জীবনকে যারা নদীকথায় বেঁধে রেখেছে
আসলে তারা পরাশ্রয়ী ;
গহীন গহ্বরে ঠিক কেউ না কেউ
অ্যাটলাস হয়ে আছে...
সে যে মৃত্তিকাই হোক না কেন!


যেখানে বেদনা আসে প্রতি মাসে
তুলো ভেজানোর প্রতিশ্রুতি মাথায় রেখে
হত-দরিদ্র মা অভাবের ঘরে
-
শাড়ী ছিঁড়ে ন্যাকড়া বানিয়ে দেয় মেয়েকে
...সেখানেও নিয়তি রূপে থেকে যায়,
থেকে যায় সেই মাটি;
আর না বলা কথায় মগজ দোলায় একটাই বাক্য -
মা আবার অভাবী হয় নাকি!
নদী কেমন যেন সব ভার বয়ে নিয়ে যায়
নিশ্চুপে নির্বিঘ্নে,  যেমন ভার বয়ে নিয়ে যায়
 অভাবী ঘরের ওই মেয়েটি।


প্রত্যহ সকালে যাকে বেরোতে হয়
জন্মের বিড়ম্বনা ঘোচাতে  ;
বস্তা কেটে বালি-সিমেন্ট মিশিয়ে
কোদাল টেনে মশলা বানাতে গিয়ে
চোখে-মুখে যার পাউডারের মত
সিমেন্ট গুঁড়ো লাগে,
তারপর মশলা নেড়ে কড়াইতে গুছিয়ে নিয়ে
পরিবেশন করতে হয়
মিস্ত্রিদের রাজাকে...
এবং সূর্যাস্ত পর্যম্ত চলে হাড়-ভাঙা খাটুনি
হয়ত কখনও বা তারও বেশী..
আর দিনান্তে মেলে মাত্র আশি টাকা,
তার কাছে এটা উপার্জন নয়..
সে এটাকে জয় বলে মানে।
যদিও ঘরে ফিরে ..সেই বছর তেরোর মেয়ে
লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদেছে দুর্বল পাজরে,
দু'হাতের চেটোর দিকে চেয়ে।
আর হাত ধুয়ে ফেলতেই
বেরিয়ে এসেছে মাটি ।
কাঁদা আর মাটি মিশে গিয়ে
একাকার করেছে এই ত্রিভুবনকে...
যেখানে আমরা সবাই আসলে
                 আজীবন পরাশ্রয়ী!
এমনকী, কথিত ঈশ্বরও।


তুই শুধু এটুকু জেনে ভালো থাকিস মেয়ে
তথা-কথিত ঈশ্বর...গতানুগতিক ঈশ্বর
পরাশ্রয়ী হলেও সর্বহারা সে,
আর তুই পরাশ্রয়ী হলেও সর্বহারা নোস্!
তোর আপাদমস্তক একটা অস্তিত্ব আছে,
       আমাদের সেই ছোট নদীর মত।