আমরা ভয় পাচ্ছি, দেখছি তাকিয়ে এই সুন্দর বিশ্বটাকে। চাঁদ তারা ভরা নীল আকাশ, বসন্তের দখিনা বাতাস, তার মাঝে সাধারণের কি হাহুতাশ! দেখেছি আমেরিকা ইউরোপের দাপট। অস্ত্রের ঝনঝনানি, দখল করতে হবে সুকৌশলে কিংবা ভয় দেখিয়ে আরবের তেলের খনি। দেখেছি ভিয়েতনাম ইরাকের পরিণতি। ভিয়েতনাম কে শ্মশান হতে হয়েছে আমেরিকার ক্ষোভে আর একটা সুন্দর  দেশ ইরাককে শ্মশান করে দিয়েছে জবর দখল করে। নীলনদের জল লাল হয়েছে ইরাকিদের রক্তে। অশুভ জোট শক্তির সপ্তরথী ঘিরে ধরেছিল অভিমুন্য রূপি সাদ্দাম হোসেনকে অন্যায় ভাবে, পরাজিত হয়েছিল বীরশ্রেষ্ঠ সাদ্দাম হোসেন। তাতেও থামেনি, জোটের অশুভ শক্তি, থেমেছিল প্রেসিডেন্ট  সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে। দেখেছি বিশ শতকের 80 দশকে উগ্রপন্থিদের জন্ম দিয়ে ভারত আফগানিস্তান ইরান-ইরাকের শান্তি কিভাবে বিঘ্নিত করা যায়; আমেরিকা!-- আমেরিকা বিশাল শক্তিধর তার প্রশাসন ছাড়া কে নিতে পারি এই হত্যার দায় ভার। বড় লজ্জা হয়, ডলার ইউরোকে নিয়ে, বাণিজ্যের নামে দলবেঁধে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলে, কে বড়? কে ছোট? তার নিরূপণ করে। এরা নিজেদেরকে শিক্ষিত বলে মনে করে, ভাবে সারা বিশ্ব আমাদের মুঠোর ভিতরে। বাণিজ্যিক  ডলার, ইউরো, ধন্য হলো জুয়ারু দুর্বৃত্তের হাতে পড়ে। মানুষের মূল্য মানুষ কবে পাবে? ওরা ছোট ছোট দেশকে অবরোধ করে বাগে আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, পাশের রাষ্ট্রকে হাতে এনে। শুনে অবাক হবে কিউবার মত ছোট্ট দেশকে 40 বছরের মতো অর্থনৈতিক অবরোধ করে রেখেছে তাহা জেনে। সেদিন যখন চীনে করোনা ধরা পড়ল, বর্তমান এই আমেরিকা ইতালি স্পেন ফ্রান্স ইংল্যান্ড হেসেছিল, ভেবেছিল এই ফাঁকে ব্যবসার শীর্ষে উঠে চীনের মতো একটা কমিউনিস্ট দেশকে হারিয়ে দেবে।
মানুষ ভাবে এক, আর হয় আরেক দেখিয়ে দিল চীন করোনাকে আটকে দিয়ে আর করোনা দেখালো তার দাপট অবিবেচক ধনী দেশগুলোকে। যখন ওই জোট শক্তি করোনার আক্রমণে টালমাটাল অর্থের দাপট দেখিয়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি শুনিয়ে করোনাকে পারলোনা আটকাতে তখন চীন, কিউবা হাত বাড়ালো, ইতালিতে শত শত ডাক্তার নার্সের দল পাঠালো ওষুধ পাঠালো করোণায় আক্রান্ত মানুষের সেবার জন্য। যে রাষ্ট্র তাদেরকে শত্রু ভাবে, সেই রাষ্ট্রের জনগণ তো তাদের শত্রু নয়, মানবিকতার তাড়নাই মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে ঝাঁপিয়ে পড়ে মানুষের উপকারে। আর ক্রম উন্নতির পথে যে রাষ্ট্রগুলো তারা অপেক্ষায় করোনার ঝড়ের, তাদের নাই অর্থ নাই বর্ত কিভাবে সামাল দেবে ঘনবসতিপূর্ণ অধিক লোকাধিক্যের রাষ্ট্রগুলো। চীন কিউবা ঘোষণা করেছে তারা মারণ করোনার সাথে যুদ্ধে পাশে আছে। চীনে করোনার আক্রমণের সাথে সাথে ধনী মহাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলো যদি লকডাউন করত তাহলে আজ বিশ্বব্যাপী এই করোনার আক্রমণ হত না, বেঁচে যেত গরিব ঘনবসতিপূর্ণ এশিয়া আফ্রিকার দেশগুলো। কি হবে এই দেশ গুলোর যেখানে রয়েছে ধনী,গরীব, জাত ধর্ম বর্ণ বিদ্বেষের বেড়াজালে আবদ্ধ। সেই কঠিন বেড়াজাল ছিন্ন করে কিভাবে মুক্তি পাবে হতদরিদ্র গরীব এই দেশগুলোর মানুষেরা? এখানে ছড়িয়ে আছে  শিক্ষায় অন্ধকার, মনুষ্যত্ব আর মানবতায় কুসংস্কার, আছে ধর্মের জালে বাঁধা সমাজ সংসার। মুক্তি পাওয়ার নাই কোনো দিশা, এই দেশগুলোর জনসমষ্টিকে গ্রাস করছে গভীর করাল নিশা। আমরা সবাই মুক্তি চাই, জানিনা কিভাবে সেই মুক্তি আসবে আমাদের কাছে, আমাদের জানা নাই। প্রকৃতি যেমন সৃষ্টি করে, তেমনি প্রকৃতির অনিষ্টকারীকে ধ্বংস ও করে। সুশিক্ষিত মানব সমাজ আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন দিনরাত সৃষ্টিকে বাঁচাতে করোনার হাত থেকে। করাল ভয়াল মৃত্যুর মুখগহ্বরের মাঝে আমরা সবাই আছি  দাঁড়ায়ে । এবার প্রশ্ন উঠছে জীবন-জীবিকার, ধন সম্পদ সবাই আছে ধনীর থাবায়, কোয়ারেন্টাইন বা সঙ্গরোধ আজ গরীবকে ভাবায়। মারণ সংক্রমণে হয়তো লাখ লাখ জীবনহানি ঘটবে কিন্তু তারপর? তারপর কাজ হারাবে লাখো লাখো, কোটিতে কোটিতে। এগিয়ে আসবে কি, ধণতন্ত্র প্রিয় রাষ্ট্রশক্তি মানুষের উপকারে? আরেকটা দুর্ভিক্ষের মহামারী হয়তো এগিয়ে আসছে। এবার হয়তো অন্নহীনতায় বিশ্ব হারাবে কোটি কোটি নীরান্ন মানুষকে। কে নেবে তার দায়? ধনতন্ত্রের প্রতিভূ ওই ধনীরা যারা স্বাভাবিক সময়ে মানুষকে চুষে খায় ব্যবসার নামে। এই মহা দুর্বিপাকে বিশ্বের তাবড় অর্থনীতিবীদেরা যদি সঠিক দিশা না দেখায়, তবে সেটাই হবে এই মানবজাতির কাছে বড় ভয়। তাদের হাত ধরে আর মানুষের ইচ্ছার জোরে আসবে কি অর্থনৈতিক পরিবর্তন, পরিবর্ধন কিংবা বিবর্তন এই মানব সমাজে? যদি হয় আর যদি আসে সাম্যবাদের ভাবনা তবেই হবে যুগের পরিবর্তন আর আসবে মানুষের জয়। ফলে কেটে যাবে মানুষের ভয়। আমরা থাকবো তাকায়ে উৎসুক হয়ে সেই দিনটার অপেক্ষায়।


২৩ শেষ চৈত্র,১৪২৬,
ইং ০৬/০৪/২০২০।
সোমবার বেলা ১১:৫৬। ৯৬৮, ০৭/০৪/২০২০।