যেথায় থাকি না কেন ভুলে, একদিন  ফিরতে
হবেই  মোরে ঐ সেই শিকড়ের মুলে। ধর্ম, বর্ণ,
জাতপাত, যেথায় কাটুক না রাত, মিলেমিশে
দিতে হবে একদিন সাথ। জীবের ধর্ম - করে
কর্ম নিজে বাঁচে অপরকেও বাঁচায়। ধর্ম নয়
অন্যের মত আর তার নির্দেশিত পথ। ঐ মত,
পথ, ভালো হতে পারে জীবন জীবিকার তরে।
অন্যের বিশ্বাস দিতে পারে আশ্বাস তাহাতো ধর্ম
নয়। আদি যুগ হতে, জগতের বস্তুতে রয়েছে
প্রমাণিত সত্য, বস্তুর ক্রিয়াকর্ম, বলি তারে ধর্ম।
জলের ধর্ম শীতল করা, আগুনের ধর্ম দহন করা,
আর মানুষের ধর্ম মানবতা; নাই যার অন্যথা। সবই
তাহা প্রকৃতিগত, সতস্ফুর্ত। যাকে মোরা ধর্ম বলি
যেমন হিন্দু-বৌদ্ধ, মুসলিম খৃষ্টান, ইহুদি, পার্শী, জৈন,
সবই কিছু মানুষের বিশ্বাস আর মত। সনাতন যাহা
চিরন্তন করে না বিভাজন। গুণে হয় গুণময়, প্রয়োগে
থাকেনা তো ভয়, সকলেই তাহা আপন ভেবে মেনে লয়।
যাকে বলি আদি সত্য ধর্ম। পরে মুনি ঋষি দেখায়েছে দিশি
আপন মতে, বুদ্ধ, যীশু, হযরত মুহাম্মদ, আরও কত
শত মতে, মোরা চলি সেই পথে। তাহা তো ধর্ম নয়, ও যে
উপদেশ বাণী, কেউ জানি, কেউ শুনি; তাহাকে কেমন করে
ধর্ম বলে মানি? ধর্ম হৃদয়ের ধন যাহাতে স্ফুরিত প্রাণ, কোন
বাঁধা মানে না; এ যে চরিত্রের গুন, তাহা ছাড়া কিছু জানেনা। স্বতঃস্ফূর্ত ধর্ম প্রস্ফুটিত সতত বিকাশিত সূর্যের আলোর মত। থাকেনা কোন দ্বিধা দ্বন্দ্ব জীব ও জীবনে এমনি ছন্দ। চোরের
ধর্ম চুরি করা, বলি না তাহারে মত; সাত্ত্বিক, সাধু, পর-ধনে দৃষ্টি দেয় না ধর্মে সে যে বড় সৎ।


সনাতন ধর্ম, সনাতন বিশ্বাস প্রকৃতিকে দেখে শেখা, এ
যে অক্ষয়, অব্যয়, আদি থেকে জীবের দেখা। মানুষের
ধর্ম মনুষ্যত্ব আর মানবতা, জীবের ধর্ম জন্ম নেওয়া
আর একদিন মরে যাওয়া হেথায়, নাই কোন ব্যস্ততা।


বৌদ্ধ মতবাদের প্রবর্তক বুদ্ধের জন্ম, খ্রিষ্টীয় মতবাদের
প্রবক্তা  যীশুর জন্মের ৬২৩ বছর পূর্বে আবার মুসলিম
মতবাদের প্রবর্তক হযরত মোহাম্মদের জন্ম যীশুর জন্মের
৬৩২ বছর পর। এক ঈশ্বরবাদ ইহুদি মতবাদ চার হাজার
বছরের প্রাচীণ মতবাদ। সনাতন মতবাদ মোরা যারে জানি, তাহা তো প্রকৃতিনির্ভর বলে মানি। হিন্দু মতবাদের প্রবর্তক ছিল নাতো কেউ; হিন্দুকুশ পর্বত কিংবা সিন্ধু নদের বুঝি লেগেছিল ঢেউ। ইহুদি ও হিন্দু মতবাদ প্রাচীনতম বলে সবাই জানে, তবে আজ থেকে চার হাজার কিংবা পাঁচ হাজার বছর আগে প্রকৃতি নির্ভর সনাতন ছাড়া আর কোন মতবাদ মানুষ নেয় নাই মেনে। ইহুদি, বৌদ্ধ, পার্শী, হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান,  সবই মানুষেরই সৃষ্ট মতবাদ বা নির্দেশিত পথ। মত, পথ, যদি ধর্ম হয় তবে গুন, ক্রিয়া কি?


সতীদাহ প্রথা, বাল্যবিবাহ, নারী শিক্ষার বিরোধিতা, তাহাও
কি শিখায়েছে ধর্মের বিধাতা? প্রদেশ হিমাচলে- দ্রৌপদী প্রথা,
দক্ষিণ ভারতে ভাগ্নিকে বিয়ে করা বলে ওরা পুন্যের কাজ,
চাচা আপন চাচি পর চাচার মেয়ে বিয়ে কর, এগুলো সবই সংস্কার। ঘটেছিল কোথা হতে জানিনা আমরা কেউ, অঞ্চল
ভিত্তিক তাহাই আজ ধর্মের ঢেউ। যদি বলি অতীতের,কোন প্রভাবশালী মিটাতে কামনা, মিটাতে বাসনা, প্রচলন করেছিল
শক্তির জোরে, অর্থের জোরে, এই মানব সমাজে। তাহাও কি মেনে নেব ধর্ম বলে? ভাল মন্দের বিচার হবে নাকি কোন কালে?
আচার-আচরণ, সংস্কার সংস্করণ, জেনে বিশ্বের ধরন, মেনে
নিতে হবে প্রকৃত সত্য রে।


তাই আজ মনে হয়, আমি দাঁড়ায়ে কোথায়? চার হাজার, পাঁচ
হাজার বছর পূর্বে যখন ছিল না ধর্ম, আমার পূর্বপুরুষ করিত
না কি কোন কর্ম? ছিল না তারা ধর্মের নাগপাশে বাঁধা। তাঁদের
সাধনা, তাঁদের সততা এনেছে টেনে আমাদের এই বিজ্ঞান
মনোস্কতা। বুদ্ধি দিয়েছে, জ্ঞান দিয়েছে, দিয়েছে বিচার ক্ষমতা,
মানুষ এক অভিন্ন নাই কোন ভেদাভেদ বুঝে নিক আজ জনতা।


জানিতে ইচ্ছা হয় আমার পরিচয়, আমি কি হিন্দু না মুসলিম,
ইহুদি না খিষ্টান, বৌদ্ধ না পার্শী, কোন পূর্বপুরুষের বংশধর?
একা একা বসে নিরবে তাকাই নীল আকাশের পানে পাইনা
কোন উত্তর। কঠিন জটিল ভাবনা আসে তাই, নিজের এখন
কি পরিচয় দেই? ভারত ভূখণ্ড বিভিন্ন সময়ে ওই বেদুইনরা
এসেছে বাইরের ভিন্ন অঞ্চল থেকে, এসে হেথা শেষে তাঁরা
ঘর বেঁধেছি মিলেমিশে পরস্পরকে ভালোবেসে। ছিলনা বিভেদ ছিল না ধর্ম, শুধুই মনে ছিল জীবন-জীবিকা কর্ম। তারা ছিল
শুধু মানুষ, নিয়ে মানহুস, বুঝি এই তাদের পরিচয়। আমরা সবাই
তাঁদের বংশধর। দেখো চেয়ে প্রমাণ ওরে হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, কেন ভাগ করো নিজেরে? আপন কে লও বুকে
জড়ায়ে। মোদের পরিচয় জন্মাই মোরা মায়ের গর্ভে, মৃত্যুতে মিশি মাটির স্বর্গে। নেহেরু, ফারুক আবদুল্লার পূর্বপুরুষ ছিল একই, কথিত প্রচলিত ভূ ভারতে। জিন্নাহর পূর্বপুরুষ ছিল
গুজরাটি কথিত হিন্দু মৎস্যজীবী। ব্যক্তি হিংসা-দ্বেষ সমাজ
বুকে বয়ে চলে তার রেশ।


৩রা আষাঢ়, ১৪২৭,
ইং ১৬/০৬/২০২০,
মঙ্গলবার বেলা ১০টা।