আজ বেশ আয়োজন ওর;
করোনাকাল শুরু হওয়ার পর থেকে আমি এই প্রথম
একটি বিশেষ কাজে বাইরে বেরুবো,
শরীরে মেখে দিলো সুগন্ধি আতর।
ও অনেক খুঁজে খুঁজে এর গন্ধটি পেয়েছে; অনেক বন্দুরাই এটি পেতে চায়।
সিএনজি ভাড়া করে উঠতে যাবো, ড্রাইভার আমাকে দাড়াতে বলেই
তরিঘড়ি স্যানিটাইজার স্প্রে করে সিট পরিস্কার করলো,
আমার হাত স্প্রে করলো, তারপর তৃপ্তির একটি ছোট্টহাসি দিয়ে বললো−
“এবার বসেন।”
মনে হলো পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটাই ও করলো এখন।


সরকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ অফিস গেটে নামলাম,
সেখানে আমাকে একটি স্যানিটাইজিং টানেল দিয়ে নেয়া হলো;
ঘণ কুয়াশা আমাকে আচ্ছন্ন করলো;
বেরুতেই বেশ সজিব মনে হলো। সুঘ্রাণে আতরের ঘ্রাণটা মিলিয়ে গেলো।
তারপর নির্বীজন ম্যাট দিয়ে হেটে গিয়ে দেখতে পেলাম,
সুরক্ষিত পোষাক (যুদ্ধের পোষাকও এর চেয়ে অরক্ষিত) পরিহিত একজন মানুষ
আমার জন্য একটি ভিজিটর পাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমার নাম-পরিচয় এন্ট্রি করার পর আমার দিকে
হ্যান্ড সেনিটাইজার বাড়িয়ে দিয়ে ছোট একটি চিন্তার বলিরেখা কপালে এঁকে বললো−
“স্যার, প্লিজ।”
নিজেকে অনেকটা সুরক্ষিত মনে হলেও কারো মনে শান্তি খুঁজে পেলাম না।


পাস নিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। বসে আছি ওয়েটিং রুমে।
একজন পিয়ন এসে হ্যান্ড সেনিটাইজারের স্প্রে বাড়িয়ে দিয়ে বললো−
“নিন স্যার।”
আমি সম্মতিতে বললাম−
“নিয়েছি।”
পিয়নটি আমাকে শিক্ষকের মতো বোঝাতে শুরু করলো−
“তাতে কী হয়েছে? কিছুক্ষণ পরপর নিতে হয়।
মরন ভাইরাস ওৎপেতে আছে, খালি চোখে দেখা যায় না। নিন নিন।”
বলেই আমার বাড়ানো হাতে স্প্রে শুরু করলো−
“আমি আবার আসবো।”
চলে যাবে, এমন সময় আমাকে অন্যমনস্ক দেখে বললো−
“স্যার, এটি কিন্তু ’হু’ অনুমোদিত ফর্মুলায় তৈরী,
আমাদের স্যার এটি ছাড়া ব্যবহার করেন না।”
কাজ শেষ না হওয়া অবধি আমাকে মোট চারবার হাত স্প্রে করতে হয়েছিল।


আমি বেরিয়ে খুব চিন্তায় পরে গেলাম, বির বির করে শব্দ গুলো বেরুলো−
“ছেলেকে মোটেও বাইরে বের হতে দেওয়া যাবে না;
অবশ্য ওর পকেটেও আমি একটা হ্যান্ড সেনিটাইজারের বোতল দেখেছি।”
তবুও চিন্তাটা মাথা থেকে গেল না। পিতামাতার চিন্তা বুঝি এমনই।


মসজিদের পাশেই আমার বাড়ি। রিকসা থেকে নামতেই
অনেকদিনের পুরনো এক বন্ধুর সাথে দেখা। আসরের আজান হচ্ছে।
বেশভূষা দেখে মনে হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্তই মসজিদে পরে।
আমায় দেখে এগিয়ে আসলো, তবে দূরত্ব ছিল,  যেনো অপরিচিত কেউ।
কথা বলছিল বেশ চিন্তাযুক্ত যেন ঘোর বিপদ চারিদিকে।
আমিই জিজ্ঞেস করলাম−
“কেমন আছো?”
উত্তরটা পুরোনো দিনের মতো ছিল না−
“না বেশি ভালো নেই, জানোতো? পাশের বাড়ির রহমান চাচা মারা গেছে?
কি যে করোনা আসলো”
কথা শেষ না হতেই পানজাবির পকেট থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে বের করে
আমার হাতে মাখালো তারপর করমর্দন না করেই বললো−
“চলো, নামাজের পর করোনার জন্য আজ তোমাকে
কয়েকটি বিশেষ দো’য়া শিখিয়ে দেবো।”
আমি ইতস্তত! বললাম−
“একটা অফিসে গিয়েছিলাম, এমনভাবে স্যানিটাইজ করালো
যেনো স্যানিটাইজার দিয়ে গোসল করেছি।
ভালো লাগছে না। বাসায় গিয়ে গোসল করবো।”
ও যেনো স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো, বললো−
“ভালো, ভালো তো, তা হলেতো তুমি পুরোটাই সুরক্ষিত।”
আমি সহাস্যে বললাম−
“জানো কি? পৃথিবীর তাবৎ সেনিটাইজার তৈরীতে অ্যালকোহল ব্যবহার হয়।”
কথাটি শুনতেই বন্ধুর মুখে যেন ঈশান কোণে কালো মেঘের বর্জপাত শুরু হলো;
কিছু না বলেই হন হন করে মসজিদে প্রবেশ করলো।
ঘটনাটি এতো তড়িৎ ঘটলো যে, আমি কিছুক্ষণ বিমূর্ত ছিলাম, মনে মনে ভাবলাম−


“আমি খারাপ কী বলেছি বুজতে পারলাম না! তবে এ্যালকোহলের ব্যবহারটা
ধর্মে অনুমোদন থাকলে আজ এমন ভাবনা মাথায় আসতো না!”


৬ জুলাই ২০২০, শঙ্কর, ঢাকা।