লাশ কাটা ঘরে শুয়ে আছি
------------------------------------


লাশকাটা ঘরে শুয়ে আছি তবুও দুচোখ বন্ধ নাই।
ক্লান্ত মন শীতল শরীর নগ্ন কলেবরে তবু কোনো অস্ত্র নাই।
স্বপ্ন দেখার শক্তি আছে আর আছে শুধু কিছু স্মৃতি
নগ্নদেহে পড়ে আছি মধ্যরাত্রে লাশকাটা ঘরে আমি যে রুপশ্রী।


মনে আজ ভয় নাই
নাই কোনো যন্ত্রনা।
শুধু আছে শরীরের আমার ক্লান্ত সুপ্ত বেদনা।
"হে ভগবান তুমি যে মহান"তাই রাখি দিলে কিছু স্মৃতি
স্মৃতির তলে অতীতের কোলে আমি যে ভাসাই তরী।
ছোট্ট আমি তখন বাপের কন্যা
একই যে সন্তান আমি  যে অর্ণা।
গ্রামের নাম মধুপুর তাই জানি মধু যে কত দামী।
বিলাসিতার বইছে বাতাস কেই বা জানে "লু" এর ভয় খানি।


বাউন পাড়ায় জন্ম আমার ডম যে আমার মা
প্রসবের যন্ত্রণায় সে এখন দূরের কারো ছোঁয়া পা।
বাপ যে আমার বড়ই গরিব তাও যে আমি তার রাজকন্যা
সবার কাছে না হলেও বাপের কাছে আমি এই অর্ণা।
বয়স আমার যখন দশ বাপ যে আমার তিন দশ।
চুল পেকেছে দাড়ি পেকেছে দেখায় যেন কত বয়স।
বয়স যখন আমার 12 ওই তৃষ্ণার্থ তিস্তা নদীর আমি আজ তার প্রধান প্রিয়।
তাই বসে থাকি তারই ধারে সন্ধ্যার পরও রাত্রি আঁধারে।
চোখের জলে কাকে খুঁজি
মনের ডাকে আমায় নেইকো রুচি।
পরাধীনের ফ্রক পরে মাসির কোলে মুখটি জুড়ে বসে থাকি তারি ঘরে।
বাপটি আমার বড়ই শিশু
দেনার দায়ে তার পিঠটি নিচু
চরিত্রে তার দাগটি নেই
তাই তার কপালে এক মুঠো ভাত টি নেই।
রেগেই বলি বাপটি আমার কোথায় গেল?
লোকে বলে এই মেয়ে ভাগ
বাপ যে তুর দেনায় ধুলো।


যেদিন চায় সেদিন যায় ওই বালুচরের নদীর ধারে
সত্যি বাপ যে আমার বড়ই শিশু একদম খোঁজ করে না আমারে।
তোমরা জানো?
আমরা দুজন গল্প করি।
তিস্তার বালু চড়ে দু জন মিলে জ্যোৎস্নার আলো ধরি।
কত কত হাসি কত বলি কত যে আমি কথা বলি।
সে শুধু চেয়ে থাকে অপলক দৃষ্টির চাঁদের ফাঁকে।
বলে না কিছু আমায় শুধু গালে সোহাগ জাগায় বার কয়েকবার।


বয়স যখন আমার 16 মাসির কড়া আদেশে সেদিন রাতে  তীব্র যন্ত্রণায় আমার বিছানা লাল হলো।
কি হিংস্র ছিল তার মুখ যেনো কিসের প্রাপ্তির চরম সুখে সাদা থেকে লাল করেছিল আমার বুক।
পরদিন সন্ধ্যায় আবারও যায়
সেই তিস্তার কাছে।
জোনাকি ভরা কালো রাতে
যে বসে আমারি পাশে।
জড়িয়ে ধরে আমায় আমারি বক্ষে তার যে মুখের স্থায়।
সে মুহূর্তে আমি বুঝে ছিলাম যৌবনের আসল রূপের সহায়।
মাথা রেখে তারি কোলে দেখছিলাম তারে দুই নয়ন ভরে।
স্নিগ্ধ হাওয়ায় জোনাকির দাওয়াই চোখের নিচে ঠোটের পরে তারি চুম্বন ঝড়ে পরে।
মন যে আমার আজ বড়ই খুশি!
সেই দূরের তারার কাছে বাপের হাসি, সঙ্গে ছিল মা।
দেখে তাকে মা চোখের জ্বলে আঁচল ঢেকে হয়তো বলেছিল এই অভাগিনী কে সঙ্গে নিয়ে যা।


মাসির কাছে নতুন নতুন শব্দ শিখি।
আজ যে শিখি বেশ্যা
মাসি আমাকে বুঝিয়ে বলে তুই যে আমার সর্বোপরি, তুই যে আমার আশার তরী, তুই যে আমার সোনার বাড়া।
তোকে নিয়েছি যে আমি কিনে
তোকে নিয়ে রাত কাটাবে আর আমায় দিবে সিকি গুনে।
বসে থাকি পর দুয়ারে দৃষ্টি আমার ঐ সর্গের দারে
মুচকি হেসে আমি বলি।
হাজারো সপ্ন আছে মনের তরে
তাই ললাটে চুম্বন করেছিলে আমারি ধরে
বলেছিলে ভোগের পাত্র নই যে আমি।
তোকে দেখে যে আমার সোহাগ ঝরে।


"রূপের দায়ে বন্দি আমি
তোর চোখে মায়া জলে
সেই মায়া লয়ব তুলে
তোকে আমার জমাট করে।


হে অভাগী তোকে আমি নিজের করে।
তুলবো তোকে ওই কালো জলের অন্তিম বিন্দুর ফোঁটা ঝেড়ে।


শুধু অপেক্ষায় থাকিস আমার তরে
ঘুমিয়ে যেনো না পড়িস
সুগন্ধের আতরের তারি কোলে।
আমি আসবো ঠিক স্বাধীনের সেই হাতটি ধরে
তোকে লয়বো আমি আমারি সপ্নের কোলে..."


তাই যে মন আজও থাকে সেই সপ্নের আশায়
কখন এসে তুমি দাঁড়াবে আমারি বাসায়।
দুহাত বাড়িয়ে বলবে আমায়
হে অর্ণা আমি এসেছি তুমি চলো আমারি সঙ্গে।
চোখের প্রতিটি জল আজও তোমাকেই খোঁজে।
আমি জানি তুমি আসবে
নিয়ে আমায় স্বপ্নে তুমি ভাসবে.....


বয়স যখন আমার 20
হে প্রিয় তোমার আসায় আজ
দিয়েছি আমি গলায় দড়ি।
উপায় যে কোনো ছিল নাই
তোমারি অপেক্ষায় এই খুদার্থ
নেকড়েদের চোখ আমি আর ঠেকাতে পারি নাই।
তাই বেছেছি অন্তিম পথ ।
লাশ কাটা ঘরে শুয়ে আছি আমি অপেক্ষায় তোমারি রথের অন্তিম পথ..
তোমারি রথের অন্তিম পথ....


   ------- দীপক -------