সুপ্ত বীজটি ভাবছে -
নিশ্চয়ই উৎকৃষ্টরূপে কর্ষিত জমিতেই বপিত হয়েছে।
স্বপ্ন দ্যাখে-
মাটিতে মিশে থাকা খাদ্যরসের সাহায্যে নির্দিষ্ট সময়ে অঙ্কুরিত হবে।
অথচ, জানে না এখানেও আছে অনিশ্চয়তার গল্প!
অনাবৃষ্টিতে যেমন বেড়ে উঠা ব্যহত হতে পারে,  তেমনি অতিবৃষ্টিতে পঁচনও হতে পারে।
কঠিন সংগ্রামের মাধ্যমে মাটি ফুঁড়ে যেই না অঙ্কুরিত হয়, তখন আবার ভাবে -
মাটির নিচের অন্ধকার জগৎ হতে এ পৃথিবী তো অনেক ভালো, আলোকিত, বিস্তৃত, বৈচিত্র্যময়।
অথচ, জানে না এখানেও আছে  অনিশ্চয়তা।
যেকোনো সময় পায়ের তলায় যেমন পৃষ্ট হতে পারে, তেমনই অপুষ্টিতে থেমে যেতে পারে জীবন প্রদীপ।


তবুও কোনোমতে, 
মাটি-পান-বায়ুর সংস্পর্শে থেকে কুঁড়ি মেলে -
অতঃপর একটুখানি আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলে -
শৈশব, কৈশোর আর যৌবন নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেয়ার স্বপ্ন দ্যাখে-
অথচ,  বুঝে না এখনো তার বোকার স্বর্গে বসবাস!
কত ঝড়-ঝঞ্ঝা, চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে জীবনকে সম্মুখপানে এগিয়ে নিতে হয় তার কোনো ইয়ত্তা নেই।


হোক না কোমলপ্রাণ,  মসৃণতায় পরিপূর্ণ,  নিষ্কলুষ পথটা ; তবু্ও পরিবেশ প্রতিকূলতায় মুহূর্তে হয়ে যেতে পারে কক্ষচ্যুত, যেকোনো সময় হারাতে পারে প্রাণ।
তবুও বীজটি স্বপ্ন দ্যাখে-
একদিন বটবৃক্ষ হবে,  ছায়া দিবে, ফুলে ফলে ভরে উঠবে -
হাজারো পাখির কলতানে মুখরিত হবে ঢাল পালা,
বিশুদ্ধ অক্সিজেন ছেড়ে,  দূষিত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করবে -
আবার জ্বালানি যোগান দিবে-
ছড়াবে শান্তির সুবাতাস, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় নিঃস্বার্থে বিলিয়ে যাবে আজীবন।
অথচ ভাবে না এতো সব ত্যাগের পরও নিষ্ঠুর কাঠুরিয়ার কুঠার একদিন আঘাত হানবে তার মূলে!
জানে না তার মূলোৎপাটন করে বিলীন করে দেয়া হবে অস্তিত্ব।
নশ্বর পৃথিবী থেকে মুছে দেয়া হবে একটি বীজের বৃক্ষ হয়ে উঠার সংগ্রামী ইতিহাস!!
জানে না, সেও হতে পারে কোনো জলন্ত চুল্লির রসদ!


যেমন করে সৃষ্টির সেরা জীবও হয়ে যায় মুহূর্তের হিংস্রতায় অঙ্গার!


আহা রে!  বোকা বীজ!!  সরল আস্ফালন!!!
___________
০৩ নভেম্বর ২০২০