অমর-ব্যথা বুকে নিয়ে একাকী চলেছি আমি,
মম ব্যথার সকাশে তুচ্ছ তুমি, হে নির্জল মরুভূমি!
অনলের-দাহে পুড়িলে দেহ পবনে যায় উড়ে,
প্রণয়-অনলে পু’ড়ে আমি জ্বলেছি শতাব্দী জুড়ে!
মরণ মোরে মারিবে কী আর বিরহ মম নিবাস!
অহোরাত্র বুনেছি কেবল অনন্ত দুখের-আশ।
নামিলে আঁধার যায় যে দেখা আসমানের তারা,
নিশীথে জাগে ব্যথার-স্মৃতি নয়নে শ্রাবণ-ধারা।
ভুলি’ ভুলি’ ক’রে কাটিছে জীবন ভোলা নাহি হয়,
অভিশপ্ত প্রাণে বেসেছি ভাল সুখ কী কভু সয়।


পথের ধূলো মেখে গায়ে হ’য়েছি আজি পথহারা!
মম ন্যায় পুড়িয়া চলিছে প্রখর-উষ্ণ, মরু-সাহারা।
ভিখারি হ’য়ে কত না দ্বারে ক’রেছি প্রেম সমর্পণ,
খোলেনি দ্বার বোঝেনি কেউ মম মন-উচাটন।
কহিল কথা কত না প্রাণে, বেলাশেষে শূন্য মম অন্তর,
সুখের লাগিয়া ছুটেছি আমি পাড়ি দিয়াছি কত বন্দর।
আপন দুখের-পসরা সাজায়ে ছুটেছি একাই কেবল,
লাভার ন্যায় গলিয়া পড়িছে অব্যক্ত-বেদন সকল।
কত অশ্রু কপোলে শুকাইল সাক্ষী অনূঢ়-পবন,
ব্যথিত-পরানে ঘুরিয়া মরিছি বহিছে দুখের-প্লাবন।


তাপিত-তপন হেলিয়া পড়ে গগনে উঠে যবে শশী,
বিষাদ চূড়ায় বাজিয়া উঠিল আমারি বিষের বাঁশী!
কভু থামিয়া ফের হাঁটিয়াছি দূর হইতে আরো বহুদূরে,
অবসন্ন-হিয়া গিয়াছে তলায়ে গহীন-ব্যথার বালুচরে।
বালিহাঁসের ন্যায় সুখ আসিয়া উড়ে যায় মৌসুম শেষে,
আসর শেষে পদদলিত হইলাম নীরব-কুসুম বেশে।
অশ্রুজলে শুকায়ে ফোয়ারা মলিন হইল বুক,
আশায় গৃহ বাঁধিয়া পাইলাম দীর্ঘায়িত-দুখ।
বারি হ’য়ে ধূসর-স্মৃতি আজি নিরালায় ঝরে,
অতীতের গর্ভে বিলীন হ’য়েছি মর্মবেদন ভরে।


অবনীর বুকে রুদ্ধকণ্ঠে চিৎকার ক’রেছি আমি,
কোলাহল ধরায় আর্তনাদে কেটেছে দিবসযামী।
অশ্রুসলিল ধৌত হৃদয়ে হ’য়েছে সিক্ত-সরণি,
কৃষ্ণবক্ষের লুকায়িত পীড়ন শুধাইব কাকে হে ধরণী!
ভূলোক-ব্যথা বুকে নিয়ে হ’য়েছি পাষাণ-পাথর,
প্রাণ থাকিতে মাটির দেহে নাহি ক’রে কেউ কদর।
কত না মিহির অস্ত গিয়েছে নিথর কায়া পুড়িয়ে,
কত না জ্যোৎস্না আড়াল হ’য়েছে অসীম-ব্যথা জড়িয়ে।
মরা বৃক্ষের ন্যায় দাঁড়িয়ে আমি, অচিরেই হইব বিলীন!
অমর-ব্যথার বিষে দেহ হ’য়েছে আমারি মলিন।