অরণ্য- অতন্দ্রীলা,
তোমাকে লিখছি অনেক দিন পর!
কাল রাতে হঠাৎ দমকা হাওয়া বইছিল,
সাথে তুমুল বৃষ্টি-
আমি জানালার ধারে বসে বৃষ্টি দেখছিলাম
আর তোমায় ভাবছিলাম,
আচমকা একটা দীর্ঘশ্বাস ছুটে এসে
বুকের বামপাশটায় নিমিষেই ওলট পালট
করে দিয়ে গেলো সবকিছু,
বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটায় ফোঁটায় তোমার
অস্তিত্ব টের পাচ্ছিলাম;
ভালো আছো তো তুমি?


অতন্দ্রীলা- অরণ্য,
কিসের আতঙ্ক তোমায় দাবড়ে বেড়াচ্ছে?
আমি তো সেই কবেই ভয়ের সাথে
সন্ধি করে নিয়েছি, যেদিন তুমি আমাকে
এক ঝড়ের মুখে ছুঁড়ে ফেলে চলে গিয়েছিলে!
এক অদৃশ্য সুনামী তছনছ করে দিয়ে গেছে
আমার সাজানো স্বপ্নের বাগান;
সেই থেকে কোন দুর্যোগ আমায়
আঘাত হানতে পারে না।
রাতের আঁধারে হঠাৎ কোন কিছুর স্পর্শে
যদি আমার কথা মনে পড়ে তোমার,
তবে বুকের বামপাশটায় হাত রেখে
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলো,
কেননা, ঠিক ওখানটায় আমি আছি।


অরণ্য- এখনো সেই জেদ তোমার
অবশিষ্ট রয়ে গেছে? আত্মঅহমিকায় এখনো
কি বুঁদ হয়ে থাকো?
দম্ভ চিরকাল তোমার একার অলঙ্কার;
এক রাতে নিলাম করে নিয়েছিলে
তারা খঁচিত নীলাভ আকাশকে,
বলেছিলে, যা চাই,তার সবটুকুই চাই
তোমার খুনসুটি আকাশের বুক জুড়ে
কতোটা দখল করে রেখেছে?
সমস্ত স্বত্বায় কি তুমি একাই আছো?
খুব জানতে ইচ্ছে করে।


অতন্দ্রীলা- দেখো অরণ্য, পুরো আকাশটা জুড়েই
আমি আছি, ইচ্ছের বৃষ্টি নামাই মাঝরাতে।
ছুঁয়ে দেই তোমার বিষাদের দর্পণ,
তুমি যখন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে প্রিয়ার বুকে
মহুয়ার গন্ধে বিভোর হয়ে প্রেম খুঁজো,
আমি তখন কাল-বোশেখী ঝড় হয়ে তোমার
শহরে তাণ্ডব চালাই;
এসবই আমার একার ইচ্ছেয় হয়।
শুধু তুমিই আমার ইচ্ছের বাঁধন ছিন্ন করে
চলে গেছো, দূরে- বহুদূরে।
মনে পড়ে অরণ্য?
এক রাতে খুব ভয় পেয়ে তোমায় জড়িয়ে ধরে
আশ্রয় চেয়েছিলাম, তোমার লোমশ বুকে,
তুমি আমায় স্বস্তির নিঃশ্বাসটুকুও উপহার দাওনি।
তারপর থেকেই আমার চোখ দুটো
কোনদিন প্রশান্তির ছোঁয়া পায়নি।


অরণ্য- শুনেছি, ভালোবাসার মানুষকে কেউ
ঘৃণা করতে পারে না, তুমি ব্যতিক্রম হলে কেন?
অতন্দ্রীলা, কোন স্মৃতিই কি অবশিষ্ট নেই,
যার হাত ধরে তুমি-আমি কিছুটা সময়
নিজের করে রাখতে পারি?
অথবা, ঝড়ো হাওয়ার মতো ওড়ে এসে
প্রশস্ত বুকে আরেকটি বার কি মুখ লুকিয়ে
রাখতে পারো না?
তাহলেই তুমি বুঝতে এতোটা বছর ধরে
কার নাম ধ্বনিত হচ্ছে অবিরত।
ফিরে এসো, অতন্দ্রীলা, ছুঁয়ে দাও একটিবার
তোমার নাম খঁচিত সেই গোপন অলিন্দ।।