সকালের প্রথম কুয়াশায় ঢেকে আছে বনানী,
প্রান্তরের আঁধারের ঘাসে মাথায় উবু হয়ে বসে আছে যেন ধূসর কাশবন;
অঘ্রাহনের আকাশে দিনান্তে তারারা ছিল বিব্রত।
নীল সমুদ্রের জলের উপর পোর্ট ব্লেয়ারে আস্তানা গড়েছিল,
এই সকালের শিউলি ফুল তাঁদের রস আস্বাদন করে
ভারে মাথা নুইয়ে নেমে এসেছে পৃথিবীর দিকে অন্য এক জীবনের খোঁজে;
আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার মৃত্যু ঘটে বয়সের ভারে যখন ঝরে পড়ে আমাদের শরীর,
ভালো-মন্দ আহ্লাদের সব স্মৃতিরা জীবনবৃত্তান্ত খুলে বসে;
সমুদ্রের সেইসব তরঙ্গের নিত্য আসা যাওয়া ছন্দের মত,
যেখানে অনেক কাকড়ারা গর্তে ঢুকে যায়,
কোন এক জীবনের স্বাধীন ইচ্ছায়;
চড়ুই পাখির উষ্ণতা ছিল জীবনের স্পন্দনে,
বেতের শীতল বিছানায় লেগেছিল নরমের নীল ভবিষ্যৎ,
আগাম জীবনের বার্তাবহ সব,
খসে পড়া বেলের সুপক্ক ঘ্রাণ,
তারপর বেলের শুষ্ক খোসার মতো পড়ে থাকা অবান্তর,
আজকের জীবনের সব চেতনার সমাবেশ;
ঠিক যেন শীতের সন্ধ্যায় হিমেল বাতাসের উপদ্রব থেকে
যেভাবে একদল বানর তাদের সকলের উষ্ণতা জিইয়ে রাখে
গোলাকার বেষ্টনী করে;
শীতার্ত সকালে উষ্ণ চায়ের কাপে দুই হাতে চেপে রাখা জীবনের মত,
তবুও জীবনের সব খ্যাতি, যশ, সব বীতশোক একদিকে,
এই প্রান্তরে সেই সব কুয়াশারা আর জীবিত নেই।
সকালের নরম আলোয় সমস্ত জেগেছিল অনন্ত ইচ্ছাদের সাথে,
এই সব কাঁচা কাঁচা রোদেরা মধ্যাহ্নের যৌবনের আঘাতে প্রাণ
কেড়ে নিল সেইসব কুয়াশার নিস্তব্ধভাবে।
কেউ কি দেখেছে সেই দৃশ্য?
শুধুমাত্র আঘাতপ্রাপ্ত কুয়াশারা জানে সে-কথা ।
রাতের গভীরে শহরের বুকে ফুটপাতে ঘুমিয়ে থাকা
মানুষের মৃত্যু ঘটে ঠিক এইভাবে;
তখন বারে, গণিকালয়ে জেগে থাকে কলকাতা শহর,
নতুন ভাষায় কথা বলে জাগ্রত শহর তখন,
এক ফালি ক্লান্ত চাঁদ মধ্য আকাশে জেগে আছে তখন দিগন্তকে পাবার নেশায়।
এই ভরা দুপুরে ধু ধু প্রান্তরে তীক্ষ্ণ রোদের ফলকের আঘাত থেকে
বাঁচার জন্য রাখাল বালক ছুটে যায় গাছের নিচে শান্তির খোঁজে;
শৈশবের মৃত্যুর রূপে কুয়াশারা চলে গেছে দেশান্তরে।