চিত্ত রঞ্জন সরকার,


প্রেমিক শাজাহানের প্রিয় কন্যা তুমি-জাহানারা।
তুমি গ্রহণ করনি বাদশাহবেগমের পদ, তুমি
ছিলে অচল, অটল, অকম্পিত ন্যায়নীতির
দীপশিখার মত দীপ্তিময়। জন্ম জন্মান্তরের
পিতার পুত্রী তুমি গ্রহন করেছিলে পিতার
সাথে সহ-বন্দিত্বের, পিতার পরিচর্যারজন্য।
জগতে তুমিই পিতার কন্যা, ধন্যা তুমি ধন্যা।
তোমার চতুর্দিকে ছিল শুধুই ঘন তমসায় ঘেরা
আর সীমাহীন প্রবঞ্চনা, ক্রূর বিশ্বাসঘাতকতা।
সেই অন্ধকারের মধ্যে তুমিই জাহানারা ছিলে
স্থির অবিচল। তোমার ভগ্নি রোশেনারা পারেনি-
সম্পদের সুখ সম্বরণ করতে, তাই তো চলে গেল
পিতার বিরুদ্ধে। আগ্রার প্রাসাদ প্রাচীরের অন্তরালে
তোমার বন্দি জীবনে একটি একটি বছর হয়েছে
বৃদ্ধি আর আয়ু থেকে খসে পড়েছে একটি করে
বছর। পিতার পরিচর্যার অবসরে তুমি শাহজাদি
শত দুঃখের মাঝে আত্মনিয়োগ করেছিলে কবিতা
রচনায়। দুঃখ ভুলে ডুবেছিলে সৃষ্টীর আনন্দে।
তোমার কবিতা আজও মানুষ স্মরণ করে  একান্ত
শ্রদ্ধায়। কন্যা, তুমি মাতার মত পিতাকে চিরবিদায়
বিদায় দিয়েছিলে নিজ অঙ্কে শুয়ে। এমন কন্যা ছিল
পিতার রত্ন শ্রেষ্ঠ কোহিনূরের মত। সয়েছো সহোদর
আওরঙ্গজেবের দেওয়া কঠিন দুঃখ যত। পিতার মৃত্যুর
পরে ফিরে এলে দিল্লীতে কঠিন যুদ্ধের শেষে।
রমজানের কোন এক পুণ্য তিথীতে বন্দিনী জীবনের
মুক্তি পেলে মৃত্যুর সেই সুশীতল কোলে এসে। তুমি
চেয়েছিলে ফকির নিজামুদ্দিন আউলিয়ার সমাধির  
পাশে একটুখানি স্থান, চাওনাই পার্থিব সম্পদ, চাওনাই
অন্য মানুষের কোন দান। সমাধির পরে হয়নাই কোন
স্মৃতিসৌধ। উন্মুক্ত নীল আকাশতলে চিরনিদ্রায় শায়িত
রইলে তুমি তৃন আচ্ছাদনে। তুমি চেয়েছিলে ফকিরের
পাশে ভিখারিনী হয়ে রইবে বলে। তোমার কবিতার দুটি
পঙক্তি আজও স্মরণ করিয়ে দেয়, তোমার ছিল একটা
মহান হৃদয়।
             ফলকের গায়ে আজও উৎকির্ন রয়েছে তোমার
কবিতার দুই লাইন-
     “বেগায়র সবজা না পোশাদ কসে মাজারে মারা
      কে কবর পোষে গড়িবান হামিন গিয়াহ বসন্ত”।
  
চেষ্টা করেছি তোমার কবিতা বাংলায় অনুবাদ করতে-


      “ঘাস ছাড়া যেন কিছুই না থাকে,
                  দীনহীনার কবরের পরে;
      সেই হবে মোর শ্রেষ্ঠ আচ্ছাদন,
                    আমার সমাধি ঘরে”।


তোমারে পারেনি ঢাকিতে, মুঘল সাম্রাজ্যের কালো
আঁধি;পুন্যআত্মা নিজামুদ্দিন আউলিয়ার অনুগামিনী,
সাহাজাহান দুহিতা-নশ্বর জাহানারার এই তো যোগ্য
সমাধি। নব ঘন শ্যাম দুর্বাদল ছেয়ে আছে জাহানারার
নিরালঙ্কার সেই সমাধি। আজও নিশীথে নীল আকাশ
থেকে অশ্রু ঝরে তাঁরে স্মরে বিন্দু বিন্দু শিশিরের মত।
প্রভাতে তরুন অরুন কিরণ দেয় পাখিদের ঘুম ভাঙ্গানো
কলকাকলির সাথে। গোধূলি আলোর সোনালি আভা
শান্তির ছোয়া দিয়ে যায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাহানারার
মাথে। নব ঘন দূর্বাদল পেতে চায় অঙ্গের ললিত সুবাস;
আজও বুঝি পায় তারা সুকুমার হৃদয়ের মৃদু স্পন্দন
ধ্বনির আভাস।


২৯শে শ্রাবণ, ১৪২৪,
ইং ১৫/০৮/২০১৭,
মঙ্গলবার, রাত ১১টা।