কাল সারা রাত আমি ঘুমোতে পারিনি-
দু'চোখের পাতায় পরেনি নিদ্রা দেবীর ছোঁয়া,
সারা রাত কাটিয়েছি এপাশ-ওপাশ করে।
কখনো দাঁড়িয়েছি খোলা জানালার গ্রিল্টাতে মাথা রেখে-
দেখেছি দু'চোখ ভরে, রাতের আকাশে ভেসে থাকা সাদা মেঘ
আর মেঘের দেয়াল ভেঙ্গে ভেসে উঠা আধা কাটা চাঁদ।
কখনো লুকোচুড়ি খেলেছিলো মেঘের সনে
কখনো ভেসেছে, কখনওবা হারিয়েছে মেঘের ছায়ার আড়ালে।
কাল সারা রাত বইছিলো ঝিরি- ঝিরি শীতল হাওয়া-
সাই সাই করে ঢুকেছে আমার জানালার ভেতর দিয়ে।
উড়িয়ে দিয়েছে লেখার টেবিলের এলোমেলো কিছু কাগজ-
শীতল করেছে মোর সারা দেহ।
তবুও আসেনি দু'চোখে ঘুম, আসেনি এতটুকু তন্দ্রা-
পালিয়েছিলো ফেরারী হয়ে
দু'চোখের পাতার আঙিনা থেকে দুর বহু দুরে,
যেন অভিমান করেছিলো আমার সাথে।
কাল সারা রাত আমার ঘরে খেলা করেছে জোৎস্নার আলো,
সাথে জ্বলেছে আর নিভেছে অসংখ্য জোনাকির দল।
মোর বাতায়ন পাশে কামিনী তলে-
আকাশের গায়ে জ্বলা নক্ষত্রের মতো।
শুনেছি কান পেতে পেছনের বাঁশ ঝাড়ে, ডেকেছে ক্ষনে ক্ষনে লক্ষীপেঁচা,
কখনওবা দুরে দুই একটা কুকুরের চিৎকার।
হয়তো দেখেছিলো রাত জাগা কোন চুর
কিংবা কোন ধূর্ত শেয়ালের বিচরণ।
কাল সারা রাত কাটিয়েছি খোলা জানালার পাশে বসে-
দেখেছি ঘুমিয়ে থাকা রাতের পৃথিবীটা ৷
দেখেছি গগনে মুক্তার দানার মতো অসংখ্য নক্ষত্র,
আর ঝিম মেরে বসে থাকা, আম-জাম- আর সেগুনের ছাউয়া বন ৷
কখনো নরম বিছানায় বিছিয়ে দিয়েছি ক্লান্ত শরীর,
দু'চোখ বুঝে করেছি ঘুমাবার ব্যার্থ চেষ্টা।  
কখনো বইয়ের সেল্ফ থেকে তুলে নিয়েছি জীবনানন্দের কবিতার বই
এমন রাতে ঘুমহারা চোখে কবিতা পড়ার এইতো সময় ৷
কাল সারা রাত জেগে থেকে লিখেছি প্রেমের কবিতা,
আর হৃদয়ের সাদা ক্যান্ভাসে একেঁছি তব মুখ্ছবি।
রঙধনুর সব রঙ তুলিতে ধরে
মোর মনের সবটুকু মাধুরী মিশিয়ে ৷
দেখেছি পুর্ব গগনের সূর্যদ্বয়ের মতো লাল দুটি ঠোঁট,
আর পান্ডুলিপির প্রতি পাতার জলছাপে তব ঐ হাসি ৷
যে হাসির ছটায় শাঁখে শাঁখে ফুটে ধরনীর সব ফুল
আর পৌষের বুকে আনে ফাল্গুনী ভালোবাসার গান ৷
কাল সারা রাত আমি ঘুমোতে পারিনি
কাল সারা রাত।