বড় কঠিন মর্মঘাতী সমাজ বেদনার ধূল আপাদ মস্তক না মাখলে, এমন ধ্রব বাস্তব ব্যঙ্গত্মক কাব্যের পথে চলা যায় না। কবি মার্শাল ইফতেখার আহমেদ এর এই কাব্য যেন চেতনার আকাশে একটি উজ্জল নক্ষত্র চিত্র "দরিদ্র তুই কবিতা খা"।


অনন্য শব্দ সম্ভারে প্রথম স্তবকেই প্রবুদ্ধ কবি খাড়া ভাবে আঙুল তুলেছেন ইহলোকে (বাস্তব জীবনে) গরীবের সামাজিক অবস্থান নির্যাসে, যেখানে দরিদ্র মানুষ বৈষম্যের সমুদ্রের তলানিতে পড়ে থাকতে বাধ্য হয় বৈষম্যের উপরের প্রান্তের মানুষগুলির গেঁথে দেওয়া বাঁশে। কবির ভাষায় - "এখন বৈষম্যের বাঁশ খা"।
কবি আগেই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন "গরীব" তোরা হাসতে থাক, ফারাক আর বুঝতে হবে না কারণ খুব সহজেই পাবি স্বর্গ বাস। অর্থাৎ গরীবের দ্রুত মৃত্যু হোক এমন নির্মম অবতারণায় বোঝা যায় কবি গরীবের এমন দুর্দশাগ্রস্থ জীবনের জন্য আঘাতে ক্ষতবিক্ষত যা কাব্যের দ্বারা নিরাময় সম্ভব নয়, আবার প্রবুদ্ধ কবি এই দুর্দশা আর সইতেও পারছেন না, তা আরো পরিস্কার করে বোঝা যায় যখন হৃদয় বিদীর্ণ করা দ্বিতীয় স্তবকে চোখ রাখি।


এ যেন মহা বিস্ফোরণ ঘটালেন চিরায়ত সত্যে যা অন্তত লজ্জায় অনেক কবিই মুখ আড়াল করতে চাইবেন। ছুঁড়ে দিয়েছেন আষ্টেপিষ্টে অন্তর জ্বালায় জর্জরিত কবি দরিদ্রের আত্ম সন্ধানে ~
"দরিদ্র তুই কবিতা খা
কবিদের টেনে সাথে নামা"
অর্থাৎ
দরিদ্রকে বলেছেন কবিদের সঙ্গে নিয়ে মনের খোরাকে (কবিতায়) শরীর জুড়িয়ে নিয়ে কবিতার "ভাব" দীপ্তিশীলতায় গভীর ভাবে অনুধাবন করে যেন দেখে নেন তারপরও ভাত-ডাল পেটের জন্য লাগে কি না! তখন দরিদ্র এবং কবি তারা নির্ঘাত বুঝবে কবিতা নেহাৎ মনের খোরাক, অথবা পঞ্চপদী আহারীদের ঢেকুর তোলা আত্মখাদ্য। যা ভরা পেটে সৃষ্টি করতেই ভালো লাগে। এতে পেটের খিদে যায় না! দূর হয় না সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য! আসে না তৎক্ষণাৎ প্রত্যক্ষ পরিবর্তন! তাই কবিতার মূল্য দরিদ্রের কাছে শূন্য আর কবি সহ পঞ্চপদীদের বিলাসিতার খোরাক মাত্র।
এমন দীপ্যমান অনুভব প্রবুদ্ধ কবির  "কবিতা জীবনের খাদ্য দেয় না" কবিতা পাঠে চরম বোধ জন্মে।


এরপরই ফিরে গেছেন প্রবুদ্ধ কবি সেই পরম অভিঘাতে একদিকে "কবিতা পৃথিবী" অর্থাৎ কবি, প্রকাশক থেকে ক্রেতা যাদের কেউ নিরন্ন নয়, কেউ দীন দরিদ্র অভুক্ত নয়।
অপরদিকে পরের পংক্তিতেই কবি বুঝিয়ে দিয়েছেন দরিদ্র ক্ষুধার জ্বালায় কবিতা ছিঁড়ে যদি খাদ্য চায় তবে দরিদ্রকে পেতে হয় "নির্বোধ" তকমা যেখানে কবিরা কখনই "নির্বোধ" হতে পারে না তারা ভরা পেটে যতই লিখতে থাকুন নিরন্ন দরিদ্রের বৈষম্যে স্বর্গ বাসের কাব্য উপাখ্যান। পকৃতপক্ষে এখানেই ব্যঙ্গত্মক ভঙ্গিমায় পরক্ষে কবিদের নির্বোধ হিসেবে তুলে ধরেছেন। তাইতো কবি ব্যঙ্গের ঝংকারে বলেছেন ~
কবিতা ছিঁড়ে খাদ্য চাইলে
তুই নির্বোধ!
.                     কবিরা না।


এমন অনন্য আলোকজ্জল কাব্যে কবি মার্শাল ইফতেখার আহমেদ যে ভাবে বাস্তব বোধ জাগ্রত করেছেন তা স্মরণীয় হয়ে রইল পৃথিবীর বুকে। যা কবিদের সহ পাঠকের বাস্তব চেতনায় উদ্বুদ্ধ করবে।


শ্রদ্ধেয় প্রবুদ্ধ কবিকে জানাই উষ্ণ শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


ধৃতি রাজ