ঐ গ্রামখানি আমার জন্মস্থান,
       যেন হৃদপিন্ড আর দেহ;
জীবন প্রভাতের স্মৃতি সম্ভার,
       ভুলিতে পারে না কেহ।


সবুজে ঘেরা বনবীথির বেড়া,
       চামর দোলায় ধীরে;
দেহের ভিতরে বুকের পাঁজরে,
       শিক্ত হৃদয় নীরে।


কত স্মৃতি তাঁর, মনে রাখা ভার,
      শিহরণ জাগে মনে;
ফিরে পেতে চাই, পরাণে যে তাই,
      বন্ধু সাথীদের সনে।


স্মৃতির শৈশব কত বৈভব,
       রেখেছিল মোরে ঘিরে;
স্নেহ, ভালবাসা, আপনদের আশা,
       একদিন হব হীরে।


প্রভাতের আলো লাগে যে ভালো,
      ভাবনা নতুন দিনের ভেবে;
মধ্যাহ্নের কিরণ সন্ধ্যার শিহরন,
      জীবন কি সাজায়ে দেবে?


বাবু রাইচরন আর চিন্তাহরণ,
      বাবু গণেশ দিয়েছে শিক্ষা;
শিশির, প্রফুল্ল আর জগদীশ,
       পেয়েছি তাঁদের কাছে দীক্ষা।


তালপাতা সে তো জীবনের খাতা,
       আছে বুকের সাথে মিশে;
কঞ্চির কলম আর কয়লার কালি,
       দিয়েছে পথের দিশে।


ছুটেছি পায়ে, কালি মেখে গায়ে,
      গ্রামের মেঠোপথ ধরে;
ভেবেছি শত, বিজয়ী বীরের মত,
      ফিরেছি আপন ঘরে।


বড়দি, ঠাকুমা, কাকা কাকীমা,
     বোলতো মুখে হাসি দেখে;
আয় আয়, কাছে আয় বুকে আয়,
     বুঝি এলি কত কি শিখে!


হাতে কালি মুখে তার ছোপ,
     সব ধুঁয়ে-মুছে দিয়ে;
আদর খেতাম সোহাগ জড়ায়ে,
     মায়ের কোলেতে গিয়ে।


মায়ের আদরে পিসিমা আমারে,
      খাওয়া তো দাওয়ায় বসি;
খাওয়া শেষে, বিজয়ীর বেশে,
     হাসিতাম তৃপ্তির হাসি।


স্কুল ছাড়ি কলেজে আসি,
    যৌবনে দিলাম পা;
নব শিহরনে, মন বিহরনে,
    দেই নি তো আমি গা।


ফুলে ফুলে ভরা বিচিত্র ধরা,
      ছুটিছে জীবন পথে;
সময় তো নাই, কোথা পাই ঠাই?
     যাব আমি কার সাথে?


ডাক্তার হবো, গ্রামে রবো,
     বাবার ভাবনা ছিল তাই;
মনের বাসনা, আর তো আসে না,
    পুড়ে হলো সব ছাই।


ঘুরে গেল চাকা, পথ হলো বাঁকা,
    শুরু হলো স্বাধীনতার লড়াই;
মুজিবের আহ্বানে মিলে একসনে,
     মুক্তি যুদ্ধে নাম লেখাই।


বন্ধুরা মিলে লুকাতাম বিলে,
    রাতে ফিরিতাম বাড়ি;
রাতের আঁধারে চুপি চুপিসারে,
    ভারতে দিলাম পাড়ি।


লাখ লাখ লোক, বুকে লয়ে শোক,
    চলিল স্বদেশ ছাড়ি;
অনিশ্চিতের মাঝে, পরানে বিরাজে,
    কভু কি ফিরিব বাড়ি?


হাঁটু জল-কাঁদা মলিন হলো সাদা,
    দেশী বর্বরদের অত্যাচারে;
আপনজন ছাড়ি দিতে হলো পাড়ি,
    বিদেশী বন্ধুর দ্বারে।


স্বাধীনতার লড়াই,ছিল আমাদের বড়াই,
        হই নাই মোরা উচ্ছৃঙ্খল;
দিয়ে বুকের রক্ত, করিলাম মুক্ত,
       মায়ের পায়ের শৃঙ্খল।


নিয়েছিলাম শপথ, ঘুরে জনপথ,
       স্বাধীন করিতে দেশ;
কাঁধে রাইফেল যেন ফ্রান্সের আইফেল,
       পরেছিলাম মুক্তি যোদ্ধার বেশ।


এক নদী রক্ত ঢেলে, মুক্ত হলো,
    আমার বাংলাদেশ;
দালাল, মীরজাফর, ছাড়েনি তো ঘর,
    আজও আছে তারা বেশ।


স্বাধীনতার পরে ফিরে এসে ঘরে,
    জাতীর পিতা খুন হলো;
দুঃখে সুখে দেশ, কাটছিল বেশ,
    দালাল চক্র ক্ষমতায় এলো।


রক্তের ঋণ শোধ হবে সেদিন,
    যবে সত্যের জয় হবে;
আপন করে রক্ত পতাকা ধরে,
     বুকেতে শপথ রবে।


ভাবনা ভাবি দুর দেশে বসি,
      বাজে বুকে সেই সুর;
স্মৃতির পাতায় মন চলে গাঁয়,
     স্মৃতিমন্দির মোর বাহাদুরপুর।


                 ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪২৩,
                 ইং ০৯/১২/২০১৬
                 শুক্রবার, ভোর ৬টা।