'         শরতের ঝাঁঝালো রৌদ্রতাপ, তটিনীর তীরে
          শুভ্র কাশফুল হাসে; মৃদু-মন্দ বাতাস লাগে
          দুরন্ত রাখালের গায়।মেঘপুঞ্জ উড়ে উড়ে  
          আকাশ-মাটির দিগন্তে মেশে নিতান্ত উল্লাসে;

          ষড়ঋতুর ধারা মোতাবেক শরৎ আসে ফিরে ফিরে,    
          বঙ্গবাসীর ঘরোয়া উৎসব সাড়ম্বরে হয় শুরু;
          পাঁচপিঠা নৌকা বাইচ উপভোগ,ঝিয়ারি-বহুড়ির সমাগম,    
          এক্ষণে দাঁতে চিবিয়ে ইক্ষুরস আস্বাদনের মজা-ই আলাদা!      

          গানে শুনেছি ভাদ্র মাসেতে পানি সাগরপানে ধায়
          খাল-বিল নদী-নালা রোদ্রে শুকায়, এসব কি সত্যি
          কথা?কিন্তু ঝমঝম ছমছম বারি ঝরেতো অবিরাম ধারায়  
          আষাঢ়-শ্রাবণে বর্ষাগমে; নদী খাল ডোবা পুকুর টইটুম্বুর।    
  
          সন্ধ্যেবেলায় কর্মক্লান্ত কলেবর এলিয়ে দিয়ে
          ঘরের দাওয়ায় দোতারার গুলুগুলু পুলুপুলু
          টুংটাং টুংটাং নিঃসীম তান তোলে যেজন
          নাম তার ‘সুবল’।সে স্বাস্থগতভাবে ‘দুর্বল’।
  
          তদ্রুপ সারা দিনমান সংসারের কর্মযজ্ঞে
          নিয়োজিতা এক অঙ্গনা নাম তার ‘সুমিত্রা’;
          সুমিত্রা সুবলেরই ধর্মপত্নী বড়ই অভাগিনী,  
          সুবল তারই হতভাগ্য বর, সদ্য পক্ষাঘাতে আক্রান্ত।  

          নিরন্ন মানুষের ভাদ্র-আশ্বিনের বা শরতের
          কাশফুলের শোভা কি বা কাজে আসে বলো?
          সুমিত্রা এ বাড়ি সে বাড়ি কাজ করে যা পায়
          তা দিয়ে এই দুটি পেটের ক্ষুধার আগুন নিভায়।

          অবশাঙ্গ সুবলের ওষুধবিসুধ অনুফান, ভিন্ন    
          স্বাদের পুষ্টিকর পথ্য সামগ্রী সুমিত্রা কি
          উপায়ে যোগাড় করবে সে বিষয়টি নিয়ে
          সুমিত্রা তার চোখে সর্ষেফুল দেখছে নিরন্তর।

          শরৎ হয় কবির কবিতা রচনার উপজীব্য;
          এপার বাংলা-ওপার বাংলার কবি-সাহিত্যিক
          তারা তাদের কলম ঝেড়ে কতনা লেখা লিখে।  
          শরতে আসে শারদীয় দুর্গোৎসব দুই বাংলাতে।

          এত উৎসবের সমারোহ সুবল-সুমিত্রাকে এতটুকু                        
          স্পর্শ করে না,ষড়ঋতুর কোনো রং ওদের তনুমনে
          দোলা দেয় না।হঠাৎ দুসংবাদঃ এই শরতের এক রাতে  
          অচল, বিকলাঙ্গ পক্ষাঘাতগ্রস্ত সুবল দেহত্যাগ করলো;

          না ফেরার দেশে পাড়ি জমালো।তার জীবনে শরৎ  
          এসে তাকে ভালোবাসলো না; স্বাদ আস্বাদন করতে
          দিলো না।সুমিত্রা অপার হয়ে শোকাশ্রুধারায় ভাদরের
          সাগর-নদী ভরিয়ে চললো অবিশ্রান্তভাবে।সাথী হারালো সুমিত্রা।
          শরৎ এই দম্পতিকে অবজ্ঞা করলো,শরৎ ওদের বন্ধু হল না।