কবিতাঃ সমতার ঈদ মমতার ঈদ।
(বাংলা কবিতা,কবি ও কবিতার আসরে প্রকাশিত)
        কবিঃ মোঃ সাদিকুর রহমান রুমেন।


যাদের অভাব নেই আর যাদের অভাব আছে,
ঈদের আনন্দ সমান নয় তাঁদের কাছে,
আনন্দটা সমান করে নিতে হবে,
গরীবকে তাঁর প্রাপ্যটুকু দিতে হবে।


ঈদ তাহলে হবে সমতার
ঈদ তাহলে হবে মমতার।


মানুষের দ্বারাই হয় মানব কল্যাণ
মানুষের থাকা চাই এই কাণ্ডজ্ঞান।
মানুষ যদি মানবতা বুঝে,
আসল আনন্দ যেনো সেখানেই খুঁজে।


ঈদ তাহলে হবে আলো আশার
ঈদ তাহলে হবে ভালোবাসার,
ঈদ তাহলে হবে মানবতার।


আলোচনাঃ
কবিতার শিরোনামঃ সমতার ঈদ মমতার ঈদ।
বলা হচ্ছেঃ যাদের অভাব নেই আর যাদের অভাব আছে/ঈদের আনন্দ সমান নয় তাঁদের কাছে/
কথা পরিস্কার,ধনী আর নির্ধনের ব্যবধান বিস্তর,মাঝখানে আসমান আর জমিনের ফারাক,এই ব্যবধানের যিনি বিধাতা তিনি  এটি ভাঙতে যাকাত ফিতরা,দয়া দাক্ষিণ্য,দান অনুদান,এর বিধান রচনা করে মানুষকে চরম হুসিয়ারি ও কড়া নির্দেশ দিয়েছেন তা প্রতিপালনের, কিন্তু মানুষ বিধিই মানে না বিধান তো দুরে,তাই  ব্যবধান ও কমেনা।
কবির কথা বিধির বিধান মানতে হবে,তবেই ঈদ হবে সমতা আর মমতার,ঈদের তাৎপর্য কি শুধু এক বার্ষিক আনন্দানুষ্টান? না মোটেই তা নয়,ঈদ হলো সমতা আর মমতা ভাগাভাগির এক বিধিদত্ত ইবাদত।
এবার কবি বলছেনঃ মানুষের দ্বারাই হয় মানব কল্যান/মানুষের থাকা চাই এই কাণ্ডজ্ঞান/
আল্লাহপাক কাউকে ধনী কাউকে নির্ধন, কাউকে নিরাপদ কাউকে বিপদ আপদে,কাউকে সুখে কাউকে অসুখ বিসুখে রেখেছেন। সুখদুঃখ আপদ বিপদ আয় অর্জন বর্জন, সবকিছু মিলিয়ে মানবজীবন,এই সমস্ত আয়োজন বিয়োজনের মধ্যদিয়ে মানুষের জীবন ও জগতের পারাপার। এবং এর মধ্যে বিধাতার ইচ্ছা,যে সুখী সে যেন দুখীর সেবায় লাগে এটাই বিধাতার সবচে বড়ো পরীক্ষা এই পরীক্ষায় পাশ করতে পারলেই মানুষ মানবতায় উত্তীর্ণ ও বিধাতার সন্তূষ্টিভাজন হয়।
এজন্য কবি বলছেন, কাণ্ডজ্ঞান থাকাটা জরুরি।
মানুষ মানবতা বুঝলেই জীবন আনন্দময় হয় সকলে সুখী স্বার্থক হয়, মানুষ যেন আসল আনন্দ খুঁজে মানব সেবায়, এটাই আল্লাহর কাছে বড়ো ইবাদত বলে গন্য হবে,ঈদকে আল্লাহপাক নিছক এক মামুলী ফুর্তি বিনোদনের উপলক্ষ্য করেননি বরং তিনি একে মানুষের জন্য আলো আশার ভালোবাসার,সমতা মমতা ভাগাভাগি আর মানবতার সার্বজনীন উৎসব বানিয়েছেন, মানুষ যেন কোনক্রমেই এই মর্মকথা ভুলে না যায়।
আলোচ্য কবিতায় এই সত্যই চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হয়েছে, সুতরাং কবিতাটি স্বার্থক এক মানবিক মূল্যবোধের কবিতা। কবি সাদিকুর রহমান রুমেন,স্বার্থক এক মানবতাবাদী সমতা আর মমতার কবি।
আমরা কবির সুস্বাস্থ্য সুদীর্ঘায়ূ ও সার্বিক সাফল্য কামনা করি।


কবি পরিচিতিঃ
মোঃ সাদিকুর রহমান রুমেন।
আমার পুত্রতুল্য অত্যন্ত স্নেহাশিস ও প্রিয়ভাজন একজন।
তাঁর লেখালেখি ও কবিতার আমি এক মুগ্ধ পাঠক,বিভিন্ন সময় তাঁর প্রকাশিত ও  অপ্রকাশিত কবিতা প্রবন্ধ নিবন্ধ পড়বার আমার সুযোগ হয়েছে,সেই সুবাদে আমি তাঁকে নিমগ্ন ও মননশীল এক সাহিত্যনূরাগী হিসেবে সনাক্ত করেছি,ব্যক্তিমানুষ হিসেবেও সে অত্যন্ত অমায়িক সজ্জন ও সদাচারী,সে আমার এক, আত্মার পরমাত্মীয়।
তাঁর জন্মঃ২২শে জুন ১৯৭৭ খ্রীষ্টাব্দ, সুনামগঞ্জ জেলাধীন জগন্নাথপুর উপজেলার জামালপুর গ্রামে। পিতাঃ মরহুম-মোঃরাশিদ আলী দোকানদার।মাতাঃমরহুমা-মোছাঃমরিয়ম বেগম।
তাঁরা ভাইবোনের মধ্যেঃ
১। মোঃ আরজু মিয়া(শৈশবে মৃত):২। মোঃ রনজু মিয়া(শৈশবে মৃত) ৩। মোঃ হাওয়ারুন বেগম(পরিণত বয়সে মৃত, বিবাহিত ছিলেন। সন্তানাদি নেই) ৪। মোছাঃ রেনু বেগম ৫। মোছাঃ রোকসানা বেগম ৬। মোঃ মনজু মিয়া(শৈশবে মৃত) ৭। মোছাঃ ফুলশানাহ বেগম (শৈশবে মৃত) ৮। মোছাঃ শাহানা বেগম ৯। মোছাঃ সাহেরা বেগম ১০। মোঃ সাদিকুর রহমান রুমেন ১১। মোঃ রুহুল আমিন মোমিন ১২।মোছাঃ সাজেদা বেগম (শৈশবে মৃত)


বিবাহঃ
২৭ মার্চ ২০০৭ খ্রীষ্টাব্দে তিনি বিবাহ সুত্রে আবদ্ধ হন,সহধর্মিণী মোছাঃ রাহেলা বেগম। ২৬ জানুয়ারি ২০০৮ খ্রীঃ তাঁর বড় পুত্র মোঃমোত্ত্বাকিন আহমদ এর জন্মের ১৫ দিন পর প্রসবোত্তর জটিলতায় সহধর্মিণী রাহেলা বেগম মৃত্যু বরণ করেন ১০ই ফেব্রুয়ারি ২০০৮ খ্রীষ্টাব্দে।
অতঃপর তিনি আবার বিবাহ সুত্রে আবদ্ধ হন ১৫ মে ২০০৮ খ্রীঃ দ্বিতীয় সহধর্মিণী মোছা রেজনা বেগম, এ পক্ষে তাঁদের
৩ পুত্র ১ কন্যা।
১। মোছাঃ তানজিদা আক্তার তাওহিদা ২। মোঃ মোনাইম আহমদ ৩। মোঃ ইয়াসিন আহমদ ৪। মোঃ ইয়ামিন আহমদ।


লেখালেখি'র সুচনাঃ
স্থানীয় ষড়পল্লী উচ্চ বিদ্যালয় এণ্ড কলেজে ছাত্রাবস্থায়'ই লেখালেখি ও কবিতা চর্চার শুরু, প্রথম প্রকাশিত কবিতা"আমার আছে জল"দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার স্বজন সমাবেশ ২০০০ইং। স্বসম্পাদিত ষান্মাসিক সৃজনশীল সাহিত্য সাময়িকী দৃষ্টি ২০০০ইং প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত কবিতা "হাসনাহেনা"অতঃপর বহুসংখ্যক লিটলম্যাগ ও পত্রপত্রিকায় বহু কবিতা প্রকাশিত। সহ-সম্পাদক ছিলেন মাসিক মুক্তধারা (অধুনালুপ্ত) পত্রিকার। বক্ষমান আলোচকের"এইতো স্বদেশ"কাব্যগ্রন্থের দীর্ঘ আলোচনা লিখে প্রকাশ করেন মাসিক মুক্তধারায়। এছাড়া এই আলোচকের আরো বহু লেখালেখির তিনি এক যত্নবান আলোচক বিশ্লেষক।
স্থানীয় নয়াবন্দর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও কবি দিলওয়ার স্মৃতি পরিষদ নয়াবন্দর শাখার, প্রতিষ্টাকালীন প্রচার সম্পাদক ছিলেন তিনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি:মোঃ সঞ্জব আলীর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ কবিতার "ব্রাশফায়ার" ২০১৪ এর ভুমিকা লিখে দিয়েছেন তিনি, এছাড়া কবি সমালোচক ও প্রাবন্ধিক হিসেবে স্থানীয়ভাবে তিনি বেশ পরিচিত। তাঁর কবিতায় দেশাত্মবোধ, প্রেম বিরহ, রোমান্টিকতা, মানবিকতা, নিসর্গ ও প্রকৃতির উপস্থিতি বেশ লক্ষনীয়। বইপড়া  তাঁর আবাল্যের নেশা, আপাদমস্তক রবীন্দ্র ও নজরুল সাহিত্যের ভক্ত এই কবির মন ও মগজের ভেতর কবিতার রঙিন ঘুড্ডি সর্বদা উড়াউড়ি করলেও জীবন ও জীবিকার নানামুখী ব্যস্ততায় বেশীরভাগ সময় তার সুতো ছিঁড়ে যায় এজন্য কবি মন বড়ো ব্যথাহত মর্মাহত।


তথাপি তাঁর নির্ঘুম রাতের একান্ত আশ্রয় ও সঙ্গী কবিতা, শেষ পর্যন্ত এই কবিতা'ই। সুচনা সুত্রের বহু কবিতাই দুর্ভাগ্যবশত সংরক্ষিত হয়নি, হারিয়ে গেছে অযত্নে অরক্ষনে, আপাতত চেতন কবির, অসংখ্য কবিতা পাণ্ডুলিপির মলাট চাপা থেকে প্রকাশের প্রহর গুনছে।
সবশেষে কবির সরল স্বীকারোক্তি:
*ক্ষমা করো আমাকে হে বিশ্ব
বিশ্বাস করো কবিরা বড়ো নিঃস্ব,
শরীরে তেমন নেই শক্তি বল
হাতে একটি কলম'ই সম্বল,
আরো আছে জীর্ণ একটি খাতা
কবিতা লিখে ভরেছি তার পাতা।


প্রশংসা কোন মিলেনি এজন্য
জোটেনি এতে দানা পানি অন্ন,
কবিতা লিখে জেগেছি শুধু রাত,
ভুখির মুখে পারিনি দিতে ভাত।


দুঃখ দেখে নীরবে শুধু করেছি অশ্রুপাত
দুখির সেবায় লাগাতে পারিনি হাত।


সৃজন বেঁদনায় আমি থাকি অস্তির।
আমি এক ব্যথিত কবি এই পৃথিবীর।


আলোচকঃ
কবি গবেষকঃ
দীনুল ইসলাম বাবুল।
গ্রামঃ জহিরপুর,ডাকঃ জহিরপুর।
থানাঃ জগন্নাথপুর, জেলাঃ সুনামগঞ্জ।
বাংলাদেশ।
তারিখঃ ৪ঠা জুলাই ২০২০ ইং।