুর পরও আমাকে ভালবাসে,
এই শহরের ভাঙ্গা ফুটপাথ, বর্জ্য আমাকে কখনও আছড়ে ফেলেনি
ম্যানহলের ভিতর অথবা নরপিশাচ ট্রাক, বাস অথবা জাপানী
গাড়ীর ভিতর কিম্ভূতকিমাকার জাপানী পুতুলগণ
আমাকে কখনও ছিটকে দেয়নি জীর্ণ ফুটপাথের ওপর।
বরং আমি হেঁটে হেঁটে এই শহরের অতীতের কথা ভেবেছি,
স্কুল জীবনের উচ্ছল দিনগুলোর কথা ভেবেছি,
ভেবেছি নবম শ্রেণীর এক বিস্মিত বালকের কথা,
যার হাতে ছিল সুকান্তের ছাড়পত্র আর স্বপ্নে লাল পতাকা।


বৃষ্টিতে ভিজছে চাটগাঁ, আর আমি অনবরত সাঁতরিয়ে বেড়াচ্ছি
বাস্তবতার আনাচে কানাচে।
মাস ঘুরেই জঞ্জাল, মানুষের কটূক্তি, বন্ধুত্বের আর্তনাদ।
যদিও আমি ওসবকে টেলিফোন-তারে আড়িপেতে থাকা
কিছু কাকের তরতাজা উচ্ছিষ্ট বলে বরণ করেছি।


বৃষ্টিতে ভিজছে চাটগাঁ, আর আমি হেঁটে চলছি দুঃখের ফুটপাথ ধরে
অথচ দুঃখও থেমে যায় কিছুদূর হাঁটার পরে,
আমাদের এই হাঁটাহাঁটির মেলায় পায়েরতলায় কিছু সুখ জাগাই,
যার ফলশ্রুতিতে আবার গভীর ঘুমে ঢলে পড়ি নিঃসঙ্গ বেডরুমে
ঝকঝকে এলডি-বাতির মায়ায়।

বৃষ্টিতে ভিজছে চাটগাঁ, আর আমি স্বপ্ন নিয়ে বসে আছি,
ভাবতে থাকি কবেকার কথা, বছর উনিশ-কুড়ি
অথবা ত্রিশবছর আগের কথা।
হেঁটে হেঁটে কতো যে মেরে এসেছি বাসি খবরের কাগজ,
অবিনশ্বর পলিথিন, আরও সংখ্যাতীত মলের ফসিল।


বৃষ্টিতে ভিজছে চাটগাঁ, আর আমি হেঁটে বেড়ায় সময়ের ভিতর
চতুর বিড়ালীর নিষ্কলঙ্কময় সাদা চাদর গায়ে।