© করবী সাউ


পুরুষ তুমি শক্ত ভীষণ, সবটা বয়ে চলো,
আঘাত পেলেও হাসিমুখেই কথা তুমি বলো।


হাজার কষ্ট ছাই চাপা দাও, চওড়া ছাতির পরে,
রাতের সেজে চিন্তা করো, আপনজনের তরে।


রাত পোহালে, হাটের খরচ, মায়ের বিপি'র ওষুধ
ক্লিনিক গিয়ে নাম লেখানো, বাবার হার্টের অসুখ।


ছেলে এবার জয়েন্ট দেবে, চিন্তা চেপে মাথায়,
মেয়েটা এবার বাইশ হল, রয়েছে কন্যা দায়।


ডাক্তারি পড়ার বেশ খরচা, জোগাতে তো হবেই,
সেই ভেবেই এক্সট্রা ডিউটি শুরু করেছো কবেই।


ছেলের বাড়ির লোকরা এলে বিশাল আপ্যায়ন,
খাবার শেষে হাত গুটিয়ে চায় যে বিশাল পন।


তোমরা গলা যায় শুকিয়ে, হেঁট করে নাও মাথা,
কেন বলতো ঠাটিয়ে ওদের বন্ধ করো না কথা?


মেয়েটি তোমার এম. এ পাশ দিল, ছাত্র পড়ায় কত!
তবু কেন এত দর কষাকষি চলে, সস্তা কিছুর মত!


নিজের কথা ভাবো না তাই, সারাটা বছর ধরেই,
একটা জামায় কারখানা যাও, ছেঁড়া চটিটা পড়েই।


দলাদলা কষ্ট বুক আঁচড়ায় তারে ছেঁড়া শাড়িতে দেখে,
যে নারী তোমার হাত ধরেছিল হাজারো স্বপন এঁকে।


চেয়েছিলে তারে করতে সুখী, দিতে চেয়ে সব সুখ,
আজকে তারে অভাবে দেখে, ফেটে যায় তোমা বুক।


তবুও তোমার দুচোখ গড়ায়ে ঝরে না অশ্রু কভু,
তুমি যে পুরুষ, ন্যাকা কান্নায় নারীরা যে ভাসে শুধু।


সেই কিশোর বয়সে, প্রথম প্রেমিকা, চেয়ে ছিল রানী হতে,
বর এসেছিল বিদেশ থেকে তাই রাখেনি সে হাত হাতে।


কার ছিলে, সেদিন তুমি, চাইলে কিছু বছর,
দাঁড়ায়নি সে একটুও আর, নেয়নি তোমার খবর।


হয়েছিল দেখা এইতো সেদিন ধর্মতলার মোড়ে,
নিজেই এসে বলেছিল কথা, মনে কি তোমার পরে?


স্বামী ওখানে দাসী চেয়ে ছিল, ছিল না ভালোবাসা,
বিদেশিনী তে মজে, মুখ ফেরালো, তাই ফিরে আসা।


যাক সে কথা, মেয়ে তো বলেছে,"বেশ করবো বিয়ে আমি,
বাবার মত সৎ হবে যে, সেই হবে আমার স্বামী।


বাবার মত উদার মন,নেই পনের আশা যার,
এমন পুরুষ সঙ্গী হবে, দেবো গলায় মালা তার।"


ছেলে তোমার টিউশন করে, অধ্যয়ন ও কি সোজা?
কি করবে, কমাতে সে চায় বাবার কাঁধের বোঝা


জানতে পেরে ওইটুকু তারে, বকে দিলে তুমি ভারী,
মোটা মোটা বই গুলো পড়া একমাত্র দরকারী।


বছর তিরিশ পিছিয়ে গিয়ে, দেখলে চোখের পরে,
একটি কিশোর বায়না করে কলেজে পড়ার তরে।


হার্টের অসুখে ভুগছে বাবা, মুদির দোকানে বাড়ছে ধারের খাতা,
রোজগার নেই, দুবেলা জোটেনা, পড়াশোনা বিলাসিতা।


দুদিন পরেই ভুত নেমেছিল, জোটেনি পেটে ভাত,
মা কেঁদেছিল, হাঁড়ি চড়েনি তাই, কপালে চাপড়ে হাত।


সেদিনই তুমি গিয়েছিলে ছুটে, দেবু কামারের কাছে,
লোহা পেটাতো বিশু কাকা আগে, কাজটা কি ফাঁকা আছে?


দেবু তো দেখে বিশাল খুশি, গরম রক্তের তেজে,
পিটবে লোহা, দুমদুমাদুম, "লেগে পর ব্যাটা কাজে।


বিশু গেল মলে, কলেরা হয়ে, কাজকি আমার কম?
মারলে ফাঁকি দেবো তোরে ছুটি,লেগে পর দিয়ে দম"!


তখন হতেই টেনে যাও হাল,ভাবোনি নিজের কথা,
শুধু তোমার বউটা ফুপিয়ে কাঁদে,বুঝতে পারে সে ব্যাথা।


এত ভার কি করে বয়ে চলো ওগো,পাও কোথা এতো শক্তি,
যত দেখি তোমায়, কষ্ট করতে, বেড়ে যায় তত ভক্তি।


পায়ে হেঁটে গিয়ে, ছলে গেল পা, ঝুঁঝিয়ে রক্ত ঝরে,
রাতের বেলা বউটা তোমার শুশ্রূষা আজও করে।


তবুও কেন উজাড় করে কাঁদোনা হাতটি ধরে,
বলনা কেন "ওগো নীলি জানো, আমার ও ব্যাথা করে?
তোমাদের ভালো রাখতে যে চাই, বলছি বুকেতে ধরি।
চাই যে সবাই দুধে ভাতে থাকো, কষ্ট যে তাই করি।
ঘণ্টা চারেক বাড়তি কাজ করছি আমি তাই,
বিশ্বাস করো তোমাদের আমি সুখী করতে চাই।
বাড়ছে দেনা, বাড়ছে ঋণ, এ ভাবে কি থাকা যায়?
বুকটা ফেটে বেরিয়ে আসে, আমারও যে বড্ড কান্না পায়।"