কবি জীবনানন্দের মৃত্যুর এক বছর আগে জন্ম আমার। জানতাম কি আমি, বাংলার সবুজ ক্ষেতের আল ধরে সোনালী ধানের সিঁড়ি ভেঙে আমিও এগিয়ে যাব রুপসী মায়ের খোঁজে? মায়ের যে রুপ দেখে ছিল জীবনানন্দ, আমি কি পাবো তার কিয়দংশ? থৈ থৈ জলে ভাসা ধানক্ষেত আজ আর নাই। ধানুয়ারা কাটেনা ধান হাঁড়ির উপরে বসে। সোনালী ধানের শীষ কাপে না তো ভাটিয়ালি সুরে ভেসে। ক্রমে ক্রমে মরুভূমি হয়ে যায় দেশ, খাল-বিল-নদী-নালার জল বুঝি হয়ে গেল শেষ। আসে না ঝাকে ঝাকে পাখি আর কাদা মাখা মাঠে। কৈ মাছ, শিং মাছ, মাগুর শোল খেলে না তো পায়ের পাতা ভেজা জলে। পৌষ মাসে কচুরিপানা হতে চালুনি দিয়ে এখন আর ধরে না কেউ খলিশা, কই, আমাদের বিলে। কোথা গেল লাল সাদা শাপলার দল? আহারে সেই বর্ষার জল! সাঁতার কাটিতাম বান  ভাসা জলে। ঝাকে ঝাকে মাছ যেত দেখিতাম জলের স্বচ্ছতার ফলে। পাট ক্ষেত, ধান ক্ষেত, আখ ক্ষেত, জলে ভরা সবই। বুক জলে পাটকাটে আহারে কি সুন্দর ছবি। জীবনানন্দের আনন্দের ছবি ক্রমে ক্রমে আজ বুঝি মিলিয়ে যায়, বিশ্বপ্রকৃতির করুন ধারায়। মরুভূমি মরুদ্দ্যান বাংলামায়ের সেই উদ্যান, পাবো কি ফিরে আর সেই বাংলা মাকে? লঞ্চঘাট, নদী নালা, বসে থাকা পুকুরের ঘাটে, আর দলবেঁধে খেলিতাম বাটে। জীবন হারিয়ে যায় আনন্দ চলে যায়, চলে যায় রূপ-রস-গন্ধ সবই, অতীতের হারিয়ে যাওয়া প্রকৃতির রূপের ধারা কোথায় আজ পাবি? সময়ে আসেনা বর্ষা, অসময়ে শীত, বসন্ত হারিয়ে যায় কোথা পাবি প্রেম প্রীত? ফুলেরা হারায় গন্ধ বসন্ত বাসে; প্রজাপতি অলিরা কেমনে আসিবে হেসে হেসে? কর্কশ লাগে আজ আর বাজে না রাখালী বাঁশির সুর, ঘুরেছি আমি কত দূর থেকে দূর; শারদ, ঈদের মিলন আর হয় না মধুর। লঞ্চঘাটে ভিড হোত, বাড়ি ফেরার পালা, হই হই রই রই কান ঝালাপালা। কার আগে কে যাবে, কাঁধে মাথায় বোঝা, কঠিন সময় ছিল, বাড়ি ফেরা ছিল না তো সোজা। শত কষ্ট শত বাধা তবুও আনন্দে সাধা উৎসবের দিনে, আজ ও আমরা বাঁধা আছি সেই দিনগুলোর ঋণে।


১৩ই কার্তিক, ১৪২৬,
ইং ৩১/১০/২০১৯,
বৃহস্পতিবার, সকাল,৮টা। ৮২২, ৩১/১০/২০১৯।