একবার জাতীয় সংগীতটা তুমি গেয়ে নাও,
একবার জাতীয় গানটা তুমি কন্ঠে ধরে নাও,
একবার বিদ্রোহী কবিতাটা তুমি পড়ে নাও,
দেশদ্রোহীর বিরুদ্ধে তোমার সংকল্পটা তুমি বুঝে নাও।


একবার তুমি নেতাজির ছবিটা বুকে জড়িয়ে ধরো,
একবার তুমি ক্ষুদিরামকে ফাঁসির মঞ্চ থেকে নামিয়ে নিয়ে আসো,
একবার তুমি সেই ফাঁস নিজের গলায় পড়েছো ভেবে দ্যাখো,
একবার তুমি জাতীয় পতাকাটা তোমার মস্তকে স্পর্শ করো,
একবার তোমার ঊর্ধ্বগামী শির তোমার পদতলের ভূমিতে ছোঁয়াও,
একবার এমন দীর্ঘশ্বাস নাও যেন সমস্ত শরীর জুড়ে মৃত্তিকার মোহ-গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে,
যেন তোমার শরীরের  বিষাক্ত রক্তেরা ধ্বংস হয়ে যায়।


তুমি তাকিয়ে দ্যাখো তোমার চরণ যুগল দু’খানি রাখার তোমার কোন স্থান নেই,
দ্যাখো তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছো সেটি তোমার মাতৃভূমিরই দান,
তুমি তাঁর কোলে দাঁড়িয়ে তোমার জন্মদাতা মাকে ‘মা' শব্দে ডাকো।
তুমি যখন পরিশ্রান্ত হয়ে ক্লান্ত শরীরে অবসন্ন হৃদয়ের সাথে শান্তির খোঁজে দিশাহীন,
এই মাতৃভূমি তাঁর কোমল স্পর্শ  আর শীতল হাওয়ায় তোমাকে শ্রান্ত করে;
তারপর তুমি তোমার সেই প্রশান্তচিত্ত নিয়ে ,
তোমার প্রিয় সন্তানদের এবং তোমার সহধর্মিনীকে আন্তরিক ভালোবাসা দাও;
পুনরায় তুমি পরবর্তী কাজের জন্য সহসা নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাও।
যখন তুমি পরাজয়ের সম্ভাবনায় দ্রুত গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে চল,
মাতৃভূমির বক্ষস্থল তোমার অসংখ্য পদাঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে,
সেই অসহ্য যন্ত্রণার পরিবর্তে তুমি অর্জন কর মাতৃ-শক্তি,
যার জন্য তুমি বিজয়ের আনন্দে অট্টহাসিতে ফেটে পড়,
তোমার আনন্দের অট্টহাসি দেখে মাতৃভূমি তখন গোপনে কাঁদে,
সে নিঃশব্দ কান্নার রূপ তুমি কখনো দ্যাখো নি,
আমি সেই রূপ অনুধাবন করেছি বহুবার কামারশালায় কামারের ভগ্ন হৃদয়ে,
যখন হাঁপরের উষ্ণ বাতাসে লাঙলের ফলা গলতে দেখেছি।
তুমি ভুলে যেও না সেই গোপন হৃদয়ের কথা।


তোমার জন্মদাতা মায়ের থেকে যে মাতৃদুগ্ধ সেবন করেছো,
তোমার শরীরের এবং রক্তের স্থূলকায় করেছ তা পেয়েছো তোমার জন্ম দায়িনী মা'র থেকে,
তোমার সেই মাকে শক্তি প্রদান করেছে এই মাতৃভূমি।
আজ তুমি প্রতিদিন শোবার আগে যে গোদুগ্ধ পান করছো তাও এই মাতৃভূমি থেকে প্রাপ্ত,
তুমি তোমার সন্তানদের মেধাবী বানানোর জন্য যে ঘি এবং দুগ্ধ সেবন করাচ্ছো,
তাঁদের মঙ্গলকামনায় যজ্ঞে যে ঘৃতাহুতি দাও,
যার জন্য তোমরা উভয়েই নিজেদেরকে গর্ববোধ করো তাও এই মাতৃভূমি থেকেই প্রাপ্ত।
তুমি কিভাবে ভুলে যেতে পারো তার এই নিঃস্বার্থ অবদানের কথা।


তুমি একবার তাকিয়ে দ্যাখো তোমার সেই মাতৃভূমি আজ কাঁদছে,
জরাগ্রস্ত, লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার শিকার;
তোমার দায়িত্ব থেকে তুমি কিছুতেই পালাতে পারো না,
তুমি একবার ভেবে দ্যাখো তোমার কী প্রতিদান দেওয়া উচিত,
আর যদি নাই পারো তাহলে পিতামাতাকে বৃদ্ধাশ্রমের পাঠিয়ে দেওয়া সন্তানদের মত তুমিও বিদেশ পাড়ি দিও।