।। অমৃত স্বাদ ।।
দেবপ্রসাদ জানা
  ১২.৭.২০২০
যে শহরটা তখনও শহর হয়ে যায় নি
যে গ্রামটায় তখনও পাকা রাস্তা হয়নি।
সেই শহরটা আমার জন্মস্থান।
আমার দেশ আমার প্রান।
কলকাতা নয় মেদিনীপুর। পূর্ব মেদিনীপুর।
তারই একটা ছোট্ট গ্রাম গোবিন্দপুর।
মানচিত্রে তার নাম আছে কিনা জানি না।
যদি না থাকে, তবু এখনো আছে।
হলদিয়া থেকে চৈতন্যপুর তারই একটু কাছে।
বিঘে পঁচিশেক জমি আর পৈত্রিক ভিটে।
বাড়ি গুলো তখনও গাঁথা হয়নি লাল পাকা ইটে।
মাটি দিয়ে দোতলা খড় দিয়ে ছাওয়া।
সারি সারি নারকেলগাছ আর মিষ্টি হাওয়া।
পাড় ঘেরা পুকুর আর একটা তেঁতুল গাছ।
বাজ পড়া তাল গাছে বাস করা গোটা কয়েক
টিয়া পাখি আর পুকুরে মাছ।
কাঁচের মতো পুকুরের জলে মাছ খেলা করে।
ঠাকুরমা সকালবেলায় পুকুরে নেমে,
পাঁকে হাত টিপে টিপে চিংড়ি মাছ ধরে।
তাজা চিংড়ি টক, মুখে লোল টেনে বলি-
সে এক অমৃত স্বাদ।।
আজো মুখে লেগে আছে।
খাল থেকে ধরা ডিমওলা চিতি কাঁকড়া ।
আহা সে এক অমৃত।
দুপুর বেলায় পাকা তেঁতুল লঙ্কা দিয়ে মেখে।
বাটি করে সবার জন্য তিনি দিতেন রেখে।
পুকুর থেকে জ্যান্ত চারা মাছ
আর তার সরষে বাটা ঝোল।
পান্তা ভাতে তেল আর ভাজা শুকনো লঙ্কা।
সে এক অমৃত স্বাদ।
তেল ছাড়া শুকনো আলু ভাজা, সঙ্গে মুড়ি।
পারতেন ও খাটতে ঐ সত্তরের বুড়ি।
একটু বিকেল হলেই লুডু খেলা
আর বাড়িতে করা ঘোল।
সেও এক অমৃত স্বাদ।
জিভে জল এসে যায় মনে পড়লে এখন।
কলকাতার খাদ্যেরা সব আছে ঘিরে।
কাবাব রেজালা অমৃতশ্বরী
জ্যাম জেলি রোল চাউ আর বিরিয়ানী
সেই স্বাদ আজো যেন ভুলতেই পারিনি।